http://www.bangla-kobita.com/vanom/poem20130717013646/


কালি-কলম
-----------------------
ভানম অালয়


খেলাচ্ছলে একদিন সে সফেদ সুন্দর কাগজের বুক
হয়তবা ভেবে ছিল অাপনার হৃদয় ক্যানভাস.....
প্রিয়ার অাজন্ম সাধ নেচে গেয়ে ভরিয়ে দেবে প্রিয়ের শূন্যতা।
সে কি অসহনীয় তৃষ্ণা!
প্রতীক্ষার পালা শেষ করে সুহৃদের অন্তর্দৃষ্টি
প্রিয়ের বুকে প্রথম চুম্বন, অাহ্ কি তৃপ্তি!
খুঁয়ে সকল লাজ-শরম নিপুণ ছন্দে
নেচে উঠে প্রথম সুযোগে-তারপর
বাঁধভাঙ্গা অানন্দে-অশ্রুতে তার শুধু সামনে এগিয়ে চলা,
বার বার মরে কত কথা সুর কবিতা
হৃদয় গল্প বানিয়ে গেল ইতিহাস অক্ষয়!


ধ্বংস সাধনা মানুষের কখনো কখনো তবু
ক্ষয়ে দেয় -চেপে ধরে টুঁটি!
কিন্তু অপ্রতিরোধ্য সে, নতুন অালোর স্বাধের নেশা
শাদা হৃদয় সম কাগজের নেশায় ছোটে সে
গড়ে মহাকাল মহা সৃষ্টি কাগজের বুকে
ধন্য সে লেখক-কালি-কলম
-------------------------------------------------------------------------

ভাবের বৈচিত্রতা সমৃদ্ধ ইতিহাস একমাত্র কবিতাতেই সম্ভব।হৃদয়ের সূক্ষ্ম বেদনাবোধ,প্রেমদগ্ধ মননের বিকাশ, রূপকল্পনার রসানুভূতি,সমস্যা-ঘেরা অন্ধকারাচ্ছন্ন বাস্তব জীবনের রসালোক উত্তীর্ণ কাল ধুয়ে অাত্মচেতনার বিকাশ ঘটানো কেবলমাত্র কবিতাতেই প্রযোজ্য হয়ে উঠে শৈল্পীক প্রয়োজনেই।(ইথার)


সেজন্যেই হয়ত কবি নবীন সেন বলেছিলেন-
"একাকী নির্জনে এক তরুর ছায়ায়
একটি উপল খণ্ডে করিয়া শয়ন
চাহি অনন্তের শান্তদীপ্ত নীলিমায়
ভাবিতেছি,--জীবনের ভাবনা প্রথম,--
একই মানব সব;একই শরীর"(নবীন সেন)



গীতিমূর্ছনা,সংযত ও অসংযত হৃদয়ের কাল্পনিক কেন্দ্রীকতার যে রহস্য,তা পরিধির বাইরে এসে বিরাটত্ব নিয়ে ধরা দেয় পাঠকের সচেতন মানসপটে।
(ইথার)



সৃষ্টি ও স্রষ্টা দুটোই শিল্পের জাগরণ।কবি ও কবিতা যেন একে অপরের সহযোগী।মাধ্যম বাতাসের মত,যাকে অনুভব করা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না,ধরা যায় না,কেবল অনুভবে টের পাওয়া যায়।
(ইথার)



কবি ভানম অালয়ঃখুবই সুচারু কবি।দক্ষ,শৈল্পীক মননের অধিকারী,বিনয়ী,কবিতার হাত যেন পাহাড়ী ঝরণা,তাঁর কবিতাগুলো রৌদ্রদীপ্ত অথচ ক্লান্ত পথিক কে অনায়াসে স্নান করিয়ে দিতে সক্ষম।



কবিতায় শব্দ হলো পথ।শব্দ ছাড়া কবি হাঁটতে পারেন না।পরপর শব্দ বসিয়ে দিলেই কখনো কবিতা হয় না।প্রতিটি শব্দ কথা বলে,প্রতিটি শব্দ হাসতে জানে,কাঁদতে জানে...।মাইকেল বলেছিলেন-"শব্দে শব্দে বিয়া দিলেই কবিতা হয় না"।তাই শব্দকে হতে হবে মার্জিত,প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ।



নামকরণঃকবিতার নাম "কালি-কলম"।নামকরণের মাঝেই একটা মিষ্টতাবোধ ও শৈল্পীক দর্শনের অমোঘ প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত।কবির সাথে কালি-কলমের সম্পর্ক অাবহমান কাল হতে বিদ্যমান।এ তিনটি শব্দ (১)কবি(২)কালি(৩)কলম পাল্টে দিয়েছে পুরো শৈল্পীক জগতকে।সুতরাং,বলতেই পারি,একজন পাঠক যখন কবিতাটি পড়বে তখনই তার চেতনছায়ায় দাঁড়িয়ে যাবে একটি অাগমনী দৃশ্যপট।পুরো কবিতা পড়লেই বুঝা যাবে এ নামকরণটি যথাযথ।কবিতায় নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।নামকরণ শৈল্পীক না হলে কবিতা তাঁর অাসল সৌন্দর্য্য হারায়, অজান্তেই.........



