পশ্চিম রামপুরার সেই নুরু পাগলের কথা মনে আছে?
জানি তোর মনে নেই।
মনে না থাকারই কথা। সময় তো কম পার হলো না।
প্রায় দশ বছর। না দশ বছর না,প্রায় বারো বছর।
আজ প্রায় এক যুগ পরে আমার নুরু পাগলের কথা মনে পরছে।
আমি তখন ক্লাস থ্রি’তে পড়ি। মাদার ল্যান্ড গ্রামার স্কুলে।
নুরু পাগল প্রতিদিনই স্কুল গেটের পাশে সিঁড়িতে বসে থাকতো।
আর মুখে বিড়বিড় করে কি সব যেন বলত।
শুনেছিলাম ওর একমাত্র ছেলেটা নাকি আমাদের স্কুলেই পড়ত।
একটা রোড এ্যাকসিডেন্টে মারা যায় ওর ছেলেটা।
সেই থেকেই নুরুল ইসলাম হয়ে ওঠে নুরু পাগলা!
সেই থেকেই প্রতিদিন স্কুল গেটে ও বসে থাকে!
স্কুল ছুটি দিলে, ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরবে বলে।
একদিন টিফিন টাইমে আমি আর জাহিদ বাইরে গেলাম, ঝালমুড়ি খাব বলে।
নুরু পাগল আমাকে দেখেই দৌড়ে আমার কাছে আসলো।
আমাকে কোলে নিয়ে জোরেশোরে হাঁটা দিলো।
আমি ভয়ে চিৎকার করলাম।
চারপাশ থেকে লোকজন দৌড়ে আসলো। আমাকে ছেড়ে দিতে বললো।
কিন্তু নুরু কারোর কথাই শুনছে না।
আমি ভয়ে কেঁদেই চলছি।
শেষে চার-পাঁচ জন লোক জোড় করে আমাকে ওর কোল থেকে নামালো।
বোধহয় দু চারটা ঘাঁ’ও মেরেছিল নুরুকে!
পরে বাসেত স্যার নিজে আমাকে বাসায় দিয়ে এসেছিলো।
বাসেত স্যারকেও ভুলে গেছিস?
আরে বাসেত স্যার।
যার সারা মুখে বসন্তের দাগ ছিলো। উনিই ছিলেন আমাদের হেড মাষ্টার।
তোর তো দেখি কিছুই মনে নেই।
যাক বাদ দে সেসব কথা।
জানিস,আজ যখন আমি বাইক থেকে পড়ে গেলাম,
তখন বাবাও যেন নুরু পাগল হয়ে গিয়েছিলো।
আমি কখনো আমার বাবার চোখে জল দেখিনি।
আজ দেখলাম।
সেদিন আমি নুরু পাগলের কোলে বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।
আর নুরু পাগল হেসেছিল!
আজ আমি বাবার কোলে বসে হাসছিলাম।
আর বাবা চিৎকার করে কাঁদছিল!