আজকে আরও তিনটে কবিতার অনুবাদ দিলাম। এখন এই চীনা কবিতার অনুবাদ করাটা একটা নেশার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনই একটু সময় পাই, তখনই খাতা কলম নিয়ে বসে যাই অনুবাদ করতে। কিন্তু একটা কথা বলছি, বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার এই অনুবাদ করা। প্রচুর সময় লাগে। তবুও আপনাদের যদি ভালো লাগে তাহলে এই কাজে আমার আনন্দ, কোন কষ্ট নেই। ভালো থাকবেন সবাই।


চতুর্থ কবিতা:


                             সি চুনের কান্না


১১০ খ্রিষ্টাব্দে, চীন দেশের এক ছোট রাজ্যের রাজকন্যা ছিলেন সি চুন। রাজনৈতিক কারণে চীনের বাইরে উ সুণ রাজ্যের রাজা, কুন মো-র সাথে তার বিবাহ দেওয়া হয়। বিবাহের পূর্বে সি চুন তার হবু স্বামীকে দেখেননি। উ সুণে পৌছে দেখলেন কুন মো বৃদ্ধ এবং ভীষণ রকম সুরাশক্ত। তাছাড়া, কুন মো বছরে মাত্র একবার বা দুবার সি চুনের সাথে দেখা করতেন। তখন তারা দুজনে একসাথে সুরা পান করতেন। একে অপরের ভাষা না জানায় তাদের পক্ষে বার্তালাপ করা সম্ভব ছিল না।


                         আমার বিবাহ হয়েছে
                         পৃথিবীর অপর প্রান্তে:
              আমাকে পাঠানো হয়েছে এই অচেনা স্থানে,
                         উ সুনের রাজার কাছে।
                 ছোট্ট একটা তাবুই আমার প্রাসাদ,
                    দেওয়াল হাওয়ায় দোলায়মান;
                       কাঁচা মাংস আমার খাদ্য
                          আর একটু খানি দুধ।
              শুধু, আমার নিজের দেশের কথা ভাবি
                           ভারাক্রান্ত হৃদয়।
                   আহা, যদি পাখি হতে পারতাম
          তাহলে এখুনি উড়ে যেতাম আমার নিজের দেশে!



পঞ্চম কবিতা:


                                    চিঠি ৩


চিন চিয়া (প্রথম শতক) তৎকালীন সম্রাটের ডাকে চীনের রাজধানীতে যেতে বাধ্য হন। তখন ওনার স্ত্রী তার পিতৃগৃহে, অসুস্থ। যাত্রার পূর্বে তাই তাকে বিদায় জানাতে পারেননি চিন চিয়া। তার স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে তিনি তিনটি কবিতা লিখে পাঠিয়ে ছিলেন। এটি সেই তিনটি কবিতার শেষ কবিতা।  


               গাড়োয়ান তৈরি হয়ে আছে বেশ কিছুক্ষন:
                 ঘণ্টাটাও জানান দিচ্ছে যাত্রা আসন্ন।
              এই ভোরে আমি শুরু করব আমার পথ চলা,
                       বহুদূর, বহুদূরের যাত্রাপথ।
                 পিছন ফিরে ফাঁকা ঘরটার দিকে দেখি,
                 হঠাৎ মনে হয়, তুমি যেন বসে আছো।
                      এই যাত্রার শেষ কোথায়,
               হাজারও দুঃখ নিয়ে আমার পথ চলার শুরু।
             কি করে তোমাকে বলি সেই সব মনের কথা?
             কি করে বোঝাই, তোমায় কতটা ভালোবাসি?
             মাথার ফিতে দুর্লভ হয় তোমার চুলের ছোঁয়ায়,
                       আয়নাটাও মুগ্ধ তোমার রুপে,
                      গোলাপটাও মূর্ছা তোমার সুবাসে,
              আর কত কবিই না গান গায় তোমায় নিয়ে।
                    তুমি আমার জন্য অনেক করেছো
                   জানিনা কি করে ফেরাব এই ঋণ!
          আমি জানি এই লেখা হয়তো কিছুই না তার কাছে
            তবুও তোমায় জানিয়ে গেলাম আমার ভালবাসা।


ষষ্ঠ কবিতা:


                        লো-ইয়াঙের ধ্বংসাবশেষ


নিম্ন লিখিত কবিতাটি সাও ছি (১৯২-২৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) রচনা করেছিলেন। তিনি রাজা সাও সাও-এর অতি প্রিয় তৃতীয় সন্তান। সাও ছি তার ছেলেবেলার অনেকটা সময়ই লো-ইয়াঙ শহরে কাটিয়েছিলেন। এই কবিতাটি তিনি সেই লো-ইয়াঙ শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখে মনের দুঃখে লিখেছিলেন। রাজা টুং চো আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেন এই লো-ইয়াঙ শহরটাকে।  



                    পেং ম্যাঙ পাহাড়ের উপরে উঠে
                    নীচের লো-ইয়াঙ শহরটা দেখি।
                         কি শান্তি এই শহরে!
                    বাড়ি ঘর দোর পুড়ে সব ছারখার,
                   দেওয়াল, পাঁচিল কঙ্কালসার প্রায়।
                       যত্রতত্র আগাছা ভিড় করে,
                 চেনা মুখগুলো দেখতে পাই না আর,
            সেই চেনা মানুষগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে।
                    ক্ষেত ভরা শুধু আগাছার জঙ্গল,
                  আর কোনদিন ফসল নেবে না জন্ম।
                   কতদিন আমি কত দূরেই না ছিলাম,
                    রাস্তাগুলো গুলিয়ে ফেলছি আজ।
           কি বীভৎস লাগে এই নতুন অচেনা লো-ইয়াঙ,
                   মাইলের পর মাইল জনমানব শূন্য।
                    আমার বাড়িটা খুঁজতে আজ ব্যর্থ,
                  ভারাত্রান্ত হৃদয়ে আমি আজ বাকরুদ্ধ।