আলোচ্য কবিতাঃ


তুমি
- অনির্বান শান্তারা


সূর্য তোমায় চেনে না প্রিয়া
চিনলে ডুবতো পূর্বেই !
চিনে চিরকাল চক্কর খাই
আমিত্ব ভুলেছি গর্বেই !


চাঁদ জানে না ভূমির চাঁদকে
জানলে জোছনা ভুলতো !
তোমার সঙ্গে সোহাগ করে
দুজনে সেলফি তুলতো !


বাতাস বেয়াড়া বড়ই মূর্খ
জানে না আদর করতে !
তুমি কি জিনিস জানত যদি
শিখতো হুকুমে চলতে l


আকাশ জানলে তোমার ইচ্ছা
কতো কেচ্ছাই হত !
হত কালবৈশাখী ভরা শরতে
শীতে গরমের ক্ষত !


তোমার হাসিতে ফুলেরা ফুটতো
ঝরতো তোমার রাগে !
রাতের স্বপ্ন কতো কি শোনাতো
তোমার ঘুমের আগে l


কি করে বোঝাই তুমি কি বোঝা
কখনো হালকা ভারী !
লড়াই ফেলেই লড়াইয়ে ফেরো
আমি যুদ্ধ জিতেও হারি !!


###


যথারীতি এটাও প্রেমের কবিতা! তবে এটাকে বলতে হবে "মিষ্টি প্রেমের কবিতা!" ইংরেজ হলে বলতাম "Flirty Poem" কেননা যে ধরনের কথা শুনলে প্রেমিকা খুশি ও লজ্জাতে লাল হয়ে যায়, মনের আকাশে রঙধনু ঝলমল করে, নিজেকে মনে হয় পাহাড়ের চুড়ায়! সে ধরনের কথার বিন্যাস এ কবিতার পরতে পরতে ...


এ কবিতায় মোট ৬ টি স্তবক।প্রায় প্রতিটি স্তবকের মূল বক্তব্য একই। মূল বক্তব্য হচ্ছেঃ  "প্রেমিকা-মাত্রই নিরুপমা!" তাই প্রতিটি স্তবকের বিশ্লেষণে যাবনা। তাতে একই কথা বারবার বলার সসম্ভাবনা আছে...


১ম স্তবকঃ প্রিয়তমা কথকের মনে কি দারুণ ঝড় তোলে, সূর্যের প্রসঙ্গ এনে তাই পাঠকদের  কথক বোঝালেন। প্রিয়তমা থাকলে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। কিছুরই ঠিক থাকেনা। সুর্য যদি "তাকে" চিনত তবে সেও নিয়েমের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে পূর্ব দিকে উঠত!


যা হোক এ স্তবকের শেষ পংক্তি আমার বেশ ভাল লেগেছে কারণ মানুষের "অহম-বোধ" অত্যন্ত শক্তিশালী আবেগ। চারিদিকে এতো ঝগড়া, যুদ্ধ, বিচ্ছেদ এর একটা বড় কারণই
হচ্ছে "আমিত্ব"। কথক সে আমিত্ব বিসর্জন দিয়েছন এবং তা গর্বের সাথেই ; আর এখানেই আমি দেখি একটা মঙ্গলবার্তাঃ


"ভালবাসা;
কেবল ভালবাসাই বিধ্বংসী অহমকে রুখে দিতে পারে!"


২য় স্তবকঃ "ভুমির চাঁদ!" ভাল লাগলো এ উপমা প্রয়োগ, যদিও তা বেশ পুরনো; কিন্তু  ভঙ্গিটা নতুন। বলতে পারেন "নতুন বোতলে পুরনো উপমা!"


যারা লেখা শিখতে চান, তারা এ ব্যাপারগুলো খেয়াল করবেন। কেননা মৌলিক বলে আসলেই কিছু নেই। "কি বলছেন" সেটার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ "কিভাবে বলছেন"।


একটু উপদেশ টাইপ হয়ে গেল। সরি!


৩য় স্তবকঃ "হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস!"


শেষ স্তবকঃ প্রিয়তমা ময়দানে না থেকেই লড়াই উপস্থিত থাকেন! বাহ; কঠিন কথা... প্রিয়তমার মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতা।


ভালবাসার মানুষের কাছে আমাদের অনেক সময়ই হেরে গিয়ে জিততে হয়। রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলেন,"শেষ জয়ে যেন হয় সে বিজয়ী তোমারি কাছেতে হারিয়া।"


এই স্তবকে মনে হচ্ছে কোথাও সুর কেটে গেছে। "আমি" বাদ দিলে কেমন হয়ঃ


"কি করে বোঝাই তুমি কি বোঝা
কখনো হালকা ভারী !
লড়াই ফেলেই লড়াইয়ে ফেরো
যুদ্ধ জিতেও হারি !!


★একটা মূল বক্তব্যকে বিভিন্ন রঙ ও সৌরভের ফুলে গেঁথে কবি  অনির্বান শান্তারা এই কবিতার মালা সাজিয়েছেন। তাঁর শব্দ প্রয়োগে চমক আছে, এবং বাক্য বিন্যাসে আছে নাটকীয়তা। ওনার লেখা পড়তে পড়তে মনে হয় "টেকনিক" অবলম্বনের একটা প্রবণতা ওনার মধ্যে আছে।


★"ছন্দ" নিয়ে আর একটু সচেতন হলে ভাল হয়।
শুভ কামনা কবির জন্য।
হ্যাপি রাইটিং :