ঘুমাতে চাইলেও ঘুমাতে পারি না
কবিতা মায়ের জ্বালায়,
মাথার কাছে বসে ঘেনঘেনিয়ে বলে
কবি মহাশয়-
অনেক হলো ঘুম এবার তো উঠুন
ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন;
টেবিলের উপর পড়ে আছে সাদা কাগজের পাতা!
কবিতা মায়ের জন্য কিছু শব্দ কুড়িয়ে আনুন।

পাঞ্জাবী পড়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি রাস্তায়,
এ-দিক সে-দিক ঘুরেফিরে যদি দু-চারটে শব্দ কুড়িয়ে পাই!
তাতেই চলে যাবে আজকের দিনের কামাই।
  
এ-দিক সে-দিক ঘুরেফিরে কবি যখন শব্দ খুঁজে না পাই,
রাস্তার পাশে বসে থাকা রিক্সাওয়ালা করিম চাচার দিকে চোখ আটকে যায়।
বন্যার পানিতে ভিটেমাটি হারা করিম চাচার কষ্টের কথা শুনে কবির মন ভার হয়ে যায়!
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কবি তখন তার শব্দ খুঁজে পাই।  

পার্কে বসে কবি যেন কি ভাবতে থাকে আনমনে,
হুট করে তখন এক পিচ্চি এসে হাতে ফুল ধরিয়ে বলে-
দশটা টাকা দেন স্যার!
বিনয়ী হাসি আর ফুল দেখে দশ টাকার ফুল বিশ টাকা দিয়ে কিনে কবির মন ভালো হয়ে যায়;
ভালো লাগা মন দিয়ে কবি তখন তার শব্দ খুঁজে পাই।

খাঁ খাঁ রোদ্দুর গ্রীষ্মের দুপুরে মাথা উপর সূর্যিমামা কড়া নাড়ে,
শব্দ পিপাসু যাযাবর কবির তখন তৃষ্ণা বাড়ে-
দূর থেকে কাঙ্কে কলসি নব-বধূ দেখে কবির নজর কাড়ে!
কুচি দেয়া পড়া শাড়ী ঘোমটা দেয়া মুখ এ যেন খুঁজে পাওয়া শব্দের আসল সুখ।

শব্দের সুখে বিমোহিত হয়ে কবি শব্দের সাগরে ডুবে যায়,
গোধূলিলগ্নে রাখাল ছেলে তখন বাঁশি বাজিয়ে ঘরে ফিরে যায়-
রাখালিয়া বাঁশির শব্দে শুনে কবির মন ভরে যায়!
রাখালিয়া বাঁশির তালে তাল মিলিয়ে তখন কবির শব্দ সুর খুঁজে পাই।

রাত্রি শেষে বাড়ি ফিরে কবিতা মায়ের সাথে বসে,
টেবিলে রাখা সাদা কাগজের উপর কুড়ানো শব্দের সঙ্গম ঘটায়!
শব্দের সঙ্গমে কবিতার বীর্যপাত করিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে কবি ঘুমিয়ে যায়।

পরদিন সকালে-
আবার কবিতার মায়ের ঘেনঘেনানি শুনে কবির ঘুম ভেঙে যায়......