শুনবে তোমরা ছোট্ট গল্প?
       কষ্ট হবে কিন্তু অল্প
তবে শোনো ---
   একটা দস্যি ছেলের কথা।


সেই ছোট্ট সময় হতে
ভয় ছিল না মোটে।
   যেমন কাঁদায় তেমন হাসায়
   তেমনি ছিল নিজের নেশায়।


এমন ছেলে আর ছিল না
তার তুলনা তাই মেলেনা।
      ছোট্ট সময় ছিল শান্ত
     দেখতে ছিল সৌম্যকান্ত।


কেউ ভাবেনি এমন হবে
শান্ত কেন দস্যি তবে?
     মায়ের প্রাণে নাই সুখ
   কখন দেখবে বাছার মুখ।  


তড়িৎ বেগে আসে ঘরে
ফুরুৎ করে যায় উড়ে।
    চঞ্চল মতি এমন ছেলে
  বলতো আর কোথা মেলে?


মা বলছে-
সারা দিন ঘুরে ঘুরে
কোথায় চললি আবার ওরে?
    বলছে হেকে ঐ হোথা
   যাব আমি আর কোথা?


দৌড়ে চলে পুকুর ঘাটে
প্রাণের বন্ধু কত জোটে।
   বসন খুলে অমনি ঝুপ
    দস্যি ছেলে দিল ডুব।


চলল যেন পাতালপুরী
নেই কেহ তাহার জুড়ী।
    স্থলে জলে তার তুলনা
    ঐ গাঁয়েতে আর মেলনা।


এমনি করে চলে খেলা
আনন্দেতে ভাসায় ভেলা।
    স্নান সেরে দৌড়ে আসে
    রান্না ঘরে মায়ের কাছে।
  
আঁচল ধরে আদর করে
বলছে মাকে দেওনা ওরে।
    খিদের জ্বালায় প্রাণ যায়
    তবু তুমি দাঁড়িয়ে হেথায়?


খিদে্র কথা শূনে মা –
দাঁড়িয়ে থাকতে আর পারেনা।
      আদর করে বুকে ধরে
    মায়ের তৃষ্ণা মেটে নারে।


ছোট্ট করে বকুনি দেয়
এত বেলায় ছিলি কোথায়?
     মায়ের ছলছল আঁখি পরে
     কচি হাতের সোহাগ ঝরে।


বসিয়ে মা নিজের কাছে
খাবার মেখে খাওয়ায় হেসে।
    তুই কি খোকা এমনি করে
     দুঃখ দিবি জীবন ভরে।


সারা দিনটা ভাবি বসে
কখন আসবি আমার কাছে?
     বলে এই তো আছি আমি
     মাগো তোমার কাছে বসে।


খোকা-কবেরে তুই বড় হবি?
গোমড়া মুখে বলছে মা-
মোর জ্বালা তুই বুঝবি না।
     মিষ্টি হেসে বলে খোকা
     তুমি মাগো আচ্ছা বোকা।


আমি যদি বড় হই
তোমার আদর পাবো কই?
     মা অমনি বকুনির ছলে
     হামি খায় তার কপোলে।
মাগো-
চিরদিন কি থাকবি কাছে
ওই ভালবেসে আমার পাশে?

শুনি সবাই নাকি চলে যায়
বড় হলে ওঁই কোথায়?
    আর ফেরে না এই দেশেতে
     আদর করতে এই বেশেতে?


আবার-
দস্যি ছেলে বলে হেসে
আদর করে ভালবেসে।


মাগো-আমি যদি চলে যাই
আমার আদর পাবে ভাই।
     তার দুঃখ থাকবেনা আর
     আমি চলে যাব প্রপার।
শুনে-
মায়ের প্রাণ কেঁপে ওঠে
কাঁপন ধরায় হ্রদয় তটে।
      ওরে শত্রু বালাই ষাট
       দিসনা আমায় এমন পাঠ।


আদর করে জড়িয়ে গলা
মায়ের বুকে জাগায় দোলা।
     এই বলে সে ছুটে যায়
     আপন পথে নিজের গাঁয়।


খেলায় মেতে ছুটোছুটি
করে হোথায় হুটোপুটি।
    এমনি করে দিন চলে যায়
    আপন জনের ভালোবাসায়।


কোথা থেকে কি যে হলো
আনন্দের দিন ফুরিয়ে এলো।


একদিন বলে সে মায়ের কাছে
মা ছিল তার দাওয়ায় বসে।
   মগো-শরীরটা মোর ভালো নয়
      আমি এখণ যাবো কোথায়?


গায়ে হাত দিয়ে দেখে মা
তুই কোথাও যাবি না।
      জ্বর হয়েছে থাকবি বসে
     এই পিরীটায় আমার কাছে।


মা ভাবলো মনে মনে
খেলবে বাছা আমার সনে।


ছোট্ট সময় কোলে কোলে
হামি খেতো দুলে দুলে।
    পুরানো দিন ফিরে পাবার আশায়
     মা আনন্দ পায় এই নিরাশায়।


রাত্রি বেলা জ্বরের ঘোরে
বলছে মাকে জাপটে ধরে।
     আমি কোথাও যাব না
      মাগো ওদের বলো না।


রৌদ্র জলে ভিজে ভিজে
দস্যি ছেলের হলো কি যে?
    এলো ডাক্তার বদ্যি কবিরাজ
     শুধুই পয়সা দেওয়াই হলো কাজ।


যম মানুষের টানাটানি
সবাই শোনায় কত বানী।
     কেঁপে ওঠে মায়ের হৃদয়
     যেন খোকার কথা সত্যি না হয়।

ডাকছে মা তাঁর ভগবানে
কোথায় আছ কোনখানে?
    এই বিপদকালে দেখা দিয়ে
    খোকাকে আমার দেও ফিরিয়ে।


রাত্রি পেরিয়ে দিন এলো
     আর দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা;
ক্রমে ক্রমে দস্যি ছেলের
      ওঁই শ্বাস বহিছে মন্দা।


জ্বরের ঘোরে ডাকছে মাকে
      মাগো তুই কাছে আয়;
আমার বেলা শেষ হয়ে যায়
  সন্ধ্যা তারা ডাকছে আমায়।


খেলার খেলা শেষ করে মা
চললাম আমি আর দাকিস না।
      আমার কথা ভুলে গিয়ে
       থাকিস মাগো শান্ত হয়ে।


যদি আমার কথা মনে হয়
দেখতে পাবি সন্ধ্যা তারায়।
      
অকাল সন্ধ্যা নেমে এলো
খোকার জীবন প্রদীপ নিভে গেল
      ফিরবে না সে আর হেথায়
      দিতে শান্তনা মায়ের ব্যথায়।


কোথায় গেলো দস্যি ছেলে
নীল আকাশে হাওয়ায় মিলে।
    থাকলো না তাঁর প্রাণের রেশ
     আমার গল্প বলা হলো শেষ।


ইং ১৪ই মার্চ ১৯৯৪,
শিলবারি আসাম    ২০৭৭, ১/১৩২, ২৩/০৭/২০২৩