‘‘একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয় তার অর্থনীতিকে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয় তার সংস্কৃতিকে।  সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয় তার শিক্ষাকে।  শিক্ষাকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয় তার ভাষাকে। ভাষাকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয় তার আত্মমর্যাদাবোধকে।
আর জাতিকে জাগাতে হলে জাগাতে হয় তার আত্মমর্যাদাবোধকে। আত্মমর্যাদা জাগলে বিকশিত হয় ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি। আর এ সবের পরিণতি জাতির নব-উজ্জীবন।
সেই আত্মমর্যাদাবোধ ও জাতি জাগরণের লক্ষ্যে  কাজ করেছেন উনিশ শতকের বহু শতাব্দীর মনীষীরা।’’


বনলতা সেন কে নাটোরের প্রেক্ষাপটে কেন?


১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পঃ


১৮৯৭ সালে নাটোর এলাকায় বা তৎকালীন বৃহত্তর নওগাঁ জেলা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প হয়েছিল। এ বিষয়ে AssamNet (the oldest Assamese electronic mailing) এ Ms. P. Moore এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ ‘‘Ms. P. Moore wrote a letter in the September issue of the Baptist Missionary Magazine 1897 which reported the damages in Nagaon. The court house, treasury, post office, circuit house and the deputy commissioner's bungalow were badly damaged. She reported aftershocks throughout the night of 12th June as well as the next day. A tea garden: On July 12th, 1897, the Times published a series of letters from a European lady living in an unidentified tea garden in Assam and ill at that moment. It drew a graphic picture of the devastation caused. The letters were dated June 13-18. She reported that it was raining when the earthquake came. Her bungalow swayed violently like a ship in a bad storm. The ground was going in huge waves and it was difficult to even run out of the houses. On June 14, she wrote that in her district, every brick building was flat on the ground; those that stood are like hers, wooden posts with grass walls. When she was writing the letter, there were three aftershocks, which she noted in the letter. She said that her doctor, who walked 14 miles to see her (because the roads were impassable to ponies, with large cracks and holes) sighted innumerable small volcanoes from many of which boiling water was springing. Some were throwing up dark, red sand and others ashes.’’


Summary:
There was a detailed article on the earthquake by Mr. H. Luttman-Johnson, I.C.S., who had served in Assam for 18 years, in the Journal of the Society of the Arts April 1898 (12). He reported that Prof. Omori, a Japanese seismologist, who was deputed to Assam to make inquiries into the earthquake, thought it originated 20 miles below the surface. The velocity is said to have been 10,000 feet per second or 112 miles per minute.
The Assam Earthquake of 1897 was investigated in thorough detail by Oldham who published a book on it in 1899 bringing forth several hypotheses to explain its origin. This book is considered as the initiation of the study of engineering aspects of earthquakes in India. In accordance with the orders of the Government of India, the book dealt with the earthquake from a purely scientific point of view. The information in the rest of the article is mostly obtained from Oldham's book.’’


‘‘The earthquake left an area of 150,000 square miles in ruins and was felt over one and a quarter million square miles from the Western Burmese border to almost near New Delhi. The earthquake was accompanied by a very marked undulation of the ground, different accounts placing the lengths of these undulations from 8 feet to 10 yards, and their heights from 1 to 3 feet. The vertical range of these motions was at least 8 inches. Mr. Grimes of Assam Bengal Railway reported that in some places along the railroad, telegraph poles which were originally set up in straight line were displaced to the extent of 10 to 15 feet. Also, in Lower Assam, carefully leveled rice fields were found, after the earthquake to be thrown into gentle undulations with a difference of level of as much as 2 to 3 feet between the crest and the trough. Oldham's book contains many vivid photographs of destruction, a notable among them being a photograph of the terribly bent rails at the Rangapara of the Tezpur-Balipara Tramway. There were nine such breaks between Sessa and Rangapara (4 and a half miles), the largest distance between the parts of the broken rails thrown asunder being 5 and a half feet.’’


‘‘There were hundreds of aftershocks--- some very heavy and some light at Shillong, Tura, Bijni, Guwahati and other nearby areas.’’


