দৈত্যাকার কালো ইঞ্জিনের জলতেষ্টা পেলে থামে, খানিক বাদে আবার চলে, জানালায় তাকিয়ে জয়
ষ্টেশনের পর ষ্টেশন পার হয় রেলগাড়ি, কেউ ওঠে কেউ নামে, সকালের ঘটনায় মনে একটু ভয়
বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে, হটাত ধড়মড়িয়ে ঘুম ভাঙে তার,  ভারী গলার ডাকে
কালো পোশাকের একজন লোক হাত পেতে তার দিকে, নিধির ফতুয়া খামচে টেনে জাগায় তাকে
নিধি বুঝতে পেরে ধুতির খুঁটে খোঁজে, পরে ফতুয়ার পকেট হাতড়ে বের করে দুটো শক্ত কাগচ
লোকটা একটা সাঁড়াশি দিয়ে কোনা কেটে দেয়; চলে যায় অন্যদিকে, বুঝতে পারেনা জয়ের মগজ  
নিধি জানালায় তাকিয়ে আবার চোখ বোজে, জয় চোখ কচলায় ভাবে আর কতক্ষন, কতটা বাকি
ঝন ঝন শব্দে নিধির ঘুম ভাঙে গাড়ী দাঁড়ায় অনেক উঁচু এক ষ্টেশনে, জয় জানালায় দেয় উঁকি
ভাবে বাড়ি পৌঁছে কাকে কাকে শোনাবে সে কলকাতার গল্প, যেটুকু জেনেছে সে এই কদিনে
নিধি বলে কিরে খিদে পাচ্ছে নাকি! মাতলায় পৌঁছে কালো উড়ের হোটেলে ভাত খাবো দুজনে।      


মাঝ বেলায় মাতলা পৌঁছায় গাড়ী, দুজনেই চলে তাড়াতাড়ি, ভাত খেয়ে ঘর যেতে বেলা যাবে
ঝড়োর নৌকো আসবে না, কটা জিনিষ কিনে খুঁজে পেতে চলতি নৌকোয় যেতে হবে
খাওয়া সেরে নৌকো ঘাটে যায়, আড় পারের মাঝি মতি মিয়াঁ হাঁক দেয় ও নিধি যাবে নাকি
এসো এসো এখনি ছেড়ে যাবো এই ভাটির সুজনে, দেরি করনি বাপু বেলার খুব নেই বাকি
দুজনে ছুটে যায় উঠে বসে ছই এর নিচে, মতি মিয়াঁ পাল দেয় ভাটির টানে নৌকো পায় গতি
হাল ধরে মতির ছেলে ফকির আলি হাঁকে বদর বদর, ওদের কাছে এসে গল্প করে মতি
পুরন্দর পেরিয়ে নৌকো এগিয়ে চলে পালে তর তরিয়ে, মতি বলে বাতাসে বেগ আছে বেশ
মনেহয় দাঁড় লাগবিনি পালেই হবে, ঘাটে লাগবো বেলা ডোবার আগে, চলে নানা গপ্পর রেশ  
মতি বলে বাবু আসবে কবে ? নিধি বলে সে বাবু জানে, কি করে জানবো বাবুর মনের খবর
দেখ বাপু আমি হলুম ফরমাইশের লোক, যা বলে তাই জানি,  বেশী জানে নায়েব মাতব্বর  
মতি বলে গেছলুম তোদের সেরেস্তায় নায়েব কে তো দেখলুমনি, দেখলুম ঝড়ো আছে বসে
বাবু যদি খানিক জমি দিত করে নিতুম ঠিকঠাক, ঐ গহর মিয়াঁর লাগোয়া ক্ষেতের পাশে।  

নিধি বলে ঐ জমিতে এখন হবে না চাষ, চাষের জন্যি নয় গো বাপু, বড় বেটাটার সাদি
একটা ঘর চাই, পুকুর কেটে এক পাশে থাকার মতন,  বাবু এলে বোলব,  দেয় যদি
না হলি চর আছে দেদার ওকেনেই দেব বেঁধে, ভাই ভাই এক ঘরে থাকলি ঝগড়া ঝাটি  
তার চেয়ে আলাদা ভালো, যে যার বউ নে আলাদা থাক, যে যার দাঁড় মার পুতে খুঁটি
তা তোমারা কলকেতা দেখলে কেমন, শুনিচি নাইট জ্বলে, বাবুর ঘরে অনেক মানুষ বুঝি !
নিধি মাথা নেড়ে সায় দেয়,  দুই ছেলে, মা, আরো অনেক আছে কারে রেখে কারে খুঁজি।    

সোনারপুর
২৯/০৮/২০২২