খোকা, একটু কষ্ট করে চালিয়ে নিস বাবা
সময়টা ঠিক নেইরে, ভালো থাকিস
দু-একদিন পরে পাঠাচ্ছি,  সোনা রাগ করিস না
ইনল্যান্ড খামে দুই লাইনের একটা চিঠি।।


কেউ জানতো না, সদ্য কলেজের গন্ডীতে পা রাখা
সমবয়সী ছেলেটি কেন এত চুপচাপ
উচ্ছ্বাস নেই কোন ব্যাপারে, কথাও কম বলে
নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা, অন্যদের থেকে
কলেজে আসা, আর ক্লাশ শেষে চুপচাপ বেরিয়ে পড়া।।


মাঝে সাজে বাধ্য হোয়েই বলে, ভীষন কাজ আছে রে
পরে কোন দিন থাকব তোদের সাথে, আজ যেতে দে।।


এ ভাবেই কাটে দিন, মাস, বছর, তবুও নিরুত্তাপ
সব কিছুতেই নির্বাক স্রোতা সে, বিষন্নতায় ভরা দিন
জানা যায় ওর মা অসুস্থ, কেউ নেই দেখার, একা থাকে
ও থাকে শহর তলীর একটা মেসে, দু একটা ছাত্র পড়ায়  
বাকিটা মা দেয়, থাকে দূরে কোন এক ছোট্ট শহরে।।


ও ভাবে এই বিশাল শহরে, কেই বা কার খবর রাখে
তবুও জানা হয়ে যায়, কোন এক অভিভাকের কাছে
নিজের ছেলেকে বলে, হ্যাঁরে , ঐ ছেলেটি তোদের সাথে...
হ্যাঁ বাবা, ও খুব ভালো ছেলে, আমার বিভাগের, অর্ঘ বোস
আচ্ছা আজ চলি, কদিন পরে, মোচড় দিয়ে ওঠে বুক টা।।


আনমনে ভাবে বিল্ল বোস, এ কাকে দেখলাম, এতো প্রতিচ্ছবি
বার বার সিগারেট ধরায়, ভাবে, দেখা করবে! মানসী...


স্মৃতিরা পিছু নেয়,  অভিভাবক তখন ছাত্র ছিলেন
সুরমা বিজাতীয়, মানেনি বাড়ী, ততদিনে অর্ঘ বেড়েছে জঠরে
সালিশী সভা, শয়তানী বিধান, আশা-ভরসা-প্রেম সব শেষ
উপায় ছিলনা, কাজের খোঁজে পরিচিত দিদির সাথে, পথে নেমেছে  
তারপর ! নিদ্রাহীন রাত, তীব্র যন্ত্রনা বুকে নিয়ে বাঁচার লড়াই,  
প্রতিদিন, মাস, বছর, দশক জুড়ে প্রেমের অর্ঘ আঁকড়ে ।।


সুরমা ভাবে, অর্ঘ নিশ্চই পারবে, মুছে দিতে যুগ যুগান্তের সামাজিক ব্যাধি ,
অন্তত দাগ রেখে যাবে  জাতের দেওয়ালে সত্যের রঙে
সভ্যতার মিত্র, মানবতার মিত্র, আগে মানুষ নয় জাতি।।