মহাভারত, অমর কাব্য, রয়ে গেছে মহা ভারতটাই
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহাভারতে গল্পের শেষ নাই l
ভারতের নানা অঞ্চলে, তাকে ঘিরে, নানা গল্প চলে
চরিত্র সব মহাভারতের, গল্প বিভিন্ন, তারই কথা বলে l
দক্ষিণ ভারতের লোকগল্প, জনশ্রুতি, কাহিনী আজব
কৃষ্ণ হন অর্জুনের বৌমা, অর্থাৎ পুত্রবধূ, শুনে তাজ্জব ?


উলুপী এক নাগা মহিলা, পতিব্রতা, অর্জুন তার স্বামী
মহাবীর ইরাবান, স্নেহের পুত্র তাদের, জানেন অন্তর্যামী l
কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ চলে, অবিরাম, দিবসকাল নবম
উভয় দলে মহাবীর, মহাযোদ্ধা, অস্ত্র, নেই কারো কম l
যোদ্ধা মরে উভয় পক্ষে এইভাবে নবম দিন হয় পার
সমশক্তি দুদলে, কে জিতবে, উপায় নাই বোঝার l


কৌরবনেতা ভীষ্মদেব আর পাণ্ডবনেতা হন ধৃষ্টদ্যূন্ম
দ্রৌপদীভ্রাতা, মহাবীর ধৃষ্টদ্যুন্ম, পাঞ্চালে যার জন্ম l
কৃষ্ণ দেন বুদ্ধি, সংবাদ এক, যুদ্ধ কেমনে যায় জেতা
রক্তবিলাসিনী মহাদেবী, রক্তপায়ী, তিনি হবেন ত্রাতা l
কিন্তু তিনি বলি চান, মহাবীর এক, বত্রিশ গুনে পুষ্ট
তিনজন পাওয়া গেল ৩২ দেবলক্ষণ দেহে যাদের স্পষ্ট l
কৃষ্ণ অর্জুন আর ইরাবান এই তিনজনের দেহে মেলে
সেই লক্ষণ পরিষ্কার, রক্তবিলাসিনী খুশি হন যা হলে l


কিন্তু অর্জুন, কৃষ্ণ না হলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কেমন চলে
তাই ইরাবান যাবেন বলি সিধান্ত নেন পাণ্ডব সকলে l
ইরাবান, আপত্তি নাই বলি হতে, কিন্তু শর্ত সাথে অন্য
একদিনের জন্য স্ত্রী চাই, মারা গেলে, বিলাপের জন্য l
মেয়ে যায় না পাওয়া, যে রাজি, হবে একদিনের বৌ
রাতের সোহাগ, ভোরে স্বামীশোকে চোখে কান্নার ঢেউ l
কিন্তু শেষ ইচ্ছা তার যেমনই হোক, পূরণ করাই বিধি
কৃষ্ণ করেন বুদ্ধি বাহির, স্ত্রীরূপ নেন, উপায়ের নিধি l


মোহিনী হয় নাম তার, অতি রূপবতী, ইরাবানের বৌ
ইরাবান মোহিনী, স্বামী-স্ত্রী, বাসরে ওঠে খুশির ঢেউ l
সকাল হতেই ইরাবান বলি, রক্তবিলাসিনী রক্তপিয়াসী
মোহিনী বিলাপ করেন শোকে, নিদারুন শোকবিলাসী l
বলেন সবে, এই বিলাপ, করে নি কেউ কোনোদিন
স্বামীর জন্য, এমন স্ত্রী রত্ন, স্বামী মরেও ধন্য চিরদিন l


রক্তবিলাসিনী দেন আশীর্বাদ পান্ডবদের, যুদ্ধে হবে জয়
শিখণ্ডিকে সামনে রেখে যুদ্ধ, ভীষ্মের নিশ্চিত পরাজয় l
শিখণ্ডি সামনে, ভীষ্ম অস্ত্র ছাড়ে, অর্জুন করে বিদ্ধ তাকে
শরশয্যা নেয় ভীষ্ম, যুদ্ধ ছাড়ে, কৌরবেরা বিপাকে l
তারপর পর পর পান্ডবেরা জেতে কৌরবরা যায় হেরে
ইরাবান ! তোমার বলিদান যায় নি বৃথা, অকাতরে l


কৌরব পাণ্ডব মহাযুদ্ধ কুরুক্ষেত্রে অষ্টাদশ দিবস চলে
মহাবীর কৌরব সব পরাজিত কৃষ্ণের নানা কৌশলে l
দ্রোনাচার্য ভীষ্ম কর্ণ সব একে একে কুনীতির শিকার
অর্জুন হাতে পরাজিত সবাই রাজনীতির করে বিকার l
কত যোদ্ধার স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ, মায়ের চোখের জল
সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা, শেষ পর্যন্ত, কিছু হয় নি নিষ্ফল l