হঠাৎ মনে হলো, বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের কবিদের সাথে একটু আড্ডা দেই। ফোন দিলাম কবি রুনা লায়লাকে। তাকে বলার পর, তিনি সোৎসাহে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাকে বললাম, আলোচনা সভায় একটি পোস্ট দিয়ে আহ্বান করুন অন্যান্যদেরকে।


পূর্ব ঘোষণানুযায়ী আজ ০৩/০২/২০১৭ তারিখে বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের আমরা কয়েকজন কবি বাংলা একাডেমি-এর নজরুল মঞ্চের সামনে মিলিত হয়েছিলেম। আমাদের ৩.০০ টায় একত্রিত হওয়ার কথা ছিলো। সে লক্ষ‌্যে রওয়ান দেই ১ ঘন্টা আগে। পথিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ভীড় ঠেলে যখন ফার্মগেট পৌঁছলাম, তখন প্রায় ৩.৩০ টা। এর আগেই নজরুল মঞ্চে পৌঁছে গেছেন কবি মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান, কবি মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (মনির), সিমন চন্দন বৈরাগী এবং কবি হুমায়ূন কবির। তারা কিছুক্ষন পর পরই ফোন দিয়ে জানতে চায়, কোথায় আছি, কতক্ষন লাগবে পৌঁছাতে।  আমি তাদেরকে জ্যামের অজুহাত দিয়ে অপেক্ষা করতে বললাম এবং আধা ঘন্টার মাঝে মিলিত হবার আশ্বাস দিয়ে বাসে বসে থাকি। এমন সময় কবি রুনা লায়লা টেলিফোন করেন- তার একটি অফিসিয়াল সমস্যার জন্য তিনি তখনো অফিসে। আসতে পারবেন কি না সন্দেহ। তবে, আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 'মাথায় বাজ পড়ার' বাংলা ভাষায় যে একটি প্রবাদ আছে; তা আমার মনে পড়লো।তবুও, উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য  কবিকে বললাম, কোন চিন্তা করবেন না। সম্ভব হলে আসবেন। না আসতে পারলেও কোন সমস্যা নেই।  আমাদের এ মানুষ জীবন এ রকমই হয়। আমাদের চাহিদা মাফিক জীবন সরলভাবে নির্দিষ্ট পথে চলে না।


প্রায় ৪.০০ টায় পৌঁছলাম ভাঙ্গা ঠ্যাংয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বন্ধুদের কাছে। কবি মনির এগিয়ে এসে হাতে হাত মিলালেন। হাতে হাত মিলায়ে যেন তৃপ্তি পেলাম না। তাকে ডান হাতে টেনে এনে (বাম হাতে ক্রাচ ধরা) বুকে বুক মিলালাম। মোলাকাতের পরপরই কবি একটি সুন্দর ব্যাজ আমার ব্লেজারে পিন দিয়ে আটকিয়ে দেন। তাতে সবুজ জমিনের উপর হলুদ রঙ্গের কাগজে লেখা- 'মিলন মেলা, ২০১৭; বাংলা কবিতা ডটকম'। সবুজ যেমন বাংলাদেশের প্রতীক; তেমনি হলুদ আনন্দের প্রতীক। এই ব্যাজগুলো আসরের কবি হুমায়ূন কবির নিজের হাতে তৈরী করে এনেছেন। চেয়ে দেখলাম, প্রত্যেকেরই বুকের কাছে একটি করে ব্যাজ সাঁটা। ব্যাজ পরানোর পরপরই একটি বাক্স থেকে চকলেট দিলেন।  এর পর পর্যায়ক্রমে কবি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামন, কবি সিমন চন্দন বৈরাগী এবং কবি মনিরের বন্ধু মোঃ রিয়াজ মোর্শেদ এবং কবির ছোট ভাই মোঃ সামিউল আলীম সাথে পরিচিত হয়ে কুশলদি বিনিময় করি। কবি সিমন চন্দন বৈরাগীর ছোট ছেলে অর্ণব বৈরাগী এবং কবি মনিরুজ্জামানের কন্যা তানজিম তাবাসসুম তিশার সাথেও পরিচিত হই।


আমরা কথা বলছি। আর, কবি মনিরের ছোট ভাই সামিউল ছবি তুলছেন। মিলন মেলা প্রসঙ্গে প্রিয় এডমিনের সাথে সকালে ম্যাসেঞ্জারে আলাপ হয়েছিলো, তা নিয়েই আলোচনা করছি। এডমিন ও আমার মাঝে যে সকল কথোপকথন হয়েছে, তা পড়ার জন্য মোবাইলটি তিশার হাতে দিলাম। তিশা সুন্দরভাবে পাঠ করে আমাদের সকলকে শোনালো। এমন সময় ফোন করলো কবি পলাশ দেব নাথ। তিনি শুধুমাত্র এই মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য সুদূর মৌলভী বাজার থেকে এসেছেন। এখানে বলে রাখা ভালো, কবি পলাশ পূর্বে ঢাকায় কখনোই আসেননি। ০২/০২/২০১৭ রাত্রে তিনি আমাকে ফোন করে জানতে চাইলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমে অমর একুশে বই মেলায় আসবো কিভাবে? আমি তাকে লোকেশন বলেছিলেম। বুদ্ধিমান কবি ঠিকমতোই চলে এসেছেন। কিন্তু বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চ খুঁজে পেতে তার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যখন আমাদের দেখা পেলো, তার চোখে-মুখে বিদ্যুৎচ্ছটার মতো একটি উজ্জ্বল আলো ঠিকরে উঠলো। সকলের সঙ্গে প্রবল আগ্রহের সাথে পরিচয় এবং কুশল বিনিময় করলো। আমার খুবই ভালো লাগলো হাসি-খুশিময় ছোটখাট অবয়বের কবি পলাশকে। এর কিছুক্ষণ পর কবি খায়রুল আহসান এলেন। এদিকে যে যখনই আমাদের এসে মিলিত হচ্ছেন, তখনই কবি মনির তার ঝুলি থেকে চকোলেট (তা বড়ই মজার ছিলো। এ ধরনের চকলেট দেখলেই কেন জানি আমার আসরের কবি মিমির কথা মনে পড়ে। 'মিমি চকোলেট' একটি ব্র্যাণ্ডের নাম।) বের করে হাসি আর ভালোবাসা মেখে এগিয়ে দেন।


