কবিতার মৃত্যু নেই।নেই স্থবিরতার সংশয়।কবিতা কবি মনের এক বিরাট ও বিচিত্র স্বাপ্নিক ভূবন।কবিতা আকাশের মতই বিশাল।নদীর মত চলমান আর সমুদ্রের মত গহীন।কবিতা ফুলের কথা বলে ,মনের কথা বলে আর বলে শুদ্ধ পৃথিবীর কথা।
কবির মানস ভূমিই মুলতঃ কবিতার প্রকাশ।কবি স্বপ্ন দেখেন;দেখেন মায়াময় এক স্বপ্নিল পৃথিবীর ছবি।প্রকৃতি আর কবিদের মধ্যে রয়েছে এক অবিচ্ছেদ মেল বন্ধন।এমনি এক স্বপ্নচারী ও মানবিক কবির নাম মোঃফিরোজ হোসেন।যিনি বাংলা কবিতার আসরের কবিদের হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছেন তার কাব্য শৈলীর মাধ্যমে।তার কবিতা স্বপ্নের কথা বলে; শোনায় প্রেম ও মানবতার বাণী।স্বপ্ন ও মানবিক আবেদন তার কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে শব্দের নিপুন শক্ত গাঁথনে। যেখানে মানবতা কেদে মরে সেখানে তার কবিতা দ্রোহ অথচ সাম্যের কথা বলে।আরাকানি রোহিঙ্গাদের দুঃখ বেদনায় তাই কবি গেয়ে উঠেন-
পুড়তে থাকে নিয়ত
আরাকান এক অগ্নি কুন্ডের নাম
বিষাক্ত হলাহলে সারা দেহ নীল”(জ্বলে আরাকান)
কিংবা, মহতি বুদ্ধের অহিংস বাণী /আজ হিংসার অনলে পুড়ে ছাই, / শরীরে মুসলিমের লেভেল আঁটা মানুষের গন্ধ নাই!
সুংরাইল বৃক্ষশাখে হলুদের সমারোহ আর নেই/কৃঞ্চচুড়া হারিয়েছে লাল/রঙ হারিয়ে ধূসর রক্তজবা /হাস্নাহেনা ,গোলাপ ফুলেরা সুগন্ধ হারা/ব্যঘ্র সিংহের হুংকারও ম্রিয়মান/ভীষন নিস্তেজ তারকা।(বৈরী সময় যখন)
স্বপ্ন মানুষের হৃদয় রাজ্যে নতুন দিনের হাতছানী দেয়।গা ঝেরে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়।জাপিত জীবনের দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে এক টুকরো শান্তির প্রত্যাশা করে।জীবন যেখানে স্থবির হয়ে যায় স্বপ্ন সেখানে গতিময় হয়ে ওঠে।স্বপ্নচারী কবি ফিরোজও তাই স্বপ্নে বুক বাঁধার কথা বলেছেন-ওর জান বড্ড শক্ত, বার বার ফিরে পায় প্রাণ
মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে চলে
এক মনন হতে শত শত, হাজার হাজার, অগণিত মননে
কারণ কবিতা অমরত্ব পায়, মৃত্যু হয় না কখনই ।“(কবিতার মৃত্যু হয়না)
সুখী বিশ্ব গড়ে উঠে
নিয়ন্ত্রিত বাসনায়
সঙ্ঘাত যুদ্ধ লাগে
অতি সম্পদ লিপ্সায়।(সুখ সন্ধান)
কিংবা, যেথা যাই দূরে/ যদি ডাক পাশে/বারে বারে ফিরে আসি/তৃঞ্চায় জল মিটে পিয়াস/তৃপ্ত হৃদয় – হে প্রেয়সি ।(প্রেয়সী)
বাংলা সাহিত্যাঙ্গানের আধুনিক কাব্যে প্রকৃতির নির্ঝরতা ঘুরে ফিরে এসেছে কবিদের কবিতায়।কবি ফিরোজ হোসেনও এর ব্যতিক্রম নহেন;তিনি শক্ত শব্দ বুননে এঁকেছেন প্রকৃতির মুখ।“সোনালী ধানের ঝরঝরে সুখ/শিশির জড়ানো কিছুটা শীতল স্পর্শের রাঙ্গাপ্রভাত/আড়মোড়া ঘুম ভাঙ্গে আঙ্গিনার/দিনের পাটাতনে নমনীয় সুরের স্নিগ্ধ কিরণ/ফসল,মাঠ,ঘাট অরণ্য অবিচল চঞ্চল।(হেমন্তে অবগাহন)


শহুরে জীবনের হাইব্রীড সুখে কবি মন পরিতুষ্ট হতে পারেনা।নগর জীবনের কোলাহল ছাপিয়ে কবি মন উড়ে যায় শান্ত সুনিবিড় মা ও মাটির টানে।তাইতো কবি শিকড়ের টানে ছুটে চলেন-“এখন সময় এসেছে/যেতে হবে শিকড়ের কাছে,শিকড়ের টানে/এ আসন যে তোমারই/তোমার একান্ত নাড়ীর কাছের”(শিকড়ের টান)
কবির কবিতা কাব্য প্রেমিকদের এক নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে তাতে সন্দেহ নেই।কবি তার লিখনির মাধ্যমে নিজস্ব জায়গা করে নিতে সক্ষম হবেন বলে আমি আশাবাদী।স্বপ্নচারী কবি মোঃফিরোজ হোসেন এর কবিতার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ুক বাংলার সাহিত্যাকাশে এই শুভেচ্ছা নিরন্তন।##