একটি চিঠি পেলাম আমার স্বামীর ব্যাগে,
ভাবলাম খুব ডুবে, ডুবে জল খাচ্ছে-
খুলে দেখি লেখা আছে-
        ==================
  প্রিয়.......


ছিলাম তোমাকে ছুঁয়ে,বললে যে তুমি নতুন করে গড়বে পৃথিবীকে।আনন্দে ছিলাম তোমার হাতে আসবে, নতুন বিপ্লব!
বদলে যাবে রাস্তার লোকেদের ঘরবাড়ি, সব।


অনেক সন্ধ্যায় বৃষ্টি ভেজা পথে বের হয়ে দেখেছিলাম তোমার কত খ্যাতি। তুমি সেদিনও হাত দিয়ে, আমার পিঠ আগলে রেখেছিল। যেন আমি হারিয়ে না যাই জীবন থেকে; কেন এত ভয়েছিল, কে জানে!


আমিও পথে,তোমার সাথে গুটিগুটি পায়ে সাথে চলেছি। যেমনটি তুমি চেয়েছিলে, যেমন বলেছিলে, তেমনি সেজেছি!
কখনো তোমার সহচরী, কখনো তোমার
শয্যাসঙ্গী- কখনো তোমার স্ত্রীর সহচরী,কখনো তোমার প্রচারের কর্মী,কখনো তোমার ছেলের মাসি।
        
যা চেয়েছিলে, সব দিয়েছিলাম- আজ শেষে গ্লানিকর অতীত জানতে পেরে, যখন তোমার স্ত্রী, একটি জোড়ে চাপড়  মারলো। লোক দিয়ে বারিয়ে যেতে বলল- কই তুমি, সব চেয়ে দেখলে? মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল, সমাজের মহিলা উন্নয়নের সভাপতি হয়ে, যার বক্তৃতা আমাকে লিখতে বলেছিলে।


তুমি জানতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে,
বন্ধুর মত তোমার সমস্ত বৈধ, অবৈধ রাজনীতির কাজে, আমি ছিলাম তোমার সঙ্গী।
দুজনে কত স্বপ্ন সংস্করণের একসঙ্গে দেখেছি-
কেবল ঐ হতে পারিনি, তোমার অর্ধাঙ্গ রমণী। তুমিই তো বললে, বিয়ে করবে নিজের রাজনীতির আসন মজবুত করতে,
দলের নেতার মেয়ের সাথে।
তোমার উন্নতি হয় , আমি তাই তো চেয়েছি;
তাই নিজে হাতে, তোমার বিয়ের কাপড়,জামা বাজার করেছি।
কেবল সিঁদুর দানের সময়,
একটি ঘরে অন্ধকার করে কেঁদেছি!


শেষে কত রাত, বাইরের অধিবেশনে যখন গিয়েছি,
তুমি চেয়েছিলে আমার শরীর, আগের মত ; কিন্তু আমি সব সময় মানা করেছি।
কারণ আমি তোমার স্ত্রীকে নিজের হাতে, বাসরঘরে বসিয়ে এসেছি।


কিন্তু কি যে হল-  সে বিকেলে, আমাদের পুরোনো ছবি পেয়েছিল তোমার স্ত্রী দেখতে, তোমার লাল ডাইরির ভিতরে সম্ভবতঃ।
রেগে আত্মহারা হয়ে, প্রায় দৌড়ে এসে -
অফিস ঘরে ঢুকে আমার ডাকনাম,
যা দিয়েছিলে গোপনে ডাকার জন্য তুমি-
তাই বলে সম্বোধন করে,
চাপড় মেরে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে!


আমি পাগলিনীর মত ছুটে আসি,
ঐ বাড়ির থেকে- সেদিন শেষ দেখেছিলাম তোমাকে,
মুখ কালো করে নির্বাক হয়ে চলে গিয়েছিলে ঘর ছেড়ে-
আমি মাটির থেকে দেখেছিলাম,
তোমাকে দূরে চলে যেতে!


সেই শেষ, কিছুদিন পরে জানি তুমি হয়েছ,
পরে নেতা, মন্ত্রী- আরো কত কি!
রোজ টিভিতে তোমাকে খুঁজি।
তোমার ভাষণ শুনি, আর ভাবি এমন না,
অন্যরকম বলা উচিত ছিল-
তা যাইহোক, আর বড় হও-
আশা করি,
একটু ঐ স্বপ্ন যা দেখেছিলাম
দুইজনে যৌবনে মনে রেখো!
কিছু উন্নতি আমাদের গ্রামের জন্য, এখানকার স্কুল, জল, নল,
চাকরীর জন্যেও করো!


আমার খুব বড় অসুখ হয়েছে -
মরার আগে চিঠিটা ছেড়ে যাচ্ছি তাই,
আমার স্কুলের প্রথম ছাত্রের কাছে।
ও চিঠি পোস্ট করতে জানে, বা তোমার হাতে পৌছে দিয়ে আসবে।
শুনেছি তোমার স্ত্রীর চোখে ছানি পড়েছে-
আমার চোখ এই ষাট বছরেও একই আছে,
দান করছি তোমার স্ত্রীকে।


তাছাড়া ওর প্রতি দুঃখ হয়-
যখন ও ফোনে বলে, সেদিন -
তুমি প্রতি রাত্রিতে ওকে ছুঁয়ে আমার ডাকনামে তাকে ডাকতে;
যখনি মদের নেশায় রাতে শুতে।


শোন-  দুঃখ ঠিক বলা যাবে না,
একটু আনন্দও হয়েছিল শোনার পরে। আমার মনের মানুষের আমাকে মনে নেই হয়তো,  
তবুও আমার শরীর তো মনে করে, ডাকনামে!
এবার আমি দেখবো তোমাকে মন ভরে,
আমার চোখে পৃথিবী দেখো-
যা দেখতে পাও না, শীতাতপ ঘর, গাড়ি থেকে।


এখন চলি, অনেকদিন তোমার অপেক্ষায় চেয়েছিলাম, এখানকার অলিগলি।
রোজ ভোর পাঁচটার বাস, বা রাত সাতের বাস চেপে কত লোক এসেছে, অথচ এলে না তুমি।
তোমার, আমার বড় হওয়া গ্রাম-
আগলে পড়ে আছি, থাকব,
শেষ দিন আসা আগে পর্যন্ত !
দেখা হবে, পরের জন্মে-
যদি তাই বলে কিছু থাকে।


ওখানে আবার তোমার ঘুড়ি ধরবো,
তুমি উড়িয়ে যখন-তখন ভোঁকাট্টা করবে!
তোমাকে দিলাম আমার ভালোবাসাময় একটি জীবন- এ জন্মে!
যা আর কিছুদিন পরেই শেষ হবে!


ইতি- অভাগী
     মীরা
=============================
চিঠি পড়ে, কেঁদে চলি,  
নিজের মত করে বুঝেছি মীরার দুঃখ-
আমার স্বামী এসে জড়িয়ে ধরে,
আদর করে সব কিছু খুলে বলে।


ঐ চিঠিটি, মীরা দিদিমনির মৃত্যুর পরেই শহরে নিয়ে যায় সে-
জানতে পারে-
ঐ মন্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনাতে, দিদিমনির মৃত্যু দিনে ।


তবুও দিদিমনির চক্ষুদানের কথা,
বলে সবাইকে- সবাই খুশি হয়ে,
আমার স্বামীর জন্য একটি মাসিক বৃতি ঘোষণা করে।
আর তাই দিয়ে সে তার ডাক্তারীর
পড়াশোনা করে। চিঠিটি যত্ন করে, আশীর্বাদ ভেবে সে নিজের পাশে রাখে।


সত্যি কয়েকজন যারা ভালোবাসতে পারে,
মারা যাওয়ার পরেও , অমর হয়ে যায়, আমাদের মনের মধ্যে, চিরজীবনের জন্যে।
===============================