"খেলাচ্ছলে একদিন সে সফেদ সুন্দর কাগজের বুক
হয়তবা ভেবে ছিল অাপনার হৃদয় ক্যানভাস.....
প্রিয়ার অাজন্ম সাধ নেচে গেয়ে ভরিয়ে দেবে প্রিয়ের শূন্যতা।"------অসামান্য কথা।


কত কথা বলে যায় এ ক'টি লাইন।সেই কাগজের বুকটাকেই কবি ভেবে নিয়েছেন হৃদয়ের ক্যানভাস,জোর করে নয়!!খেলাচ্ছলে,অানন্দে.....
অতঃপর,সেই হৃদয়ের ক্যানভাসে তিনি কল্পনা করলেন কবির সৃষ্টিরা হবে প্রিয়ার অাজন্ম সাধের মত,যা নেচে গেয়ে ভরিয়ে দিবে সেই প্রিয়ার প্রিয়তমের শূন্যতা। সৃষ্টির শৈল্পীক যোগসূত্র কবি ভানম অালয় একটি কাগজকে ভিত্তি করেই অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন।



"সে কি অসহনীয় তৃষ্ণা!
প্রতীক্ষার পালা শেষ করে সুহৃদের অন্তর্দৃষ্টি
প্রিয়ের বুকে প্রথম চুম্বন, অাহ্ কি তৃপ্তি!
খুঁয়ে সকল লাজ-শরম নিপুণ ছন্দে
নেচে উঠে প্রথম সুযোগে-তারপর
বাঁধভাঙ্গা অানন্দে-অশ্রুতে তার শুধু সামনে এগিয়ে চলা,
বার বার মরে কত কথা সুর কবিতা
হৃদয় গল্প বানিয়ে গেল ইতিহাস অক্ষয়!"


---এই স্তবকটি কবিতার মূল দৃশ্যপট।কবির শৈল্পীক সংযোগ সাধনের পর শুরু হয়ে যায় অবিরাম তৃষ্ণা। সৃষ্টির বেদনায় কবি ছটফট করতে থাকেন সহজাত ধারায়।
অপেক্ষার অবসান ঘটে।সৃষ্টির প্রারম্ভে সৃষ্টির শরীরকে প্রিয়ার বুক বানিয়ে যেন প্রথম চুম্বনের অাস্বাদ,এ সৃষ্টি নামক প্রিয়ার বুকে চুম্বন দিতে কোন কবিরই লজ্জা হবার কথা নয়!কেননা বুকের মাঝে অবিরাম তৃষ্ণা.......


তারপর......কেবলই এগিয়ে চলা অানন্দে,অশ্রুমাখা অানন্দে......কেনো?সৃষ্টিকে পূর্ণত্ব দানের উদ্দেশ্যে।



"ধ্বংস সাধনা মানুষের কখনো কখনো তবু
ক্ষয়ে দেয় -চেপে ধরে টুঁটি!
কিন্তু অপ্রতিরোধ্য সে, নতুন অালোর স্বাধের নেশা
শাদা হৃদয় সম কাগজের নেশায় ছোটে সে
গড়ে মহাকাল মহা সৃষ্টি কাগজের বুকে
ধন্য সে লেখক-কালি-কলম"----দুর্দান্ত স্তবক।


---এই স্তবকে শিল্পের মাহাত্ম্য ফুটে উঠেছে অবলীলায়।কবি বন্দনা করছেন কবি-কালি-কলম কে।হয়তো কখনো কখনো জ্ঞানের অপপ্রয়োগ অর্থাৎ ধ্বংস সাধনা অামাদেরকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যায়,চেপে ধরে টুঁটি(কবি ভাষ্যমতে) কিন্তু সকল বাঁধা পেরিয়ে জয় হয় সৃষ্টির,জয় হয় কবিতার,কলমের অার কালির।তাই তো কবির ভাষায় পুনর্বার বলতেই হয়---
"ধন্য সে লেখক-কালি-কলম"



মন্তব্যঃ কবিতাটি ছোট হলেও অনেক কথা বলে যায়।একটা চিরায়ত দৃশ্যপট ভেসে উঠে।কবির সাথে শিল্পের যে সম্পর্ক তা অত্যন্ত দক্ষভাবে, সুন্দর শব্দচয়নের মাধ্যমে সরলতাময় অাবহে ফুটে উঠেছে।পরিসমাপ্তি ঘটেছে মৌলিকতায়.....
সুতরাং,সব মিলিয়ে কবিতাটি কে সুন্দর অাখ্যা দিলে অাশা করি দোষের কিছুই হবে না।



একটি কবিতা প্রকাশ হওয়ার পর বাংলা সাহিত্য জগতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোন পাঠক একজন কবির কবিতায় সমালোচনা/অালোচনা/মতামত/প্রশংসা করার অধিকার রাখেন।



বিতর্ক কাম্য নয়!