কবি পরিচয় -- সম্মানীয় কবি অসিত কুমার রায় (রক্তিম) । তেহট্ট /নদীয়া/ ভারত । ৮ বছর ১১মাস আসরে আছেন, ২৪২৭ টি কাব্য প্রকাশ করেছেন । মনের খেয়ালে কাব্য লেখেন । বিশেষ কোন সমালোচনার ঝঞ্ঝাটে যেতে দেখি নাই, সাধারণতঃ মানুষ, প্রকৃতি, জীবন নিয়েই তাঁর লেখা পাই । সাদামাটা আপনভোলা পারিবারিক জীবন । তাঁর ৫ আগস্টের কাব্য "সবহারার গান" , আমাকে মুগ্ধ করেছে, তাই সে কাব্যকথার উপর আমার মনের রং মিলিয়ে কিছু একটা লিখে দিলাম জানি না কার মনে কতটা আদৌ লাগবে !


মোট কাব্যটি চারটি স্তবকের, প্রথম স্তবক সম্পূর্ণ তুলে ধরলাম । এখানে কাব্যের বিশেষতা এই যে শেষের তিন লাইন সব স্তবকে- একই সমতায় আছে , তাই অন্য তিনটি স্তবকে মাত্র দু’টো লাইনে শেষ করলাম ।


১/---
"চোখে চোখ রেখে সোচ্চারে হক কথা বলতে হয়
আগুনের সাথী হয়ে সাধুর মুখোশ ছিঁড়ে ফেলতেই হয় ।
জবাব চাই এক্ষুনি চাই
নিজ নিজ অধিকার বুঝে নিতে চাই
তাই পায়ে পায়ে মিছিলেতে মিলতেই হয় ।"


'হক কথা' -সত্য কথা বলতে চাইলে সৎসাহস দরকার হয় , তার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে কথা বলতে চোখের ভাষা অটল হওয়া দরকার । মানুষের চোখ শারীরিক ভাষা বলে দেয় ।
কথায় বলে, "বাঘার যতো সাহস চোখে"।
'আগুনের সাথী' বলতে , কবি অগ্নীযুগের বিপ্লবীদের কথা বলতে চেয়েছেন , হে সাথী ক্রান্তিকারী হও । সমাজে যারা সাধুর বেসে মুখোশ পরে আছেন, তাদেরকে জনসম্মুখে সোচ্চারে উজাগর করাই আাজিকার যুগধর্ম ।
এ কাজের জন্য সমাজের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন এর উপায় --জবাব চাই, "জবাব চাই এক্ষুনি চাই"
নীচে কবি নিজেই একটা পখ বলে দিয়েছন -সবার জীবন যখন সমস্যায় জর্জরিত তখন
"নিজ নিজ অধিকার বুঝে নিতে চাই / তাই পায়ে পায়ে মিছিলেতে মিলতেই হয় ।"
২/----
"জীবন মরনে আমি তুমি এরা ওরা সবাই সমান
মিথ্যে প্রচার বিভেদে কেন সব হয় অসমান ।"


'জীবনে মরনে' --যখন জীবনটা আসে জন্মগ্রহণ করে এবং 'মরনে' মৃত্যুকালে
প্রতিটি মানুষের মধ্যে সমতা পাওয়া যায় , শিশু -কৈশোর -যুবা -বৃদ্ধাবস্থা সবই একই ভাবে সমতায় অতিবাহিত হয় । সবার শরীকে শ্বেত-লোহিত কোণিকা শিরা উপশিরায় ।
তবু মানুষে মানুষে এত দ্বন্দ্ব বিভেদ কেন ? কী তার কারণ ? মনে হয় মিথ্যে প্রচার এর মূল কারণ । এরও সমাজের কাছে জবাব চাই । কবি নীচে তার (বিভেদের) মুক্তির জন্য
উপায় বলেছেন, প্রচারে আসতে হবে, জনজাগরণ মিছিলে অংশ নিতে হবে, পায়ে পায়ে শতসহস্রতে এগিয়ে আসতে হবে । এ উপায়েই জবাব মেলে ।
৩/---
"রোদ ঝড় বৃষ্টিতে অবহেলে জীবনের রসদ মেলে
ভালো কী লাগে যোগে বিয়োগে শুধু শুন্য পেলে "


সাধারণ জনসাধারণের জীবন আজকার দিনে বড়ো কঠিন সময় !
অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও যে রসদ মিলবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই । তারপর প্রকৃতির দুর্যোগ ,"রোদ ঝড় বৃষ্টিতে অবহেলে জীবনের রসদ মেলে" । পারিবারিক জীবনে প্রতিটি
প্রাণীর জীবনে নাই নাই ভাব, হাতে কিছু বাঁচে না, বিযোগ আর বিয়োগ ! এই কি জীবন ?
এরও উপায় কবি বলে দিয়েছেন । জবাব পেতে হলে সকলে পায়ে পায়ে মিছিলে আসো ।
৪/--
কত দিন আর কত দিন এই ভাবেই হার মেনে নেব
কিছুই তো নেই আর হারাবার তাই এবার রুখেই দাঁড়াব ।


অন্তিম স্তবকে উপসংহারে অসম্ভব জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন--- বিজ্ঞকবি ।
হার মানাটা যদি সহিষ্ণুতা মনে কর তবে আর কত কত হার মেনে নেবে ?
এই ভাবে তো জীবন চলে না, বিপদের- অভাবের মীমাংসা হয় না ।
পিঠ যখন দেয়ালে ঠ্যাঁকে তখন সামনে যাওয়া ছাড়া গতি নাই । এখানে মহানক্রান্তিকারী
লেনিনের কথা মনে পড়ে , হে সর্বহারা নিঃস্ব হওয়ার মত তোমার কিছু নাই ! হারলে কিছুই ক্ষয়ে যাবে না, জিতলে পুরো পৃথিবী । তোমরা অধিকারের জন্য লড়ো !!
তাই প্রজ্ঞাকবি নিজেই পথ বেছে নেবেন, "কিছুই তো নেই আর হারাবার তাই এবার রুখেই দাঁড়াব ।" জনমিছিল, জনসংগ্রামই এর একমাত্র পথ ।


কিছুটা মাত্রা বিশেষ কমি মনে হল । দাড়ি, কমা, জিজ্ঞাসা চিহ্নের কমি লাগল , যেহেতু জবাব চাই সেখানে প্রশ্নবাচক চিহ্ন দরকার , শুন্য > শূন্য বানান হবে । ছন্দ (আমি তত অভিজ্ঞ নই ) তাই আমার মতে অতি সুন্দর লাগল । ভাষা সুন্দর মার্জিত ।
এক ক্রান্তিকারী কবিকে শতসহস্র স্যালুট জানাই । মুগ্ধ সমসাময়ির বিচার সমৃদ্ধ কাব্যের জন্য , আগে আরো কাব্য আশাকরি ।