এখনও নিজেকে মনে হয় স্বাস্থ্যবান, সুপুরুষ, এবং সুস্থ
নেই কোন দুশ্চিন্তা, অর্থাভাবে নই আমি একটুও দুঃস্থ


ভগবানে রাখি বিশ্বাস, মানি আছে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ
আমার প্রতি অণুকুল, সদয়, সহিষ্ণু আবাসিক পরিবেশ
নেই কোনও পরিবার, কোন আত্মীয় সম্পর্কের দায়িত্ব
তাহলে, ভুল হবে কি ভাবলে, জীবনে পেয়েছি স্থায়িত্ব


তবু যখন খুলি দেরাজটা,  পাই সেই প্যেপার-মাশে ডিবে
ভয়, খুলে তার ঢাকনি কতই ইতি-হীন চিঠিরা উড়ে যাবে


তুমি লিখতে কোন অচিন ভাষায়, আমি লিখতাম বাসনায়
দু’ভাষার ব্যবধান ঘুচাতে উঁকি দিতাম মানসের জানালায়
খুঁজতাম, তার ভিতরে আছ নাকি উদ্ধত কলমটি বাগিয়ে
চিঠির শেষটা লিখিয়ে নিই যদি, কটা সাদা পাতা ধার দিয়ে


কেন না, তোমার কোনও চিঠিতেই, হত না শেষের ‘ইতি’
কল্পনা নিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম তোমার সব ইতি-উতি বিবৃতি
খাপ ছাড়া ছাড়া, অসংলগ্ন ছবির মত সব তোমার প্রলাপে
হন্যে হয়ে খুঁজতাম শ্রী আর ছন্দ, সহস্র শতচ্ছিন্ন সংলাপে


আভাসের অভাবে কিছু অনুমানে, কিছু আন্দাজে, গাঁথতাম
বিশেষ্য বিশেষণের কোলাজে তোমার সৌন্দর্যের শতনাম



… …
তোমার হাতের পাতে জরদ মেহেন্দি, কানড় খোঁপায় বকুল
লতানো জুলফির সর্পিল ঝুরি চুমে দোলে কানে লবঙ্গের দুল
চিকণ ললাটে ভ্রু-রেখা উদগ্র, কী বিহ্বলতায়, কী কৌতূহলে
দক্ষ হাতের সুনিপুণ কাজ, এক ঈষৎ টোল দক্ষিণ কপোলে
কমলার কোয়া ওষ্ঠে ও অধরে গোলাপি সুরার সিক্ত আবেশ
কাজল কলঙ্কে লিপ্সু আঁখির অস্থির করা চাহনি কী অনিমেষ
আঁখি পাতে পেলব পলকে বর্বরতা পোষ মানানোর অনুরাগ
লতিকা কৃশাঙ্গে কাঁচুলিতে ঢাকা ব্রণ – জুটি ভেলভেটি বাগ
ওই স্বচ্ছ আবরণ মানে না দেহ সাগরে উতলা মেদের ঢেউ
কে দেবে পাড়ি, দুঃসাহসী কাণ্ডারি, এমনও আছে কি কেউ
… …


এই সবেরই রূপ-গাথা নীলকান্তমণি রেখায় ইনিয়ে-বিনিয়ে
ইতি-হীন বৃত্তান্তে আঁকতে তোমার হাত কে দিত থামিয়ে
থেমে থেমে চলা, অসম্পূর্ণ,  রূপের ঐশ্বর্যের সে কাহিনী
কিন্তু আমার জীবনী তো শেষ, থামিয়ে দিয়েছি যে লেখনী


এখন আমার বাকি সাদা পাতা, লিখে ভরবার কেউ নেই
সব-সম্পদে-পূর্ণ এ সুখে আমি কোথায় হারিয়েছি খেই ?
------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ৩১ জুলাই ২০১৪