চিত্রা 'মেয়ে মানুষ চেনা বড় কঠিন',  তাই না?
ছোট বেলা থেকে কতবার যে কথা টা শুনেছি, -
তোমায়  ঠিক বোঝানো যাবেনা।
তোমায় ঠিক বোঝানো জাবেনা ;
একটা মেয়ে মানুষ পুরুষের জীবনে এলে,
সে কিভাবে তারে আগ্লায় রাখতে চায়;
কিভাবে তার খেয়াল রাখতে চায়, -
সে সত্যিই বোঝানো যাবে না কোনদিন।
তোমরা মেয়েরাও হয়ত বোঝ পুরুষ মানুষ!
দিনশেষে শরীর ছাড়া আর কীইবা চাইতে পারে?
হাজার হোক মরদ ত!
কামনার গন্ধ পেলে কী ঠিক থাকতে পারে?
কত সহজে আমরা মিলিয়ে নেই একে অপর কে!
তাই না?  কিন্তু সত্যিই  কি আমরা বুঝি?
নারীর চাওয়া আর পুরুষের হৃদয়?


দিনশেষে পুরুষ মানুষ তার হাত ভরা টাকা, 
সোনার গহনা আর একটু থাকার আশ্রয় দিয়ে
দায়িত্ব সারে!
আর মেয়ে মানুষ ভাবে,
তাকে তৃপ্ত করতে পারলেই দায় শেষ!
এই হিসেব মিলিয়েই কত মানুষ পার করলো ;-
এক ছাদের নিচে বছরের পর বছর!
তবু যেন কোথায় এক হাহাকার জমা হয় দিনের পর দিন,-
বছরের পর বছর!
কত দিন বিনা করনে অভিমান হয়।
সকাল অফিস যেতে গিয়ে-
গিন্নীর যে হাসি মুখটা রেখে যাওয়া ছিলো,
বিকালেই সেখানে এক রাশ কালো মেঘ জমা হয়!
কাজ থেকে সদ্য ফেরা পুরুষের বোঝার সাধ্য কোথায়?
সময় কোথায়? 
ভাড়ার ভরা চাল  আছে,
ছেলের স্কুলের বেতন সব দেয়া আছে,-
গত মাসের বোনাসের টাকায় নতুন গয়না ও এসেছে;-
অনেক দিনের বায়নার শাড়িটাও ওর্ডার করা হয়েছে!
ওর যে কি হয় না!  ভালো লাগেনা আর -
এত দিনের সংসারে তবুও চাহিদা মেটানো গেলো না!
পুরুষের ভেতর জেগে ওঠে এক রাশ হতাশা।
অভিমানে আরো ঘন হয় নারীর মন!
কতদিন হাজার কাজের শেষ এ,
পুরুষটির ফেরার সময় হলে,
সেই প্রথম দেখা হবার  দিনের শাড়িতে -
সাথে খোপায় বকুল গুজে রোজ দাঁড়িয়ে থাকা!
যে বকুল তোমার খুব প্রিয় ছিল।
(ছিলো বললাম কেনো? অনেক দিন ত আর শুনিনি
তাই পছন্দ বদলেছে কিনা জানা হয়নি)
তারপর কি হয়?
হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে -
ছেলে মেয়েদের খবর নিতে থাকো;-
ছেলেটা আজ স্কুলে গিয়েছিলো?
মেয়েটার র‍্যাশটা গেছে কিনা?
কত রেস্পসিবল হয়ে গেছো তুমি!
প্রেমিক থেকে পুরুষেরা বাবা হলে কত কিছুই যে বদলে যায়!
নারীর দিকে তাকানোর সময় কোথায় তার?
দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি,
দেশের অবস্থা তাকে ভীষণ অস্থির রাখে।
ফ্রেশ হয়ে টেলিভিশনের রিমোট টিপে টিপে,
দেশের কত খবরে পুরুষের আগ্রহ  তাইনা?
ওদিকে গভীর অভিমানে রান্না ঘরে কড়াই আর খুন্তির
লড়াই পুরুষেটির কান এড়ায় না।


