আমি লাবণ্য ভৌমিক।
নাম শুনে আপনাকে বুঝতে হবে।
আমি একজন নারী।হাতে শাঁখা।
কাপালে সিঁদুর।বার হাত পেঁচানো কাপড় শরীরে।
নামে মানুষের গন্ধ, শরীরে নারীর,
বুকে হাওয়ায় মিঠাই ঘ্রাণ,মানুষ
আমাকে নারী বলে চেনে।
পুরুষ বলে ফুল। কেউ বলে পরী।


আমি নারী। নারী। নারী।
আমি মানুষ নই।তাই,যেতে পারিনি
বাড়ীর সীমানা পেরিয়ে,বড় সড়কে।
ঘাসফড়িঙ,ঝোপ ঝাড়ে, জোনাকির দলে
সবাই বলে আমি নারী।
ও সব আমার জন্য নয়।
আমি নারী।
গলি পাশে দিয়ে হেঁটে যখন যাই,
পিঁপড়ে হাঁটে পায়ে পায়ে।
শিয়াল গুলো তেড়ে আসে আমার দিকে।
মানুষ হলে ভয়ে পালাতো।
আমাকে কেউ ভয় পায়না।
দৌড়ে পালায় না, শিস দেয়।


বলে নারী। নারী। নারী। মানুয় তো নয়?
কেউ কেউ বলে, ডানা  কাটা পরী।
কোন কালে ডানা ছিলো আমার।
কোন ঋষি  চেয়ে এনে ছিলো।
আমি  উড়ে না যেন পালাতে পরি,
আমার ডানা কেটে দেওয়া হয় ।
তার পর ও আমি মানুষ হয়নি
পরী থেকে নারী।


কেউ বলে  নদী।আমার মাঝে ডুব দেওয়া যায়।
সুখে ভেসে থাকা যায়।
মানুষ হলে নদী হতাম না। নারী হতাম না।
আমার শক্ত দুটি হাত থাকতো।
হাতে উপর পেশী  ফুলে ফুলে উঠতো।


নারী। তাই মানুষকে দেবতা ভেবে
পা ধরে ঝুলতে হয় আমাকে।
দেবতার পায়ের ধুলো কপালে চন্দন  অষ্টমীতে।
রক্তে ভেজে ইচ্ছে।মানুষ হলে, মুখ বুজে
সহ্য করতে হতো না।আমি নারী বলে
মন্ত্র গুলো মূল্য দিতে হয়।
আমি নারী  বিধায় মেঘে গুলো আমার।
চোখের কোণায় শিশি জমে।
বুকের উপর পাথর।

আমার নাম ইতিমধ্যে বলেছি।
আমাকে বক্তৃতার মুখে
সংবাদ পত্রের শিরোনামে।
মিছিলে, সভায় সমিতিতে।
নাটক।কবিতায়।
অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে উঠে কেউ কেউ।
কিন্তু আমি লাবণ্য ভৌমিক।
মানুষ হই না।নারী থেকে যাই।


৩৫১ বেডে শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর অন্ধকার দেখি।
গোলাপ, কত ফুলের তোড়া।আশার বাণী,
তখনও আমি নারী।আমি আজন্ম নারী।
জন্মান্তে নারী।