নানা প্রয়োজনে অনেক সময় ফর্ম পূরণের প্রয়োজন হয় l সেই ফরম পূরণের সময় একটি স্থানে তথ্য দিতে হয় পেশা সংক্রান্ত l সেখানে ছেলেদের দেখেছি, বয়স কম হলে লেখে "ছাত্র" বা Student" l আর ছাত্রাবস্থা পেরিয়ে গেলে, যদি তাঁর কোনো চাকরি থাকে, তাহলে সেই চাকরির উল্লেখ করা হয় l আর তার যদি কোনো চাকরি না থাকে, বা তিনি কাগজে-কলমে কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না থাকেন, তাহলে তিনি বিবাহিত হন বা অবিবাহিত, সেই স্থানে পরিষ্কার লিখে দেন "বেকার" l ইংরাজী ভাষায় ফর্ম থাকলে লেখেন "Unemployed" l
এবার মেয়েদের প্রসঙ্গ l ছাত্রাবস্থায়  মেয়েদেরও "ছাত্রী" বা Student" লিখতে দেখি l কিন্তু বিবাহিত মেয়েদের দেখি, যদি তিনি কোনো চাকরি করেন বা কোনো ব্যবসার সঙ্গে কাগজে কলমে যুক্ত থাকেন, তাহলে সেটার উল্লেখ করেন l এরকমটা না হলে তিনি সেই স্থানে লেখেন "Housewife" l অনেককে লিখতে দেখেছি "House Manager" l কখনও এরকম মহিলাকে "বেকার" বা "Unemployed" লিখতে দেখি নি l
বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে খুব সামান্য মনে হতে পারে l কিন্তু নিজ সংসারের প্রতি দায় ও দায়িত্ব স্বীকারের প্রশ্নে একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে কি মানসিকতা পোষণ করেন তার চিত্র এখানে ফুটে ওঠে l
একজন বিবাহিত পুরুষ একটি পরিবারের কর্তা l তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন l কিন্তু তাঁর স্মরণে, মননে এই কাজের কোনো Recognition তিনি নিজেই স্বীকার করেন না l একমাত্র কোনো চাকরি বা কোনো ব্যবসা তাঁর কাছে profession l বাড়িতে তিনি যে শ্রম দেন সেটাকে profession হিসাবে তিনি মানেন না l এখানেই অনুমান করা যায় সংসারে তিনি যে পরিশ্রম করেন সেই ব্যাপারে তিনি কতটা less professional ও কতো কম dedicated l
কিন্তু মেয়েদের বিষয়টি পৃথক l কোনো মহিলা যখন  একটি গৃহে স্ত্রী হিসাবে প্রবেশ নেন, তাঁর ধ্যান জ্ঞান সব ঐ পরিবারটির প্রতি নিবেদিত হয় l তিনি তুলনামূলকভাবে এক্ষেত্রে অনেক বেশী professional ও নিবেদিতপ্রাণ l তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে casual নয় l তাই তার স্বীকৃতি হিসাবে মাথা উঁচু করে তিনি ফর্ম এ তাঁর পেশা উল্লেখ করেন l
অর্থনীতি (Economics) বিষয় পড়তে গিয়ে দেখেছি কাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় l অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিক নয় এমন l যে কাজ করে অর্থ মেলে তা হলো অর্থনৈতিক কাজ l আর যে কাজ করে অর্থ পাওয়া যায় না, সেটি অর্থনৈতিক কাজ নয় l এই বিচারে একজন মহিলা বাড়িতে উদয়াস্ত তাঁর সংসারে যে পরিশ্রম করেন তা আর্থনৈতিক কাজ হিসাবে গণ্য হয় না, যেহেতু এক্ষেত্রে কোনো মজুরি বা বেতন তিনি পাচ্ছেন না l


"গৃহিনী" কবিতায় কবি Tanju H একজন মহিলা তাঁর পরিবারে সাধারণ নিয়মে এরকম যে সেবাগুলি প্রদান করে থাকেন তার সুন্দর উল্লেখ করেছেন l সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্লান্তিহীনভাবে তিনি কাজ করে যান l স্বামীকে অফিসে যাবার জন্য রেডি হতে সাহায্য করেন, বাচ্চাদের (বাচ্ছা নয়) স্কুলের জন্য তৈরী করেন l সারাদিন ধরে সংসারের খুঁটিনাটি কাজ করতেই থাকেন l বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ি থাকলে তাঁদের পরিচর্যা করতে হয় l সংসারের জন্য একাধারে তাঁকে অনেক ধরনের সেবা দিতে হয় l পরিবারের সদস্যদের রোগের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় কখনও তিনি ডাক্তার, সন্তানকে পড়াশোনার কাজে সাহায্য করার সময় তিনি শিক্ষক l সর্বদা তাঁকে ঘর গুছিয়ে সাজিয়ে রাখতে হয় l তখন তিনি হয়ে যান ডিজাইনার l বাড়িতে কোনো অনিয়ম দেখলে শক্ত হাতে তিনি সেটা সামলান l সকলকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসেন l সংসারে অনুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, এক দুঁদে অফিসার l
এইভাবে কতো বিচিত্র ভূমিকায় একজন নারী তাঁর পরিবারকে সেবা দিয়ে থাকেন l অন্যদের সুখে রাখেন, তাঁদের সুখে নিজেও সুখের অনুভব পান l সংসারে তিনি মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী, অতুলনীয়া l তাঁর উপস্থিতি ছাড়া একটি সংসারকে কল্পনাই করা যায় না l
অতি সুন্দরভাবে স্বল্প পরিসরে কবি বিষয়গুলিকে তাঁর কবিতায় মেলে ধরেছেন l একজন নারী সংসারে যে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে থাকেন, তার সুন্দর সুচারু উল্লেখ কবিতাটিতে পাই l
সুন্দর একটি জীবনমুখী কবিতার জন্য কবিকে অভিনন্দন l অনেক অনেক শুভেচ্ছা কবিকে l