কার্তিকের প্রায় শেষ, হালকা কুয়াশার চাদরে দূরের সবুজ আবছা দেখায়
নিধি কাছারির সদর দরজা খুলে দেখতে পায় দখিনের গাঙে খড়ের নৌকো যায়  
বুঝতে পারে রাতের গনে নদী কানায় কানায়, গলা খাঁকারির শব্দে ফিরে তাকায়
দেখে ঝোড়ো মাঝি আরামে ঠেস দিয়ে বসে আছে একটু তফাতে খড়ের গাদায়  
মধ্য তিরিশের মেদ হীন শরীর ঝাঁকড়া চুল, যেন কালো পাথরে খোদাই করা সাজে    
নিধি গিয়ে বলে, আরে ঝড়ো কখন এলে ? বাবুর ঊঠতে একটু দেরী আছে
ঝোড়ো বলে তা হোক, জোয়ারের চরে জাল মেরে চলে এলুম, আর কাজ নি হাতে
রাতে গাং সাঁতরে মহারাজ এয়েছেলো , তাড়া-তুড়ি দে তাইড়ে দিচি, ঘুম হয়নে রাতে
নিধি বলে হুঁ, তোমার মোষ দুটো গোইলে থাকে তো,  ঐ জন্যি লোভে লোভে
সে কী নদীতে নেমে ? না না ঐ পুবের জঙ্গল পানে, ও গাং পার হয়ে যাবে
ঝোড়ো;  তুমি না হয় সেরেস্তায় এসে বসো, বাবু উঠলে বলব  তোমার কথা
নাগো বাপু, একেনেই ভালো আচি, সেরেস্তায় তো বেঞ্চিতে পা-ঝুলিয়ে থাকা।  


হরি, কাস্তে আর এক তাড়া কলার পেটো হাতে উলু পাড়ের দিকে যায়
ঝোড়ো বলে কে যাও বাপু, হরি ঘাড় ঘোরায় ; দুজনের চোখা-চোখি হয়  
হরি বলে উলু কাটতে যাচ্ছি; হূঁ তা বুঝলুম, ঘর কোতায়;  আগে তো দেকিনি
নতুন নাকি ! হরি বলে এই হপ্তা খানেক হল এইচি, ঘর বেঁধে উঠতে পারিনি
নিধি সদর থেকে ডাক দেয়,  ঝোড়ো... ও ঝোড়ো, বাবু এয়েচে, এস সেরেস্তায়
ঝোড়ো উঠে দাঁড়ায়, বলে আচ্চা বাপু কতা হবে পরে, ডাক এয়েচে যেতে হয়
হরি উলু পাড়ে যায়, দেখে কাটা উলু গুলো বেশ নরম শিশিরে;  বাঁধতে মনস্ত করে    
হটাত চমকে উঠে দেখে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে গোখরো তার কয়েক হাত দূরে
পিছিয়ে আসে হরি , হাত তালি দেয়, লাঠির শব্দ করে, তবুও সে না নড়েচড়ে
সাহসে ভর করে দু-পা এগিয়ে লক্ষ করে, বুঝতে পারে জ্বরেচে খোলস ছেড়ে    
খানিক দূর থেকে খেয়াল রেখে, হরি নরম  উলুর বিচালি বাঁধতে শুরু করে  
প্রায় দেড়পো বেলায় নিধি আসে সঙ্গে ঝোড়ো,  ডাক দেয় মিতে কতটা হল  
হরি হাতের টা বেঁধে রেখে এগিয়ে যায়, নিধি বলে ঝোড়ো;  চিনতে পারলে  
খুব খাটিয়ে; মানুষও ভালো, এ আমার মিতে,  হরির কাঁধে হাত রেখে বলে  
হরি সকালের কথা বলে, নিধি বলে আমারে ডাকতে, তা সে কোন দিকে গেল    
দেখিনি মিতে কজে ছিলুম, মনে হয় রোদ চড়া হতে কোনো গত্তে আচ্ছয় নিল।  


ঝোড়ো বলে তোমরা গপ্প কর, আমি যাই, নিধি;  তোমার মিতেরে নে এস ঘরে  
হরি থাকে বলাইয়ের ঘরে ! তা মিতেরে কোতায় ভিটে দিলে বাবু, গাং ধারে !  
নিধি বলে না , ঐ গুনোর ভিটের কাছে মিঠে খালের এপারে, রাউতদের পাশে
হুঁ , খারাপ নয় মাঝের ঘেরি, খেটে খুটে করে নিলে শিগগির ফসল ফলবে চাষে
নিধি বলে , মিতে কি আজ কাজ শেষ করে যাবে !  হ্যাঁ মিতে তাই ভাবচি  
তিনপো বেলায় হয়ে যাবে, একন গেলি কাজ নষ্ট, সেই বসে থাকব মিচিমিচি
কাজ এগিয়ে রাকি, কাস্তে হাতে হরি এগিয়ে যায়, কাজ শুরু করে এক মনে
পাকা হাতে কাস্তে চলে, গুণ গুনিয়ে গান ধরে, ভবে একা দাও দেখা, রাখ চরণে।

সোনারপুর
১১/৭/২০২০