কবিতাঃ- শুকতারা
        মনোজ ভৌমিক


সেদিন নিশুতি রাতের আকাশটা ছিল-এক্কেবারে নীল।
কোটি কোটি তারা ঝিলমিলিয়ে
নিঃষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছিল- আকাশের গায়ে।
আমি উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে
চিত্কার করে বলেছিলাম
'মাধবীলতা' তুমি কি আমায় দেখতে পাচ্ছো?                                                                                                                            
তুমি কি এখন শুকতারার কাছে রয়েছ?"
লোকের মুখে শুনেছি, অতি প্রিয়জন হারিয়ে গেলে নাকি
আকাশের তারা হয়ে বেঁচে থাকে।
জানি না, আমি তোমার প্রিয়জন ছিলে কি না!
কিন্তু তুমি ছিলে আমার অতি প্রিয়জন।
সকাল থেকে  কলেজ অবধি
তুমি শুধু আমায় অবজ্ঞাই করেছিলে।
আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবেসে ছিলাম ছায়ার মতন,
তোমার কালো-হরিণ চোখে ছিল-অপরিসীম উচ্চাকাক্ষা
তুমি আমাকে হামেশাই তাচ্ছিল্যের স্বরে বলতে-
"ভোরের আকাশের শুকতারার কাছ থেকে
তোমার জন্য কি একটু সুখ এনে দেব?"
জানি,আমার দারিদ্রতা, আমার ভাবুকতা,
আমার নাতি-সুন্দর চেহারাটা,
তোমাকে সজারুর কাঁটার মতন বিদ্ধ করত।
তুমি, তোমার অর্দ্ধ-নগ্ন চেহারাটা                                                                                                       সুখের আচ্ছাদনে ঢাকতে গিয়ে
বিলীন হয়ে যেতে আমীরশাহী বন্ধুদের বাহু বেস্টনে।


তারপর, হারিয়ে গেছিলে অনেক দিন।


হটাত্ একদিন তোমাকে দেখলাম,
এক ফাইভ স্টার হোটেলের রেঁস্তরাতে।
হাই সোসাইটি-হাই-প্রোফাইল এর সুখের সাম্রাজ্যে
মদের গ্লাসে আর সিগারেটের ধোঁয়াতে।
তোমায় বাঁধা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলাম।
আবার সেই ব্যঙ্গের চোখে তুমি বুঝিয়ে দিলে
ওটাই তোমার সুখের সাম্রাজ্য-- তুমি ওদের শুকতারা।
টলতে টলতে একটা ভিজিটিং কার্ড হাতে দিয়ে
তুমি বলেছিলে,"প্রয়োজন হলে এসো।"
অকৃত্রিম ভালোবাসা, তোমার ঊন্মাদ চেহারাটাকে
হৃদয় ভাঙা চোখের জলে ধুয়ে দিতে চেয়েছিলাম,
পারলাম না! ব্যার্থ প্রেমিকের শেষ স্ংলাপটুকু
রেখে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না আমার।
রিক্ত হৃদয় কেবলই অমাবস্যার আকাশ খুঁজছিল
যেখানে থাকবে না কোনো আলো-
থাকবে শুধু অন্ধকার আর ঘন অন্ধকার।
অন্ধকার  আকাশটা, সন্ধ্যাতারাকে  আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল
স্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তার।
সেটাই ছিল জীবনের শেষ ক্ষণ।
লিভার আর ফুসফুসের ক্যানসারে শয্যাশায়ী ছিলে তুমি
জীবনের শেষ প্রহর গুনছিলে,
আমার অপ্রকাশিত প্রেম- বিরলে, বিজনে,শুধু অশ্রু হয়ে বয়ে যেত--
আজ তোমার জীর্ণদেহ আর রিক্ত মুখপাণে চেয়ে
গোলাপের পাপড়ির মতন টপ টপ করে
ঝরে পড়তে থাকল অশ্রুধারা।
তোমার জীর্ণ হাত আমার হাতে দিয়ে
হতাশাচ্ছন্ন চোখ দুটি আমায় বলল,
"অনিন্দ্য,আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি।"
প্রজ্জ্বলিত ভোরের শুকতারা
নীরবে বলে গেল সুখহীন অনেক কথা।