কবিতাঃ-শুধু একটাই শব্দ-নারী
✍️ মনোজ ভৌমিক


"নারী" শব্দটার মধ্যে কেমন যেন
একট নিঃস্তেজ ভাব রয়েছে।
যেন জোর ক'রে কথাটা ওদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
"নর" বা "পুরুষ" শব্দ গুলির মধ্যে কেমন যেন একটা
গোঁয়ারতুমি,দাম্ভিকতা তথা স্বৈরাচারী
মনোভাব তৈরি ক'রে দেওয়া হয়েছ।
কে করেছে! কেন করেছে! ও সবের মধ্যে যেতে চাই না।
যাদের 'নারী' নামে অলঙ্কৃত করা হয়েছে,তাঁরা কি সত্যই 'অবলা'!
না এই 'অবলা' শব্দটা দিয়ে আমাদের সমাজ
জোর করে ওদের প্রতিভাকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছে।
বৈদিক সভ্যতার কথা বলি,
বার বার আসুরিক শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে
আবেদন করেছে ওই 'নারী' শক্তির কাছে।
তারপর দ্যাখো, কত প্রহসন হয়েছে বৈদিক যুগে,
'ঘোষা' 'লোপামুদ্রা' 'গার্গী' ও 'মৈত্রেয়ীকে'
এত সহজে প্রতিষ্ঠা দেয়নি বৈদিক সমাজ।
বড় বড় সভা ডাকা হয়েছিল,
বাকযুদ্ধে জঘন্য শব্দ ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের উপর।
তবুও হার মানেনি তাঁরা।
বৈদিক স্বৈরাচারিতার  উপযুক্ত জবাব দিয়েছিল তাঁরা।
'নারী' শব্দটা দিয়ে এত বেশী কোমল ক'রে দেওয়া হয়েছিল
"রামায়ণের" 'সীতা'কে যে, একদিন সামাজিক                             পরিকাঠামোর বেড়াজালে-"অগ্নিদগ্ধ" হতে হয়েছিল তাঁকে।
কেন? "মহাভারতের" 'অম্বা' থেকে নিয়ে 'দ্রৌপদী'
কি অপরাধ করেছিল তাঁরা?
শুধু একটাই শব্দ-"নারী!"
আজ থেকে প্রায় ২১০০ বছর আগে,
মহারাজ বিক্রমাদিত্যের রাজসভায়  হয়েছিল একই প্রহসন।
জিভ কেটে দেওয়া হয়েছিল স্পষ্টবাদী "খনার"
কেন জানো? তথাকথিত নবরত্নের চেয়েও অসম্ভব
দূরদর্শী ছিলেন বিদূষী 'খনা'
শুধু একটাই শব্দ-'নারী'!
আজও সমাজের একই ধারা।                                                           কিছুই বদলায়নি।
কাগজে কলমে কত কিছু,সমতার কথা, সহমর্মিতার কথা।
তবুও প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালে বেঁধে দেওয়া হয়েছে শব্দটাকে
কেন জানো? ওই "পুরুষ" শব্দটা লুকিয়ে রয়েছে অধিকাংশের মনে।
আর যাঁরা ওই শব্দটাকে চ্যালেঞ্জ করেছে
সমস্ত প্রতিক্রিয়াকে ব্যর্থ করে
প্রতিষ্ঠার নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে তারা আজ ব্রাত্য--
তাই এসো শপথ নাও
ব্যাকরণের বেড়াজালকে ভাঙো,
তৈরি করো,সভ্যতার এক নতুন শব্দ'।