২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে,শুরু হয় এক ইতিহাস
ঘুম  ঘুম চোখ ভয়ে কাঁপা বুক  ভয়াল অবিন্যাস
চারদিকে আঁধার জ্বল জ্বল জ্বল আগুনের আলো
চোখে পড়ে  ছানি পথে পথ খুঁজে আঁধার কালো
মাথার উপর বোমারু  বিমান  উড়ে আকাশের বুকে
ট্যাঙ্কার, এলএমজি, রাইফেল তাক করা নল সম্মুখে
পুড়ে ঘর পুড়ে বাড়ি পুড়ে মানুষ,নাড়ি ছেঁড়া ধন
কত রমনীর কপাল  পুড়েছে  সিঁদুর হয়েছে ম্লান
এক কালো রাত ২৫শে মার্চ উনিশ শ' একাত্তুর
হয় না তো ভোর, জেগে উঠেনা এখনো  ঈশ্বর
২৬শে মার্চ ভোরের বেলা ছুটেছে মানুষ দলে দল
কোথায় যাবে, কোথায় পাবে, তারা নিরাপদ স্থল।
মায়া মায়া মুখ  লুটিয়ে আছে  রক্তাক্ত মাটিতে
চোখের  জল শুকিয়ে গেছে হৃদয়  ফুঁপিয়ে কাঁদে
নিজের জীবন বাঁচাতে ছুটে , নেই ভাবনা  কাহার
আপন জীবন লয়ে বিপাকে,কৃপা খোঁজে বিধাতার।
শুনে না বিধাতা, নিরবে দেখে হায়েনার ফাঁদে মানুষ
বুকের ভেতর জ্বলে উঠে আগুন প্রত্যয় প্রতিশোধ।
জেগে উঠে  দেশপ্রেমী কিশোর যুবক বৃদ্ধ বণিতা
আনবো মোরা জীবন বাজীতে বাংলার স্বাধীনতা
অস্ত্র কাঁধে, চোখে স্বপ্ন কাজল ছুটে তারা জলে-স্থলে
বুক পেতে দেয় হাসি মুখে আহা একি সুখ! বীর হলে।
                      মা'র ছেলে মরেছে যুদ্ধের ময়দানে
                      ভাসেননি অশ্রুজল মায়ে দুনয়নে
               "সাবাস পুত্র স্বার্থক জনম  দিয়ে  তোরে
                ক'জন মেরে,মরলি যাহ কয়ে আমারে।"
মানুষ কত পথে -ঘাটে ফুলে ফেঁপে ডোবা-নদীর জলে
মাছুম শিশুরা পায়নি রেহাই রাক্ষসে খেয়েছে গিলে।
কত শিশু কাঁদে মা'র লাশের পাশে শুকনো স্তনধরে
"উঠো উঠো মা শুয়ে আছো কেন ক্ষুধায় যাই  মরে।"
আকাশ পানে চেয়ে থাকে মানুষ,  করুণ আহাজারি
বাতাসে বাতাসে কিশোরীর কান্না হয়ে উঠে ভারী।
নারীর লালসা,দালালে দল করেছে দোসরের পূর্ণ
নিমিষে কত যুবতীর ,কত বধূর করেছে  স্বপ্ন  চূরণ
একি লজ্জা!!  জীবনের নেমে এলো কোন সর্বনাশী
ঘৃণা আর গ্লানিবোধ গলায় পড়ে ছিলো কত ফাঁসি
নিপিড়ন, নির্যাতনে ব্যানেটে ক্ষত বিক্ষত দেহ মন
মাথা নোয়ানি  ভাঙ্গেনি মুক্তি সেনা মুক্ত করার পণ।
ক্ষত ঘাঁয়ে ছিটিয়ে নুনু, পায়ু পথে  সেদ্ধ ডিমে যন্ত্রণা
পাথর পেটায়ে পারে না খসাতে, জয় বাংলা ভুলেনা
লাশ পড়ে, রক্ত ঝরে,মাটিতে  চাপা মানুষ  জ্যান্ত
তার  পরেও  মানুষ  ওরা  হয়না, হয়না  যে  ক্ষ্যান্ত
ন্যাংটা ছেলে মেয়ে, লাল সবুজের পতাকা  হাতে
মিছিল সকাল সাঝে  পাড়া  মহল্লায়, মেঠো  পথে
গলা টিপে ধরে   রাজাকার  আলবদর  পাক সেনা
জানেনা তারা বিচ্ছু, কাল নাগিনীর বিষ ধর ফণা।


প্রতিদিন সকালে ভাবে মানুষ,বেঁচে আছে আজ  
শুনা যায় গুলাগুলির শব্দ, মাঠে বাকি কত কাজ
নতুন বৌয়ে জড়িয়ে ধরে,বলে তার কানে কানে
মাথার কিরা খাও ,ছেড়ে যাও যদি  কোনখানে
এমন করে ফাঁকি দিয়ে কত পুরুষ  গেছে  চলে
নব বধূ পথ পানে চেয়ে,ভাসে দু'নয়নের জলে
রিফিউজি পাড়ায়,খোঁজে মানুষ নিত্যদিনে খবর
স্বাধীনতা তুমি এলে, ফিরে  যাবে  বাড়ী  আবার।
আধা আহারে শীর্ণ দেহ,কত দিন  আর  বল  সহে
হাড় গুলো সব দাড়িয়ে আছে, ক্ষুধার আগুনে দহে
ক্ষেত ভরা ফসল, পুকুরে মাছ, গোয়ালে গরু
কত আশা বুনে কত স্বপ্নের দেখা হলো শুরু
স্বপ্নের ভিতর ছিলো, সব মানুষের বসবাস
স্বাধীনতা এলো ঘরে মোদের দীর্ঘ নয় মাস
ঝরে কত তাজা প্রাণ, সাথে কত  অভিলাষ
রক্তে কেনা স্বাধীনতার গৌরবের ইতিহাস।