কবি এ কে দাস মৃদুল "এসো কষ্ট কুড়াই" কবিতাটিতে প্রেম ও কষ্ট এই দুইয়ের মধ্যে এক সম্পর্ক আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে এগুতে চেয়েছেন l একক মনে যতই প্রেমের বপন চলুক, যুগল জীবনে সেই প্রেম যদি স্বীকৃত না হয়,  সম্মানিত না হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, অপমানিত হয়, তাহলে দুঃখের শেষ থাকে না l আবার জীবন যতই দুঃখের হোক, দাম্পত্য জীবনে যদি একজন প্রকৃত প্রেমিক জীবনসঙ্গী মেলে তাহলে জীবনে আর কোনো কষ্ট থাকে না l প্রেম এক উপশমকারী শক্তি হিসাবে  দুঃখ কষ্টকে জয় করার শক্তি যোগায়, জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে l


প্রেম মানুষের জীবনে এক অনুপম অনুভব l প্রাকৃতিক নিয়মেই শরীরে প্রেম আসে l মনে প্রেম আসে l প্রেম একাধারে শারীরিক ও মানসিক বিক্রিয়া l বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর প্রেম উপলব্ধির মতো করে নিজেকে তৈরি করে l মনে প্রেমের আবেগ আসে l বিশেষ একজন পুরুষ অথবা বিশেষ একজন নারী কোনো একজনের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে l মনের মধ্যে সর্বদা তার অনুরণন চলে l শরীর সঙ্গ চায় l প্রেমের অনুভব মনের মধ্যে স্বপ্নের জগৎ রচনা করে চলে l কল্পনার জগতে প্রেমের শুধু সুখটাই রচিত হয়, দুঃখের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকে l কিন্তু মানুষের জীবনে সুখ অবিমিশ্র নয় l প্রেম যখন সফলতার সিঁড়ি বেয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করে তখন বাস্তবতার স্পর্শে এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন জীবনটা দুঃখে পূর্ণ হয়ে যায় l যার জন্য এত প্রেম, এত ভালবাসা, তার কারণে বা তার থেকে আঘাত আসে, অনাদর আসে l তখন জীবনটা দুঃখে ভরে যায় l জীবন অর্থহীন বলে মনে হয় l


সকলের জীবন এক নিয়মে এগোয় না l প্রকৃতি পারিপার্শ্বিক নানা কারণে প্রেমের এই বোধ সময়কালে কিছু মানুষের মধ্যে বিকশিত করে তুলতে পারে না l শরীর তো এগিয়ে যায় l কিন্তু দুঃখ দারিদ্র, অন্য কোনো অসুবিধা ইত্যাদির কারণে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, পুরুষ কিংবা নারী, মানসিক জগতে প্রেমের অনুভব সেভাবে বিকশিত হবার সুযোগ পায় না l দুঃখের সঙ্গে যাদের নিত্য পথ চলা, এরকম হতভাগ্য কিছু মানুষ এভাবেই প্রেমহীন সময় পেরোয় l কিন্তু প্রেম চিরকাল অত বাছবিচার করে না l একটা সময়ে এই চিরদুঃখী মানুষদের জীবনেও, বিলম্বে হলেও, প্রেম আবির্ভূত হয় l
দাম্পত্য জীবনে যদি এরকম মানুষের প্রকৃত প্রেমিক জীবনসাথী মেলে তাহলে সেই প্রেমের পরশ তাদের সারা জীবনের দুঃখ, গ্লানি দূর করে তাদের জীবনকে পরম আনন্দে ভরে তোলে l সারাটা জীবন ধরে যে সুখ অধরা ছিলো, সে সুখ করায়ত্ত হয় l কবির ভাষায়,
"যতোটাই কষ্ট রাখো ভিতরে,
দিনেরই শেষে থাকবে যার আদরে;
তারই ভালবাসায় মুছে যাবে সব অগোচরে।"


জীবনভর কষ্ট মনের মতো এক জীবন সাথীর সাথে মিলনে এবং তার পরশে অঝোরে সব ঝরে যায় l


কবিতার মধ্যে গঠনগত যে আঙ্গিকটি ব্যবহার করা হয়েছে তাকে বলা হচ্ছে "সিঁড়ি পদ্ধতি" l এই  মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নতুন একটি ধারা নিয়ে এসেছেন কবি l
কবি, লেখক এবং পাঠক সমাজে তা সমাদৃতও হয়েছে l
এই পদ্ধতিতে ছন্দ, অন্ত্যমিল, গদ্য কবিতাসহ সব ধরনের কবিতা লেখা যায়। সিঁড়ি পদ্ধতির নিয়মঃ ১-১, ২-২, ৩-৩, ৪-৪, ৫-৫, ৬-৬ মোট ২৪ লাইন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পূর্ণ সিঁড়ি পদ্ধতিতে লেখা কবিতা দিয়ে কবি এক নতুন ধারার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন l কাব্যগ্রন্থটির নাম "হৃদয়ের অন্তরীক্ষে নৃত্যময়ী" l কবিতাগুলির বিষয় প্রেম, বিদ্রোহ, স্বাধীনতা প্রভৃতি l


প্রেম ও কষ্ট বিষয়ে এই অনুপম কবিতাটির জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা l