ঐ যে সেদিন ছিল, মঞ্চের প্রেমখেলার শেষ দিন-
পড়েছিল মেয়েটি শেষ দুপুরে, একনিষ্ঠ গুণমুগ্ধ প্রেমিকের জন্য একটি শাড়ী রঙীন।
কিছু চুড়িও ছিল হাতে-
প্রেমময় সেই যুবক যে ঠায় বসে থাকত, তাদের তিন নং দেড়তলা বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে।
আশা ছিল-
ছেলেটির যদি চোখ পড়ে, দেড়তলার জানলা ভেঙ্গে যদি নিয়ে যায়, বাবার ঠিক করা
একজন সরকারী অধিকারিকে বিয়ে করার হাত থেকে যদি বাঁচায়।


কিন্তু... হায়!
চায়ের ভাঁড় যেমন করে সরিয়ে নেয়,
এক চুমো খেয়ে;
প্রেমিকটি তেমন, কেবল চোখের ইশারাতেই শেষদিন প্রেম নিবেদন করে।
মেয়েটির সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে-


জানে সে পরেরদিন কলেজে যাওয়ার পথে, একটি চিরকুট, ঐ ঠাম্নাদের সময়ের চায়ের দোকানদার কাকুর কাছে রাখা থাকবে।
যার বিনময়ে, সে একটা কড়া চিঠি ঐ মজনুটাকে লিখবে।


তাই হল-
চিরকুটের বদলে চিঠি বিনময়ের পালা-
অপ্রিয় সত্যিকথা, খানিক রাগ, দুঃখ, অভিমান দিয়ে লেখা চিঠি।
সকালে ঐ চায়ের দোকানের কাকুর হাত থেকে শেষবারের মত, ঐ অজানা, অচেনা প্রথম প্রেমিকের হাতে। মেয়েটি কলেজ যাওয়ার পথেই দিল।


কলেজের সেদিন শেষ পরীক্ষা ছিল, অর্থনীতি নিয়ে, কেশবতী শ্যামলা কাজল চোখের অভিমানী, সেই শেষ চিন্তাভাবনা করেছিল।


চিঠি খুলে দেখে-
ছেলেটি লিখছে, কিছু যদি অপেক্ষা কর, আগামী দুবছর পরে হাতে সুই, ছুরি,কাটা ধরবো। মেয়েটি সেদিন প্রথম জানতে পারে, তাঁর প্রেমিক ভবিষ্যতে কি হতে চাইছে -
হা ভগবান-  "তবে কি ছেলেটি হোটেলের রাঁধুনী বা সেলাই মাষ্টার হবে!"


যা বাবা!
সব গেল ভেস্তে, মেয়েটি জানে,  
বাবা তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধিকারি ছাড়া আর কোথাও দেবে না বিয়ে।
এতদিন কেবল চিরকুটে, দুজনের শুধু ভাব বিনিময় চলেছিল-
সেদিন সত্যি জেনে, মেয়েটির মাথায়, আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।


ভালো হয়েছে, মেয়েটি চিঠিতে নিজের বিয়ের খবর লিখে দিয়েছিল, ঐ চায়ের দোকানে বসা, তাঁর একান্ত গোপন প্রেমিকের জন্য। যে কিনা দুবছর পরে সুই, ছুরি, কাটা ধরতে চলেছে।


কিন্তু- মন যেন কেমন, কেমন করছিল। কি যেন হারিয়ে যাচ্ছিল! শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল - কেন!
সেই থেকে মেয়েটির বুকের বামপাশটা সব সময়ের জন্য বেশ চিনচিন করত।


আজ কত বছর হল, কে জানে পৈতৃক বাড়িটাও দাদারা বিক্রি করে দিয়েছে খদ্দের ডেকে।


কিন্তু...
হাসপাতালে যখন ডাক্তারা বলল,
মেয়েটির রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে- খুব সম্ভবত কিছুদিন থাকবে পৃথিবীতে।
মেয়েটি রিপোর্ট দেখিয়ে, ড্রাইভারকে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে ঐ চায়ের দোকান আর পুরানো বাড়ির সামনে নিয়ে যেতে বলে।


সেখানে গিয়ে দেখে, মুঠোফোন হাতে ঐ তাঁর অজ্ঞাত প্রেমিকের মত আরেকটি ছোট ছেলে, তাঁদের দেড়তলার জানলার দিকে তাকিয়ে আছে। খানিক বাদে আরেকটি মেয়ে চুল আচড়াতে আসে জানালার পাশে।


হায় রে, নাটক এখনও চলছে আর চলবে...
কিন্তু সমাপ্তি কি সব মিষ্টি প্রেমের একই হবে?
কখনো কি সরল প্রেমের মিলন হবে না পৃথিবীর বুকে -উচ্ছল আনন্দে!
ভাবতেই থাকে, সেই এককালীন জানালার মেয়েটি, নতুন চিত্রনাট্যের সামনে-  চল্লিশের শেষে এসে।


হঠাৎ একটি হোনডা সিটি সোনালী রঙের ;  ডাক্তারের লাঠি, সাপ লাগানো- সজোরে এসে একটুর জন্য ধাক্কা না মেরে, থামে।
একি, ঐ গাড়ির কাচ নামিয়ে অতীতের তাঁর একনিষ্ঠ প্রেমিক, দামী জুতো, জামা পড়ে নামে। মুখে একটু বয়েস,কানের পাশে সাদা চুলের রেশ। বাকি চোখ দুটো সেই রকম আছে, যেমন দেখেছিল সেই শেষ দুপুরে  !


চায়ের দোকানের কাকু বদলেছে, চরিত্র বদলেছে -
কিন্তু সেই দুপুরে;
ঐ মুহূর্তে দুজন একভাবে অতীতের খোঁজে তিন নং বাড়ি, চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছে; জীবনের শেষের বসন্তে।
কিছু হারিয়ে যাওয়া সময়ের টানে,
যখন আর কোন কিছু বদলানো যাবে না, সবাই জানে....


==============