হাতে ধরে ওরা কারা
তপ্ত গলা, পিচের ঝারা !
গোটা গ্রীষ্মকালে –মেলে ,
আগুন ঝরা ধরণী তলে !
সারা ভরদুপুরে কাজ চলে ,
রাস্তায় গলন্ত পিচ্ ওরা ঢালে-
কাজ করে তারা দলে দলে ৷
পায়ে ছেঁড়া বস্তা বাঁধা ,
হাতে দস্তানা পরা আধা ;
গরমে, নাক-কান-মাথা-
ন্যাকড়া জড়ানো থাকে সেথা ৷
সামান্য চোখ রয় খোলা -
গ্রীষ্মে সারাটা গা উদলা !
পিচের যে মহা গ্যাস -
ওদের বুক করে হাঁসফাস !
কঠিন বড়ো, চোখ মেলা -
পিচে করে জ্বালা-জ্বালা ,
গরম ছিটে পড়ে গায়ে-
তবু পিচ ঢালে তারা নুয়ে !
পিচে মাখা ভাঙা নুড়ি
তার পরে চলে ভারী গাড়ী-
যন্ত্র-রোলার দেয় পাথর চাপা ,
এ কাজ অসীম, অমাপা !
দেশের কোনায়-কোনায়-
তারা পৌঁছে দেয় রাস্তায় ;
কাজ করে মিলে-মিশে সকলে
স্ত্রী-পুরুষে, জনাদশেক দলে ,
সকাল দুপুর বিকেলে -
কাজে তাদের দিন ঢলে ৷
শিল্পী তার তুলি দিয়ে
মনের মত রং ধরিয়ে -
চিত্র কতনা করে সাকার ;
জ্বলন্ত ঝারা হাতে ধরে
পথের উপর পিচ ছুড়ে-
বাস্তব রূপ দেয় তারা রাস্তার ৷
রাস্তা, উবড়-খাবড়, অসমতল
করে পাকা আর সমতল ,
তারা কাজ করে ভর দুপুরে
একাজ করে জীবন ভরে ;
কাজের নাকি এমনি ধরণ -
গরমে হয় মজবুতি করণ !
রাস্তার এক পাশে
সংসার সাজিয়ে বসে
নিয়ে আসবাব পত্র
ছড়িয়ে থাকে সর্বত্র ,
মুক্ত গগন তলে
তাদের উনুন জ্বলে ৷
আছে হাঁড়ি কড়াই বালটি
নাই, গ্লাস ঘটি বাটি -
খাওয়াতে নাই কোনা হেলা ,
কাজে ক্ষিধে পায় যে মেলা ৷
বিছানা গরম মাটির ভূমিতে
তবু রাত কাটে শোয়াতে ৷
তারা জানে না জানাতে দাবি
বিধিতে বিধান আছে সবই ,
আপন ভোলা সদা তারা -
কাজেই থাকে আত্মহারা ৷
যতনে সমতল করে পথ -
কত যাত্রীর ঘুচায় আপদ
ওরা, পথ গড়ে ভোগে না-
ওরা,গাড়ী ঘোড়া চালায় না ৷
পাকা রাস্তায় চলে কারা ?
গাড়ী ঘোড়া চড়ে যারা-
পায় পাকা পথ , সমতল
অনেকে করে না খেয়াল-
জানে না এ রাস্তা কার ফল ;
ইচ্ছা শূন্য, বাস্তব-ধরাতল !
যারা কিছু মোটে না পায়
তাদের বাঁচা শুধু ভাবনায় -
তারা সবে মঙ্গলে করে কামনা
তারাই আবার অজানা অচেনা !
হাতে নিয়ে তপ্ত পিচের ঝারা-
ভর দুপুরে ওরা কারা ?
কাজই ওদের জীবন -
রাস্তাই ওদের বাঁচা-মরণ !
(ইং-০৮-০১-২০১৬-শুক্রবার)