যেদিন আমি জন্মেছিলাম তোমার কোলে,
ধন্য আমি হয়েছিলাম, মিথ্যে তা নয় ।
হায় ভগবান! তোমায় বলিহারি
যতই তোমার থাকুক আহামরি ;
অনেক দূরের মিথ্যে সাজে তুমি ।
ধন্যবাদে গরবিনী, আমার চোখের মণি
সে যে আমার জননী ।

জন্মেছিলেম মায়ের গহীন মনে,
পুতুল খেলার দিনে ।  
ভেবেছিলে শুধুই খেলা অবোধ অভিযান ;
হায় ভগবান! তোমার অবুঝ প্রতিদান ।
আমার কচি শরীর নিয়ে মেতেছিল খেলায়
দিন-রাত্রি কেটেছিল দারুণ অবহেলায় ।
অভিযোগের ক্লান্তি হত দূর
আমায় কাছে পেয়ে ।


মাগো, তোমার স্বপ্ন চিরন্তন –  
বোধ-বুদ্ধি শক্তির বীজ করেছিলে বপন ;
মিটিয়ে ক্ষুধা, মিটিয়ে তৃষা করেছ লালন ।  
স্তরে স্তরে নিপুণ হাতে সাজিয়ে পাপড়ি -
নিখুঁত গোলাপ ধরার মাঝে থাকবে না তার জুড়ি ।  
কপাল কোণে কাজল টিপে, কড়ে আঙুল দাঁতে কেটে -  
কু-নজরের বিষের ছায়া, গণ্ডী দিত গড়ি ;  
মাগো, তোমার খবরদারী ।      
মা যারা নয়, ভাবত তারা নিছক বাড়াবাড়ি ।


সাত সুরেতে মহা-মিলন এক তারেতে বাঁধা
আল্লা, যীশু, কেষ্ট বোঝে এই জগতের ধাঁধা ।
সৃষ্টি-স্থিতি মহান বাণী হচ্ছে প্রতিধ্বনি
নির্ঝরিনী কণ্ঠসুধা আমার জননী।
তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে সুখের হাতছানি
তুমিই হলে জগৎ-মা্তা, আমার জননী ।  


বৃন্ত থেকে আলগা হল স্বপ্ন গোলাপ ;
লোভ, হিংসা স্বার্থ করলে জড় –  
প্রলোভনের হাত বাড়িয়ে, তুমি ভগবান !
নাড়ীর বাঁধন কেটে যখন আমি হলাম বড় ।
কার কাছে আজ প্রশ্ন রাখি বল ?


শিশু মনে ‘কু’ সঞ্চার পেয়ে মহাভয় –
ছিনিয়ে নিলে মায়ের ‘আমি’ অধিকারের জয় ।  
জননীকে দায়ী করে সুন্দর তুমি হলে -  
বুদ্ধিমানের বুদ্ধি নিলে কেড়ে ;
আহাম্মকে করুক স্তুতি যতই
আমার কাছে তুমি সৃষ্টি্ছাড়া -
মা জননী, হিরন্ময়ী, আমার বসুন্ধরা ।  


অপরূপে বিলীন হতে তোমার লোভী মন -
আনলে ডেকে মহাপ্রলয় আজই ;
করুণ চোখে ঊর্দ্ধ বাহু, অসহায়ের দল -
ধ্বংস লীলায় কাঁপা হাতে,
খালি পূজোর সাজি ।


অসন্তোষের মলিনতা উড়িয়ে হাওয়ায় মাগো,
উচ্চ শিরে দুহাত ভরে দাও বরাভয় -
ঝর্ণাধারায় হয় বরিষণ আশীষ বাণী ;
তোমার চরণ ছুঁয়ে মাগো ধন্য আমি ।


শক্তিধারক মহিমাময়ী নও ভগবান !
মায়ের ছোঁয়ায় আমার শরীর, আমি বলীয়ান ।                                            
চিরকালের চিরদিনের গর্ভধারিনী ;
আমার প্রিয়, সবার প্রিয় সোদর বনের রাণী ।
সে যে কেবল তুমি, তুমি আমার মা,
আমার বিশ্ব-জননী ।