সারাদিন ট্রাম-বাস-ফেরিওলাদের ডাক- কুষ্ঠরোগী পথের উপর-
হাড়ভাঙা মহিষের গাড়িগুলো-বাজারের রুক্ষ শব্দ-বস্তির চিৎকার।
আমার হৃদয়ে যেই শঙ্খমালা কিশোরীটি বাঁধিতে আসিয়াছিল ঘর
তাহারে ফিরায়ে দেয় শহরের পথ থেকে পাড়াগাঁর কান্তারের পার-


কবে যে কান্তার ছেড়ে আসিয়াছি নির্বাসিত আমি রাজপুত্রের মতন,
কোথায় শিমের গন্ধ? শ্যামা পাখি? কিশোর গেল কি মরে বুকের ভেতর?
দুপুর ঘনায়ে ওঠে ভিজা মেঘে- চিল কাঁদে-কই বলো?
কই হীরামন?-
আমার হৃদয়ে যে গো শঙ্খমালা কিশোরীটি বাঁধিতে আসিয়াছিলো ঘর।



আমি যে সংসারে মন দিতে চাই, আমি যে বাঁধিতে চাই পৃথিবীর
মানুষের মতো
বাসা এক; আমি যে বন্দরে যাই, অন্নের উপায় করি-স্বামী হই
পিতা হই আমি;
আমি যে ভিড়ের গন্ধ গায়ে মাখি দিনরাত; আঁধারে ঘুমাই, দিনে
রৌদ্রে ইতস্তত
ঘুরে ফিরি; সংসারের কাজ কথা হাটের ভিতরে আমি অলক্ষ্যে যে
পড়িতেছি নামি-
এইসব ছেড়ে দিয়ে, হে হৃদয়, চলে যাও অঘ্রাণের পাড়াগাঁর ম্লান
তেপান্তরে,
সেখানে বটের বুকে দাঁড়কাক বাঁধে বাসা-রাঙা পশমের মতো
ফলগুলো ঝরে
শুকনো পাতার 'পরে; সেখানে সন্ধ্যার বক শঙ্খের মতন শাদা
পাখনা ভাসায়
কামরাঙা-রক্তমেঘে-তিনশো বছর ধরে কোন্‌ অভিমানী মঠ
দেখা যায়-
খড়কুটা মুখে নিয়ে শালিখ উড়িয়া যায় কান্তারের ঘাস থেকে
প্রান্তরের ঘাসে,
এক তারা ফুটিতেই রূপসী প্রেতিনী সেই শঙ্খমালা দেখা দেয়
মাঠের বাতাসে। ...



যেদিন আমি পৃথিবীর থেকে চলে যাব- হে শঙ্খমালা-
অপরিসীম নক্ষত্র তুমি বিছিয়ে রেখো আকাশে,
আকাশের অন্ধকার সমতলতা ঘিরে যুগান্তের লুপ্ত মানবীদের মতো
কয়েকটি নির্জন নক্ষত্র-
এর চেয়ে গভীর জিনিস কী আর থাকতে পারে
কী আর থাকতে পারে শঙ্খমালা-


আর আমার বিছানা করে দিয়ো সমতল দেশের শিয়রে
সবুজ ঘাসের ছবির ভিতর
ধানসিড়ি নদীর জলের গন্ধের কাছে
এই বাংলায়।