কিছুটা ভয় ভয় পেলেও বৈশাখী মেলায় না গিয়ে থাকতে পারিনি
শেকড়ের টান, প্রাণের টান বলে কথা! শিক্ষকতার চাকুরী বিধায়
সপ্তাহে এই একদিন-ই ছুটি—- শুক্রবার; তাও মাঝে মাঝে কোমায়
যায় এই পরীক্ষা, সেই পরীক্ষা, উন্মুক্তের ক্লাস ইত্যাদি ইত্যাদি।
যাক আজ এসব কিছুই ছিলো না—ছিলো না প্রতিবেশি ঘুমের খুব
একটা হাঁক-ঢাক; আজ যে আমার প্রিয়তমা পহেলা বৈশাখ-----!!


তবুও ঘুম ভাঙতেই দেখি কুয়োর বেলার জল অনেক গড়িয়েছে
তার উপর গিন্নীর হাঁক-ডাকের কোনো অন্ত্যমিল নেই; এটা নেই,
সেটা নেই শুনতে শুনতে আমার কান আর কানের জায়গায় নেই;
তাও আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে পান্তা ইলিশের জোগাড়-যন্ত্র গেলোবার
করে রেখেছিলাম, এর সাথে কিছু মসলাদার পোলাও-মাংস চাই
বাবুদের; এসব চাহিদার ছন্দ মিল খুঁজতে খুঁজতে জুম্মার নামাজের
সময়ও প্রায় যায় যায়!


সুযোগ পেলেই লাঞ্চের পরে ঘণ্টা দেড়েক ঘুমানোর বাতিকটা
আমার আজন্মের – বিশেষ করে শুক্রবার! আমার সেই বাতিক আজ
চুলোয় গেছে, কানের কাছেই বাজছিলো দোয়েলের সুমিষ্ট শিস,
ইউশা, ঐশী, আরশির একটার পর একটা বাহারি আবদার; কেউ
চায় ধনী হওয়ার মজার খেলা আর কেউ কিনতে চায় পুরো সার্কিট
হাউজ মাঠের সমস্ত অন্তহীন দুরন্ত বেলা!


অবশেষে বৈশাখী মেলায় পা দিতেই দেখি মাছ আকাশে উড়ে,
বেশ! আমি আর যাই কোথায়? আরশি সমানে চিৎকার, চেঁচামেচি
শুরু করে দিয়েছে – বাবা, এই দেখো মাছ উড়ে – আমি মাছ নেবো,
মাছ নেবো! ওকে কোনোমেই বুঝাতে পারি না, মা ওটা মাছ নয়;
মাছ আকৃতির গ্যাসবেলুন, কে মানে কার কথা? অতঃপর একটা
ময়না পাখি কিনে দিয়ে এ যাত্রায় রেহায় পেলুম; এবারই প্রথম
ইউশার কোনো বায়না নেই! হয়ত বড় হওয়ার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে
উঠছে!


অতঃপর যেই সার্কিট হাউজের মাঠ পেরিয়ে মূল পার্কের কাছাকাছি;
তখনও বেলা পাঁচ ঘটিকার ঘণ্টা বাজেনি; আমার চক্ষু রীতিমত চড়ক
গাছ, তাড়া খাওয়া মৌমাছি অথবা পঙ্গপালের মতো সমস্ত মানুষ
পার্ক ছেড়ে যে যেদিকে পারছে কোনোরকমে নিষ্ক্রান্ত হচ্ছে; বুঝতেই
পারছিলাম বে-রসিক পুলিশ হয়ত আর থাকতে দিচ্ছে না!


আমার মতো নিরীহ, নম্র, ভদ্র, অখাদ্য কবি তখন কি আর করবে?
লাঠিপেটা থেকে গা বাঁচাতে নিরবে-নিভৃতে প্রস্থান নেয়; ফিরতে ফিরতে
একবার পার্কের দিকে তাকায়,একটু আগেই যেখানে জনসমুদ্র ছিলো;
এখান সেখানেই অন্ধকার করবের নীরবতা! সবচেয়ে অবাক লাগলো
এই ভেবে যে, যাওয়ার সময় যেমন ভয়ে ভয়ে গিয়েছিলাম; ফেরার
সময়ও তেমনি ভয়ে ভয়ে ফিরছি!!
এপ্রিল ১৪, ২০১৭