দিনগুলো খুব ছোট হয়ে আসছে আজকাল,
চেনা গন্ডি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে-
চোখ পড়ে আবছায়া অলিগলি, খানাখন্দ বা  
পিচ ঢালা পথে ঐ সুদূরের পানে।
ঐ মেঘ ঘেঁষে পাহাড়ের কোলে-
নির্জনে একা চলা শুধু, চলি নিরবধি!
সামনে অবারিত মাঠ - খোলা প্রান্তর ধুধু!
শাল কেতকী মহুয়ার ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জনে!
কিংবা সেই রোদেলা উঠানে –
যেখানে ছিল প্রাণ চাঞ্চল্য,
চড়ুই পাখির খুনসুঁটি – আদুরে আলাপ!
পরম আনন্দে বসন্তের রোদে অবগাহন-
নবীন ভালবাসার বন্ধনে, সূর্য স্নানে মেতে!
অতীত! সবই এখন অতীত, বয়ে চলা স্মৃতি!
তবে কি ভবিষ্যতের চক্রব্যুহে অসহায় আত্মসমর্পণ!
তারপর – পলে পলে কেটে যায় কতো বেলা!
অবেলার বৃথা আলাপনে! বিনা‌ নিবেদনে।
থেমে যায় কত জীবন মলিনতার ধূলো গলে!
উদাসী চৈতালী হাওয়ায় - ঐ বনানীর দিগন্তে!
ধূসর গোধুলীতে! সঙ্গোপনে কিংবা
ঝরে পড়া পাতাদের ভীড়ে ক্রমাগত হারিয়ে যাওয়া!
মায়াহীন পথে! অবহেলার তীর বুকে নিয়ে-
শুকনো পাতার খসখসে কোলাহলে!
ছুটে চলা! ভীষণ একা! স্বপ্নের অবসরে।
কালের অমোঘ নিয়মে বাঁধা জীবনের চৌহদ্দি!
বালুকা বেলা হতে সাঁঝের বেলা –
ব্যাস! এটুকুই তো জীবন, ক্ষুদ্র অতি।
ঐ ঘাটে - কেউ কারো নয় আপন!
কারো কিছুই যায় আসে না অন্যের পতনে!
কালের ও কিছু হারাবার নেই তাতে-
খসে পড়া তারাদের ভিড়ে! নীরব দর্শক।
পুরোনো পথে নতুনেরা তো হাঁটবেই,
চরম বাস্তবতা। মেনে নিতে হবে চির সত্য।
ঐ দুর পাহাড়ের বাতিঘরে আলো-ছায়া ঠেলে,
কেউ বুঝিবা চিৎকার করে শুধোয় প্রাণপনে-
“পথিক তুমি তো পথ হারিয়েছো, পিছন ফিরে যাও! অতীতের পিছু পিছু হেঁটে চলো”,
ক্ষণিক বিরতি, তারপর আবার শুধায়, আবার-
কান পেতে শুনি ঐ মধুর অমৃত বাণী।
হয়তো তা হতে পারে সকলই মনের ভুল,
জীবনের হাতছানি কেবল, হতেও তো পারে।
ঠিক যেন মোহভঙ্গ কোন উদভ্রান্ত পথিক,
ক্লান্তি ঘিরে ধরা জীবন, ভারী অবসন্ন!
এগোবার শক্তিও কম! আচ্ছন্ন আবেশে।
হাতের চামড়ায় চকিতে চিমটি কাটি!
উফ্-  ভীষণ লেগেছে!
ঐ পথ তো এখনো আসে নাই জীবনে!
এতো সত্যি নয়। মনের ভাবনা শুধু!
চোখ বুজলেই ঘিরে ধরা আচ্ছন্নতা - বেরঙিন।
এখনো তো আকুল হৃদয়ে বয়ে চলে নদী!
স্নিগ্ধতায় চাদরে - কুলু কুলু সুরে,
কান পাতলে শুনতে পাই - উত্তাল ঢেউ,
ছলাত ছলাত ছল, অশান্ত হৃদয়ের দুকূলে -
আছড়ে পড়ে তা, বাঁধ ভাঙ্গার উচ্ছাসে!
হৃদয়ের একতারা এখনো তো সুর তোলে!
গান গায়, সুখ দুঃখের গান বাঁধে! জোৎস্নার আলোতে - বড্ড মায়া ভরা নয়নে!
হৃদয়ের শান বাঁধানো ঘাটে প্রাণের অভয়ারণ্য।
এখনো ছন্দরা ভীড় করে কবিতার পাতা ছুঁয়ে।
রাত জেগে চলে শব্দের মাধুকরি,
রোজ ফেরি করে হেথা কবিতার ঝুড়ি নিয়ে।
পানকৌড়িরা উড়ে চলে - ইচ্ছে ডানা মেলে,
মাছরাঙারা ডুবো জলে শিকার‌ ধরে!
কেন তবে এই বিবাগী সময়, উদাসীন্য জীবন?
হতে পারে রঙিন ভুবনে, সাতটি রঙে রাঙা-
আবির মাখানো সুখে - জীবনের কোলাহলে।
আনন্দের ফল্গুধারা নিয়ে ভরা বসন্তে,
কোকিল দোয়েলের কলতানে-
কুহকিণী চাঁদনী রাতের কোমল ছোঁয়ায়!
তব চোখের নীড়ে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখি,
প্রাণের আরাধ্য আবদারে!
এই মন ফাগুনে- পলাশ শিমুলে রাঙা বনে!
কুঞ্জছায়ায় ঘেরা কৃষ্ণচূড়ার লাল প্রাঙ্গনে!
একান্তে দোঁহারে – রাত জাগা ভোরে!
ভয়! পাছে ঘুমিয়ে পড়ি, পুনরায় ছুটে চলা।
একাকী - নীরবে নিভৃতে, দুঃস্বপ্নের রাতে!