ভালো থেকো নারী
আমার মা কি নারী ! কি জানি! হয়তো!
সকালে যখন কয়লা ভেঙে উনুনে আগুন দিত
মায়ের চোখে জল দেখতাম।
কাঁদছো কেন মা? কিচ্ছু বলতোনা
মুখের দিকে চেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত।
আর ভুবনমোহিনী একটা হাসি হাসত,
আর বলতো ভালো থাকিস।

ভালো থেকো নারী
আমার মা কি নারী ! নাকি সেবাদাসী।
ভোরবেলায় রাস্তার কলে লাইন দিত।
ছোট্ট বারান্দায় একে একে সাজিয়ে রাখত।
সকালে দুপুরে স্কুলের টিফিনের ব্যবস্থা করত...
যাহ্‌ নটার সাইরেন বেজে গেল...
তোর বাবা ভাত না খেয়ে বোধহয় আফিস চলে গেল।
ঠিক তাই; মায়ের চোখে আবার জল।
আঁচলে চোখ মুছে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলত
দুর্গা... দুর্গা... সবার মঙ্গল কর।
মনে মনে ভাবতাম, ওই সবার মাঝে মা নেই।
তাই, নিজের মঙ্গলের কথা বললনা।
-তবে নিজের কষ্টটা কোথায় লুকিয়ে রাখত?

ভালো থেকো নারী
আমার মা কি নারী!
নাকি শুধুই মা ! মায়েরা রক্ত মাংসের যন্ত্রবিশেষ।
একদিন বাবা বাড়ি ফিরলনা। রাত গভীর হল।
রাস্তার নেড়িগুলো মাঝে মাঝে বিকট চিৎকার করছে।
মা তখন চাদর গায়ে সদর আর ঘর পায়চারী করে ফিরছে।
অনেক রাতে হৈচৈ হট্টগোলে ঘুম ভেঙে গেল।
কারা যেন বাবাকে রেখে গেল সাদা চাদরে মুড়ে।
মায়ের মুখটা সাদা পাতার মতন রক্তশুন্য লাগছিল।
সেদিন আমার মা একটুও কাঁদেনি।
দুহাত ছড়িয়ে জড়িয়ে ধরল আমাদের
যেমন পাখীর ডানায় ছানারা থাকে পরম সুখে।
তারপর থেকে মাকে আর কোনদিন কাঁদতে দেখিনি।
এই সাদামাটা মানুষটা নারী ছিলনা!
ছিল আমার মা, আমাদের মা।
মায়েরা কি ভালো থাকে?
নাকি ভালো থাকা বিসর্জন দিয়েই মা হয়ে ওঠে।
তাইতো ''ভালো থেকো মা'' বলতে পারলামনা।

ভালো থেকো নারী