‘‘At Bordwar tea estate, a week after the great shock, the surface of a glass of water standing on a table was in a constant state of tremor.’’


‘‘At Tura, a hanging lamp was kept constantly on the swing for 3 days. According to reports in the Assam newspaper, in North Guwahati there were 561 aftershocks till the end of the 15th of June, 125 between 15th to 30th June, and 84 from 1st to 15th July. Most of the aftershocks were local and not felt over a large area.’’


‘‘In many places river beds or drainage channels were filled up with sand. Oldham reported that a large number of channels 15 to 20 feet deep between the foot of the Garo Hills and Brahmaputra, which normally were dry but were filled with water during the rainy season, were filled up with sand and earth to the level of the banks. This and other such riverbed fillings caused serious floods in 1897 which was most severe in Barpeta subdivision. This also resulted in many of the rivers and streams deserting their old channels and forming new ones after the floods of August and September. Fissures and sand vents occurred universally throughout Goalpara and Kamrup districts, the western parts of Darrang and the greater part of Nagaon.’’


‘‘A few were seen in Lakhimpur (west of Subansiri) and in Sibsagar (west of Sibsagar town) districts. Landslips were formed by the earthquake in most hills; conspicuous among them were those formed in the southern edges of the Garo and Khasi Hills. A large number of such landslips were also formed on the deeply cut, steep sided valley on the north bank of the Brahmaputra, all along till just east of Tezpur.’’


ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে (ইবিআর)ঃ


বাংলাদেশের তথা এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর ওপর রেলপথের প্রভাব অপরিসীম। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের উত্তর-পশ্চিমাংশ পড়েছিল রাজশাহী বিভাগে। চলনবিলের সঙ্গে রেলওয়ের সাক্ষাতে দুর্দশা নেমেছিল এ অঞ্চলের কৃষি-অর্থনীতিতে। রাজশাহী ও পাবনা জেলার বিশাল জায়গাজুড়ে উপস্থিত চলনবিলে মিলিত হয়েছিল বেশকিছু নদী ও বড় খালের প্রবাহ। বড়াল নদের মাধ্যমে পদ্মার পানিও চলনবিলে এসেছিল। নন্দকুজা ও গোদাই— বড়ালের এ দুটি শাখা নদী চলনবিলে নেমেছে। ১৯৪৫ সালে এ রকম ৪৭টি নদ-নদী এবং বেশকিছু বড় খাল চলনবিলের বুকে মুখ লুকিয়ে ছিল। ১৫৪৭ বর্গমাইল আয়তনের এ জলাধার শুধু নদীদের সংযোগস্থল ছিল না, সঞ্চারী হিসেবেও ভূমিকা রেখেছে। এখান থেকে দক্ষিণ ও পূর্বে বয়ে গিয়ে বেশকিছু নদ-নদী পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলেছে। প্রথমে আধার ও পরে সঞ্চারী হিসেবে চলনবিল এভাবেই এ ব-দ্বীপের অর্ধেকটা অংশকে পরিপুষ্ট করেছে।


উনবিংশ শতকের শুরুতে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে এ চলনবিলকে বেঁধে ফেলে। পশ্চিম দিকে ইবিআর মেইন লাইন ও দক্ষিণ দিকে শান্তাহার-বগুড়া ব্রাঞ্চ লাইন চলনবিলকে জড়িয়ে ধরে। যেহেতু উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রবাহ চলনবিলে পানির আগমনের পথ ছিল, তাই যথাক্রমে ইবিআর মেইন লাইন ও শান্তাহার-বগুড়া ব্রাঞ্চ লাইন প্রকারান্তরে তার দুটি পথ বন্ধ করে দেয়। আবার বিলের পানি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বেরিয়ে যেখানে ব্রহ্মপুত্রকে পুষ্টি জোগাত, সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইবিআরের সারা-সিরাজগঞ্জ (ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ) ব্রাঞ্চ লাইন। বাংলাদেশের এ অংশের নদী ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রবাহ এভাবেই ইবিআরের উপস্থিতিতে ব্যাহত হয়। কারণ জলো অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ হতো বাঁধের ওপর। ব্রড গেজ লাইন নদীর কণ্ঠ রোধ করেছিল, কিন্তু ন্যারো গেজ তার টুঁটি চেপে ধরে প্রাণনাশ করে। কেননা প্রথম রেলপথ নির্মাণকালে যেখানে পানিপ্রবাহের জন্য রেল সেতুগুলোয় ৯৬৭ ফুট স্প্যান ছিল, ১৯২০-এর দশকে একই অঞ্চলে স্প্যানের উচ্চতা কমে ৪৪০ ফুটে নেমে আসে।