আমরা কথা বলছি। আসছে ২১ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে। এমন সময় সেখানে এলেন একজন লেখক এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক আলো ভাই। যিনি পূর্ব থেকেই আমার পরিচিত। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সম্পূর্ণ সাদা চুলের একজন অমায়িক মানুষ। সবার সাথে পরিচিত হলেন এবং আমরা তাঁর সাথে ছবি তুললাম। আমার মনে আছে, ২০১৫ সালে 'শতরূপে ভালোবাসা'-এর মোড়ক উন্মোচনের দিনও তাঁর সাথে আমাদের দেখা হয়েছিলো। আমরা ছবি তুলেছিলেম। কাকতালীয়ভাবে আজও তিনি আমাদের কাছে চলে এলেন।


আমাদের এহেন আলোচনা ও ছবি তোলার এক ফাঁকে দ্রুত পায়ে চলে এলেন কবি রুনা লায়লা। সাথে এক ব্যাগ ভর্তি কেক আর বিস্কুট নিয়ে। এসেই নিজের দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জনে জনে বিলিয়ে দিতে লাগলেন মজাদার কেক ও বিস্কুট। আমরা সবাই পরস্পর কথা বলছি, খাচ্ছি আর ছবি তুলছি নজরুল মঞ্চের সামনে। আমরা সবাই মিলে খেয়েও সে খাবার শেষ করতে পারিনি। পরে আমরা সদলবলে যে যে স্টলে গিয়েছি, তাদেরকেও খাবার আর আনন্দ ভাগ দিয়েছি। অতঃপর, মঞ্চে উঠে ছবি তুললাম। এমন সময় কাব্যকথা সাহিত্য পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা কবি রিনা সরকার প্রিয়া আমাদের সাথে যোগদান করেন।


এ সময়ে আমরা কয়েকজন স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করলাম। এ সময় দেখি মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভীড় আমাদেরকে ঘিরে।  কবি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান কবি রুনা লায়লার কিছু কবিতা শিরোনামকে আশ্রয় করে একটি সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। কবিতাটি প্রেমাকুল ভাবধারায় সিক্ত। আবৃত্তি শুনে তার মেয়ে তিশা মিটিমটি হাসছে। কবির কবিতার মতোই তার আবৃত্তি হৃদয়গ্রাহী। ধন্যবাদ কবি একটি সুন্দর সন্ধ্যা উপহারে সাবলীল ভূমিকা রাখার জন্য। এরপর, আমরা সদলবলে উন্মাদের স্টলে যাই। অনেকেই সেখান থেকে বই কেনেন। এবং উন্মাদক আহসান হাবীবের অটোগ্রাফ নেন। একসময় কার্টুনিস্ট আহসান হাবীর স্টলের বাহিরে এসে আমাদের সাথে ছবি তোলেন।


এরপর আমরা পরস্পর বিদায় নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওয়ানা দেই। যার যার ইচ্ছের পছন্দ মতো বই কেনেন। ৮.০০ টার দিকে যে যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে প্রাণের বইমেলা থেকে বের হয়ে আসি। একটি আনন্দঘন সন্ধ্যা কাটলো আসরের বন্ধুদের সাথে।  


বাসায় এসেও অনুভব করি মিলন মেলার আনন্দের স্রোতটা মনের ভেতর খেলে যাচ্ছে। অতঃপর, লিখতেই হলো-


আনন্দ আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রাণে,
অরুণ আলোয়, পাখির গানে গানে;
আকাশ ভরা তারার দেশে দেশে,
ছড়িয়ে দিলাম গভীর ভালোবেসে।
আনন্দ যে রক্তধারায় মিশে,
দোলছে দে দোল পাইনিকো তার দিশে;
নদীর জলে ভালোবাসার ঢেউ,
তৃণদলে দেখলো না যে কেউ।
আনন্দ আজ জাগছে চোখে-মুখে,
ছড়িয়ে পড়ে প্রাণের মিলন সুখে;
আনন্দ আর সুখের পরশখানি,
রাখবো ধরে হৃদয় মাঝে জানি।
আনন্দতা ছড়াক আলোর মত,
বিমল ভালোবাসায় অবিরত।


০৩/০২/২০১৭
মিরপুর, ঢাকা।


বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের কবিদের মিলন মেলার  কিছু ছবি আমার ফেসবুকের পাতায় পোস্ট করা হয়েছে। এবং https://www.facebook.com/BanglaKobitaWeb/ শেয়ার  করা হলো।


ধন্যবাদ সকল বন্ধুদেরকে।