বহু দিন ধরে, বহু দেশ ঘুরে,
আবার ফিরিয়া আসিলাম ঘরে ।
ছাড়িয়া গিয়াছি বহু দায়ে পড়ে,
চলে যাই আমি, তবু মন নাহি সরে ।
যথায় হারায়েছে মোর হৃদয়ের ভাষা,
ফিরিনু তথায় বহু লইয়া প্রত্যাশা ।
রাঙা চটির মেঠো পথে, পড়ে ছিল মন,
আর ছিল শাল, পিয়াল, মহুলের বন ।
শাল বনের ঐ পাতার ফাঁকে ধরছে কুহুতান,
কাঠুরিয়া ঐ বনের পথে করতেছে আনচান ।
পুকুর ঘাটে বাসন মাজে গৃহস্থদের বৌ,
মৌমাছিরা গুনগুনিয়ে আনতে চলে মৌ ।
ডোম পাড়াতে বুনছে ঝুড়ি, চাঁছছে বাঁশের বেত,
চাষিরা সব লাঙল কাঁধে, যাচ্ছে ধানের ক্ষেত ।
ডোমবৌ-এরা বুনছে কুলো, ঐনা পথের ধারে,
হাটুরেরা যাচ্ছে হাটে, ঐ পথের 'পরে ।
জাল কাধেঁতে মাছ ধরতে যাচ্ছে জেলে বৌ,
স্নানের ঘাটে সাঁতার কাটে, কাপড় কাচে কেউ ।
নদীর জলে সাঁতার কাটে, কেউবা তোলে ঢেউ,
বালুর চরে, নদীর ঘাটে ডিগবাজি দেয় কেউ ।
নদীর বাঁকে মাঠের 'পরে খেলছে ছেলেরা,
দল বেঁধে ঐচলে গাঙে, বৌয়েরা, ঝিয়েরা ।
মেঠো গাঁয়ের, মেঠো গন্ধে, মন যে ভরে যায়,
গাঙের ঢেউয়ের তালে তালে, মন যে দোলে হায় ।
গোঠের রাখাল বাঁশীতে তার বাজায় মেঠো সুর,
ফুলের গন্ধ হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসছে বহুদূর ।
মাছের ঝাঁক খেলে বেড়ায়, গাঙের জলে ভেসে,
গাঙ চিলেরা উড়ছে সেথা, শিকার ধরার আশে ।
বট গাছের ঐ তলায় বসে, বুড়ো-বুড়ী, বালা,
জটলা করে গল্প করে, সকাল, সন্ধ্যা বেলা ।
রাঙামাটির ঐ গ্রামেতে ফিরি যখন, প্রায়.......,
উদাস উদাস মন যে আমার, হারিয়ে তখন যায় ।
যেখানে মোর শৈশব, কৈশর, যৌবন কাটে,
উহাই মোর বার্দ্ধক্যের বারাণসী, ঐখানেই বটে ।
   *************
২৯.০৪.২০১৬, শুক্রবার,  সন্ধ্যা ৬:৪০, কোলকাতা.