রেলওয়ে এভাবে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও উপচে পড়াকে প্রভাবিত করেছিল, যা প্রকারান্তরে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস করে ও ফসল নষ্ট করে এখানকার কৃষির অপরিসীম ক্ষতি করেছিল। যেমন বলা যায়, ইবিআরের কলকাতা-শিলিগুড়ি লাইন রাজশাহীর মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে চলে গেছে। লাইনটি বাসুদেবপুর ও তিলকপুরের মধ্য দিয়ে গেছে। অথচ ওই জায়গাটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু। রেলওয়ে বাঁধের কারণে পানির প্রাকৃতিক চলাচল ব্যাহত হয় এবং বাঁধে প্রতিহত পানি অনেক বেশি পরিমাণ ও শক্তি নিয়ে উল্টো ঘুরে ফসলি জমির দিকে ছুটে যায়। এভাবে বছরের পর বছর নষ্ট হয় রোপা আমন, যা ওই এলাকার একমাত্র ফসল। চলনবিলের পানি কালভার্ট ও সেতুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়। আবার ব্রহ্মপুত্রের দিকে যেতেও সারা-সিরাজগঞ্জ রেললাইনে বাধা পায়। অগত্যা আরো জমির ফসল নষ্ট করা ছাড়া পানির পথ ছিল না। চলনবিলের জোয়ারের পানিও ব্রহ্মপুত্র অথবা যমুনায় সরতে গিয়ে রেললাইনে বাধা পেত। এর ফলস্বরূপ পলি জমে দিন দিন বিলের বুক উঁচু হতে থাকে এবং তার জল ধারণক্ষমতা হ্রাস পায়।


সেকালের একজন সরকারি কর্মকর্তার মতে, সারা-সিরাজগঞ্জ রেললাইনের পত্তনের পর থেকে বন্যার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার এটাই কারণ। সারা-সিরাজগঞ্জ লাইনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত জেলাগুলোর অনেক কৃষক একই কারণে রবিশস্যের চাষ বন্ধ করতে বাধ্য হন। কারণ নিয়মমাফিক পানি সরতে না পারায় যথাসময়ে তাদের জমি শুকনো হতো না। অনেকে তখন বাধ্য হয়ে কাদামাটিতে বীজ বুনত। এ প্রসঙ্গে ওই সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘কৃষি বিষয়ে সামান্য জ্ঞানও যার আছে, তিনি বুঝবেন, এভাবে বপন করলে সরিষা, মসুর, গম ও যব বীজের কী অবস্থা হয়!’ ওই কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে আরো লেখেন, ‘আমি শুধু যেসব বছর বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক থাকে, সে সময়ের কথা বলছি। অস্বাভাবিক সময়ের কথা নয়।’