কে জানে মেয়ে মানূষের মন!
ক্ষনে অক্ষনে এমন পরিবর্তন ;-
বাচ্ছার মা হয়ে এই বয়সেও ছেলেমানুসি
তার নিজের কাছে এক রাশ লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কে খোঁজ রাখে সেই মেয়েটির?
যে সলজ্জ হাসি নিয়ে তার প্রথম যৌবনে, -
পুরুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো এক প্রেমিকা হয়ে!
আজও সে নিজেকে,
তার হারানো প্রেমিকা হিসেবে খুজে ফেরে।
কিন্ত বয়স,  কুচকে যাওয়া মুখের বলি রেখা
শরীরের স্থুল মেদ বাধা দেয়।
স্বলজ্জে সে লুকিয়ে ফেলে নিজেকে।
বিষাদে ভরে ওঠে নিজের মন,  সমস্ত সত্ত্বা।
হটাৎ খুজে পায় সে নিজেকে হারানো সাম্রাজ্যের রানী হিসেবে।


যেন দুহাত ভরিয়ে আবার তাকে নিস্ব করে দেয়া।
কে করে এত কিছুর সন্ধান? 
মেয়েরা যেদিন প্রেমিকা থেকে গিন্নী হয়ে ওঠে,
সে আসলে সবার মাঝে থেকেও একা হয়ে ওঠে;
তাই এক ছাদের নিচের এক বিছানায় যদিও
তবু অসীম দূরত্ব ক্রোমেই বেড়ে চলে দিনের পর দিন।


পুরুষ মানুষ ও চায়, -
যাকে সে ভালোবেসেছিলো সেই তাকে;
হটাৎ চুরি করে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাসায় ফিরে,
একটু জড়িয়ে ধরতে।
সেই প্রথম দিনের মতো।
অনেকটা বুনো আনকোনা ;
তাড়াহুড়ো ঠিক নয় যেন ধরা পড়ার এক ভয়!
অনেকটা বখাটের মতো আচমকা ,
তোমার গায়ে হাত দেয়া! এই  সব ছেলেমানুষী!
অফিসের ব্যস্ততার ফাকে হটাৎ একটা মেসেজ-
সরিয়ে নিক তার মনযোগ!
যেমনটা প্রথমে ছিল। কী সব কথা! ছি!


সেই প্রেমিকাও এক সময় নারী হয়,
তারপর একদিন মাও হয়।
শুধু হারিয়ে যায় প্রেমিকা!
এখন একটু কাছে পেতেও অপেক্ষা করতে হয়;-
বাচ্ছাদের ঘুমানো পর্যন্ত,
তারপর দুজন ক্লান্ত দেহে কখন ঘুমিয়ে পড়ি,
ওরা জেগে থাকে অনেক রাত অব্দি।
এভাবে কত দিন কত রাত চলে যায়,
সময় ফুরিয়ে আসে,  চুলে পাক ধরে ;
জীবন বহন করে চলে,
দুটি মানুষ এক ছাদের নিচে থেকে ক্লান্ত হয়ে।
একত্রে থেকেও জানা হয়না কেউ কারো,
যুগের অধিক বলা হয়না- 'কেমন আছো'?


তারপর?
কেউ খুজে নেয় নতুন মানুষ!
কেউ মানিয়ে নেয় ঘরের পোষা পাখিটির মতো;
খাদ্য আর আশ্রয়ের পরম নির্ভরতায়।
ভালোবাসা সে অনেকটা  মরুভূমিতে বৃষ্টির মতো, -
কালে ভদ্রে;
কারো কারো আবার প্রতীক্ষায় কেটে যায় এ জীবন!


আসলে পুরুষ যেমন খুজে ফেরে,
নারীর আড়ালে এক প্রিয়তমা;-
যে তার খেয়াল রাখে, যত্নে রাখে।
নারীও হাজার মানুষের ভীড়ে খুজে ফেরে ;-
এক প্রেমিক পুরুষ!
যে তারে আগলায় রাখে,  যে তাকে দেখে চুপিচুপি,-
সে চায় হটাৎ একদিন এক গোছা কাচের চুড়ি,
যা তার হাত ভরিয়ে দেবে;-
একটা বকুল মালা এনে গুজে দেবে তার খোপায়;
সস্তা আলতায় রাঙাবে দুখান চরণ।


আমরা আর পারিনে প্রেমিক হতে, প্রেমিকা হতে;
সময় হতে দেয়না আমাদের।
দেয়না পুরানো পথের রেখে ধরে অতীতে যেতে;-
তাই খুজে নেই সেই মানুষ অন্য কোথাও-
অন্য কারো মাঝে অন্য কোনখানে।
না তার ঠোঁটে শরীরে অন্যকিছুর খোঁজে,
শুধু এক অন্য মানুষেরে খুঁজে, -
যারে সে ভালোবাসে যারে সে ভালোবাসতে চায়।