খোলা তরবারি হাতে,
মাতাল ওমর চলেছে একাই বধিতে মুহম্মদে।
পথে দেখা এক খেলার বন্ধু জিজ্ঞেস করে তারে,
'কোথায় চলেছো তাড়াহুড়ো করে বন্ধু, বলো না  মোরে'?
ক্রোধোন্মত্ত ওমর কহিল, 'মুহাম্মদের বাড়ি,
হত্যা করবো মুহাম্মদকে দিয়ে এই তরাবারি।
আশকারা পেয়ে মুহম্মদ যে বড়োই বেড়েছে, ওরে!
পথ ছেড়ে দাও প্রাণের বন্ধু'। বলে সে রুষ্ট স্বরে।
জানালো পথিক-বন্ধু তাহারে, ' শোন হে, ওমর ভাই,
'নও-মুসলিম' তোমার ভগ্নি এবং বোন-জামাই'।
দেখতে দেখতে ওমরের চোখ মহাক্রোধে ফেটে যায়,
বোনের বাড়িতে ছুটিয়া চলিলো বদ্ধ পাগল প্রায়।


দূর হতে শোনে ভগ্নি পড়িছে কোরান কোমল স্বরে,
ক্রোধে চৌচির তখনি ওমর গৃহেতে প্রবেশ করে।
চিৎকার করে পাগলের মতো কিল-ঘুসি-লাথি ছুঁড়ে,
ভগ্নি এবং ভগ্নিপতিকে ভীষণ আহত করে।
ওমরকে দেখে ভগ্নি তাহার কোরান লুকিয়েছিল,
তখনি ওমর জানতে চাহিলো, কী কিতাব পড়ছিলো?
' দেখাও আমারে নইলে তোমারে হত্য করবো আমি।'
ভগ্নি তাহার বিনীত বচনে বলে, ধরে হাতখানি।
' নাপাক শরীরে ধরা যাবে না এ পবিত্র বাণী, তাই,
স্নান করে এসো, দেখাবো তোমারে কী পড়ছিলেম, ভাই। '


স্নান সমাপনে পাঠ করে কোরান ওমর বিন খাত্তাব,
'সুরাতুল ত্বোয়া' পড়ে ওমরের মনে বাড়ে অনুতাপ।
ঝরঝর ঝরে নয়নের জল, ধরে ভগ্নির হাত,
পবিত্রতার আলোক প্রভায় করিছে অশ্রুপাত।
সব ক্রোধ ভুলে পাগলের ন্যায় চলছে নবীর বাড়ি,
আশেকে রাসুল থর থর কাঁপে হাতে তাঁর তরবারি।
সেই তরবারী পদতলে রেখে বলেন, ' রাসুলুল্লাহ!
নাই কেহ আর অর্ঘ্য দানিতে, আছে শুধু এক আল্লাহ'।


দু'হাতে জড়ায়ে নবী বলিলেন, বুকেতে মিলায়ে বুক,
'সত্য-মিত্যার ফারাককারী! তুমি যে আল-ফারুক'।
সত্যাসত‌্যের বিভেদ বুঝেছে আরবের রূঢ় ওমর,
ইসলামের এক দাসানুদাস আজিকে হয়েছে অমর।
ঘুমায় এখন নবী-রওজায়, নবীতে হইয়া লীন,
এখনো ওমর মানুষের কাছে আমিরুল মোমেনীন।
আধা পৃথিবীর খলিফা হয়েও থাকতেন সাধারণ,
মানুষের তরে প্রতিটি মানুষ, এই ছিলো তাঁর পণ।
ধরাতে এখন রক্তের খেলা ধর্মের নামে চলে,
কোথায় ওমর! জেগে উঠো ফের মানুষের মঙ্গলে।


রাত নিঝঝুম, আঁধার রাত্রি ঘুমায় নগরবাসী,
পথে পথে ঘুরে খলিফা ওমর মুখে নেই কোন হাসি।
দায়িত্ব তার করছে পালন 'আমিরুল মোমেনিন'-
খুঁজিয়া বেড়ায় মদিনার ঘরে আছে কিনা কোন দীন।
ভুখা থেকে কেহ কষ্ট পাইলে, 'কী জবাব দেবো, তাঁরে,
যার করুণায় হয়েছি খলিফা মানুষের সংসারে'।


দূরে দেখা যায় একটি প্রদীপ জ্বলিতেছে মিটিমিটি,
খলিফা ওমর ধীর পদলয়ে ওইদিকে যায় হাঁটি।
গৃহের পাশেতে পৌঁছিয়া শোনে, কাঁদে শিশু তিনজন,
তাহাদের মাতা শান্তনা দিছে-  'সবুর করো বাছাধন'।
চুলার উপর একটি পাতিল অনল জ্বলিছে; তবে,
উৎসুক শিশু বলিতেছে, 'মাগো, কখন খাবার হবে'?
'এইতো বাছারা আর কিছুক্ষণ', অশ্রু বহিছে, হায়!
কাঁদিতে কাঁদিতে শিশুরা সবায় পাশেতে ঘুমিয়ে যায়।
দুঃখিনী মাতা অঝোর ধারায় কাঁদিয়া বলছে, 'প্রভু!
মিছে শান্তনা দিছি বাছাদের ক্ষমা হবে না কভু'?


এমন সময় করাঘাত হানে জীর্ণ ঘরের দ্বারে,
চোখ মুছে মাতা দরোজা খুলিল, নিতান্ত চুপিসারে।
পাছে আওয়াজে শিশু জেগে উঠে খাবার চাহিতে পারে,
কষ্ট বাড়িবে দ্বিগুণিত হয়ে রাতের অন্ধকারে।
দরোজা খুলিয়া দেখিলো, দাঁড়ায়ে একজন সাধারণ;
জিজ্ঞাসে তারে, 'মাগো, বলো মোরে, কী করছো রন্ধন'?
কষ্ট চাপিয়া ধীরস্থির স্বরে কহিল সে আঁখি নীরে-
'শান্তনা দিতে তাপ দিচ্ছি জলভরা পাত্রটিরে'।


মুসাফির বলে, 'জননী গো শোন,  ঘুমাইও না তুমি আর,
আসিতেছি আমি কিছুক্ষণ পর তোমার ঘরেতে আবার'।
কিছুক্ষণ পরে আটার বস্তা, লইয়া খোরমা-খেজুর
মুসাফির ফের বিধবার ঘরে আসিল রাতের দুপুর।
রুটি বানাইয়া ঘুম থেকে তুলে অবোধ শিশুদের; হায়,
আদর করিয়া পেট পুরাইলো রুটি-খেজুর-খোরমায়।
এই সে শাসক খলিয়া ওমর ধর্মেতে ছিলো লীন,
সেরাদের সেরা শাসক তিনিই 'আমিরুল মোমেনিন'!


৩০/০৫/২০১৬
মিরপুর, ঢাকা।