==========================
একদিকে উনিশ শতকের গোড়ার দিকের ভূমিকম্প, অন্যদিকে ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের নেতিবাচক প্রভাব এ অঞ্চলেরর দারিদ্র্য সীমাহীনভাবে বাড়িয়ে তোলে। ভূমিকম্পে ঘরবাড়ী ফসল নষ্ট হওয়া, অনাবাদ, জলাবদ্ধতায় ফসল নষ্ট হওয়া, উৎপাদিত পণ্য পরিবহণ ও বাজার জাত করণের নৌরুট বন্ধ হওয়া এবং বিকল্প যোগাযোগ ব্যস্থা তৈরি না হওয়ায় তা বাজারে নিতে না পারা, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়া, কৃষক ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি কারণে এ এলাকায় দারিদ্র মহামারী আকার ধারণ করে যা কয়েক দশক চলতে থাকে। আবার বূমিকম্পের ফলে ব্রক্ষ্মপুত্রের প্রবাহ বা গতিপথও পরিবর্তিত হতে শুরু করে। ফলে পার্শবর্তী নদীতে পানির প্রবাহ আগের চেয়ে বৃষ্টি পায়, যা প্রকারান্তরে ১৯১৮ সালে রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় বিপর্যয়কর বন্যার সৃষ্টি করে। স্থানীয় বৃষ্টির পানি অপসারিত হবার পূর্বে উজানের পানি এসে সয়লাব করে দেয় সব। ১৯১৮ সালে রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় বিপর্যয়কর বন্যা হয়। ঐ বছরের ২১ আগস্ট বগুড়ায় ভীষণ বৃষ্টিপাত হয়। হিলি ও নাটোর স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় রেলপথের দুই পাশই প্লাবিত হয়। রেল লাইনের পূর্ব দিকের পানি সরতে পারেনি বগুড়া লাইনের কারণে। বন্যার পানি সরার আগেই ২৪ আগস্ট রাজশাহীতে ভারি বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে। দিনাজপুর ও বগুড়া— উত্তরের এ দুটি উঁচু জেলা থেকে বাড়তি পানি এসে রাজশাহীর অবস্থা আরো শোচনীয় করে তোলে। পুরো জেলা প্লাবিত হলেও রেলপথের কারণে বানের পানি সরতে পারেনি। বন্যায় ওই অঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ৪০০ বর্গমাইল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০০ বর্গমাইল কৃষিজমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়।
===========================
এসব কারণে এ অঞ্চলের দারিদ্র নিরীহ, অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আদিম পেশায় প্রবৃত্ত হতে বাধ্য করে।
===========================


কে এই বনলতা সেন?

কে এই বনলতা সেন? বনলতা সেন নামের কোনো মেয়ের সঙ্গে কি জীবনানন্দ দাশের আদৌ পরিচয় ছিল? বনলতা সেনের চুলকে তুলনা করা হয়েছে বিদিশা নগরীর আঁধারের রহস্যময়তার সাথে, মুখশ্রীকে তুলনা করা হয়েছে শ্রাবস্তী’র কালজয়ী শিল্প উপাদান হিসেবে। বনলতা’র চোখ পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়দাত্রী, ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া। মধ্যযুগের শিল্প-ঐশ্বর্য্যের ধারক বিদিশা’র অমোঘ আকর্ষণের মতো তার চুলের নেশা, শ্রাবস্তীর হাজারো স্থাপত্য আর লাখো শিল্পীর সযত্ন কারুকাজের মতো তার রূপ। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ পেছনে ফেলে পাখি যেমন সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে তৃপ্তি পায়, বনলতা’র চোখ তেমনি।


গোপালচন্দ্র রায় একবার কবিকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন, ‘দাদা, আপনি যে লিখেছেন নাটোরের বনলতা সেন, এই বনলতা সেনটা কে? এই নামে সত্যি আপনার পরিচিত কেউ ছিল নাকি?’  উত্তরে কবি শুধুমাত্র একগাল মুচকি হাসি দিয়েছিলেন। কবি কখনো নিজের অজান্তেও এই বিষয়ে কারো কাছে কিছু বলেননি। কবি নীরব থাকলেও যুগ যুগ ধরে গবেষকরা এই বনলতা সেনকে খুঁজে ফিরছেন। কিন্তু ফলাফল বরাবরই শূন্য। বাস্তবে এমন কোনো বনলতা সেনের অস্তিত্ব তারা বের করতে পারেননি।


