জানো কবি, এক সময় আমারো ভীষণ ইচ্ছে হতো পদ্য লেখার  
রাত জেগে জেগে দেখতাম জোনাকিদের ব্যস্ততা সবুজাভ আলোয়  
ঘরের চাল গলে অনধিকার প্রবেশে দুষ্টু চাঁদ বিছানা ভিজিয়ে যেত
ভালো লাগত না যে এমন নয় নিস্তব্ধ রাতের বুকে তারাদের খুনসুটি
বাতাসের ফিসফাস, ক্লান্ত রাতের শ্বাস, অশরীরী ছায়া,হুতুমের হুটোপুটি
কিছু সময় অস্থায়ী মৃত্যুর সাথে চলে যেতাম কালের অনন্ত অন্ধকারে।


জানো কবি, আমারো ইচ্ছে হতো পদ্য লিখতে জীবনের ভালোলাগা নিয়ে  
কিন্তু সে যে ভীষণ অস্থায়ী, ক্ষুধার পৃথিবীতে সে হেরে যেত প্রতিদিন  
পাক-পাখালির ডাকে আবার একটা দুঃসহ দিনের গন্ধ ভেসে আসত মনে  
অবকাশ হারিয়ে যেত যার যেমন – ক্ষুধার নিবৃতি খাল ভর্তি শাপলার ডাকে  
অথবা বিগত সন্ধ্যায় নিরীহ পুঁটির টোপ দেওয়া জাওলায় ঝুলত দিনের আশ  
দড়িতে ঝোলানো ছেঁড়া গামছা নিয়ে দৌড়, বেসামাল করে দিত মন  
কোমরের ব্যথায় শরীর ককিয়ে উঠলেও সময় হত না একটুও ভাবার
যাপনের উপকরণ যোগাড়ে জোনাকের ব্যস্ততায় কেটে যেত সময় আমার।      


জানো কবি, আমারো ইচ্ছে হত পদ্য লিখতে মানুষের সমাজের সাম্যের ভাবনায়
কখন যেন সব হারিয়ে গেল অজান্তেই, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্রমে
কৈশোর যৌবনের সন্ধিকাল বড় দুঃসহ সে সময়, সবাই বলত বাপের মাথা ধরা
শিশির ভেজা মাঠে হাতে চকচকে কাস্তে, পরের জমিতে মজুরের কাজে সারা বেলা
পদ্য লেখার শব্দ গুলো ধানের গোচে আর কাস্তের সংঘর্ষেই হয়ে উঠত বাস্তব খেলা
অথবা মাথায় মোট নিয়ে ছুটে চলা, ঘামে ভেজা শরীর শুষে নিত সব ভাবনার ভাষা
সংসার থাকত অপেক্ষায় খিদে মেটাতে, ঘামে ভেজা চালে গরম ভাতের আশায়।        


সোনারপুর
০২/১১/২০২২