কবি নির্মিত এই অপার্থিব নারীর অবয়ব নির্মাণে মাটির পৃথিবীর কোন নারী পটভূমিতে রয়েছে কি না, তা এক রহস্য। এ রহস্য অনেকেই জানতে চান। সত্যিকারের 'বনলতা সেন বলে কি কেউ আছে বা ছিল?' কি তার পরিচয়? এই কবিতায় জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনের বাড়ি উল্লেখ করেছেন নাটোর জেলাকে। এই নাটোর নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। যেমন - কবি কি কখনো নাটোরে পদার্পণ করেছিলেন? জীবনানন্দ দাশের অন্য কোনো লেখায় নাটোরের উল্লেখ পাওয়া যায় নি। তাই এই বিষয়টিও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। কবি জীবনানন্দ দাশ বাস্তবের কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নাকি কল্পনার কাউকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি লিখেছেন তা এখনো কোনো গবেষক কূলকিনারা করতে পারেন নি।  তবে নাটোরের মানুষের কাছে ‘বনলতা সেন’ একজন রক্ত মাংসের মানুষ। এ নিয়ে নানা ধরণের মতবাদ এসেছে। এর কিছু কাল্পনিক ও প্রায় অবাস্তব, কিছু ইতিহাস নির্ভর আর কিছু লজিক নির্ভর। একবার সেই কথাগুলো পাঠ করে দেখি, কী পাওয়া যায়।


১।   নাটোরে স্থানীয়ভাবে ‘বনলতা সেন’ কে নিয়ে বেশকিছু কাহিনী গড়ে উঠেছে। কিন্তু এর বাস্তবিক কোনো ভিত্তি নেই। কেননা ইতিহাসে এসব কাহিনীর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই।


(ক) নাটোরে প্রচলিত একটি কাহিনীতে দেখা যাচ্ছে একসময় ট্রেনে করে দার্জিলিং যেতে হলে নাটোরের উপর দিয়ে যেতে হতো। একদিন জীবনানন্দ দাশ ট্রেনে করে দার্জিলিং যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি যখন নাটোর স্টেশনে পৌঁছায় তখন অপরূপ সুন্দরী একটি মেয়ে ট্রেনে ওঠে। মেয়েটির সাথে ভুবন সেন নামে একজন বৃদ্ধও ছিল। কবি যে কামরায় ছিলেন সেই কামরাতেই তারা উঠেন। কামরায় শুধুমাত্র এই তিনজনই ছিলেন। ভুবন সেন ছিলেন নাটোরের বনেদি সুকুল পরিবারের তারাপদ সুকুলের ম্যানেজার। অপরূপ সুন্দরী সেই মেয়েটি ছিল ভুবন সেনের বিধবা বোন ‘বনলতা সেন’। একসময় ভুবন সেন ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় বনলতা সেনের সাথে কবির আলাপচারিতা জমে ওঠে। এভাবে অনেকটা সময় তারা এভাবেই গল্প করে কাটিয়েছেন। এক সময় ‘বনলতা সেন’ ট্রেন থেকে নেমে যায়। কবি আবার একা হয়ে যান। ‘বনলতা সেন’ কবিতার একটি লাইন এখানে বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। তা হলো - ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’।    


(খ) অপর যে কাহিনীটি রয়েছে সেটিতেও ভুবন সেনের কথা বলা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল এবার ট্রেন নয়, ভুবন সেনের বাড়ি। এখানে ‘বনলতা সেন’ ভুবন সেনের বিধবা বোন ও ঘটনাস্থল ট্রেনের বদলে ভুবন সেনের বাড়ির কথা বলা হয়েছে এবং নাটোরের বনেদি পরিবার সুকুল বাবুর কথাও বলা হয়েছে। কবি একদিন নাটোর বেড়াতে যান। নাটোর গিয়ে তিনি সুকুল বাবুর বাড়িতে ওঠেন। একদিন দুপুরে ভুবন সেন কবিকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। কবিকে আপ্যায়ন করার দায়িত্ব দেয়া হয় ভুবন সেনের বিধবা বোন ‘বনলতা সেন’ কে। ভুবন সেনের বিধবা বোন বনলতা সেনের ওপর পড়েছে অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্ব। খাবারের বিছানায় বসে আছেন কবি। হঠাৎ অবগুন্ঠিত এক বিধবা বালিকা। শ্বেত শুভ্র বসনের চেয়েও অপরূপ এক সৌন্দর্যমন্ডিত মুখ। চমকে উঠলেন কবি। এত অল্প বয়সে বিধবা বসন কবির মনকে আলোড়িত করে। হয়তো সে সময় দু-একটি কথাও হয় কবির সঙ্গে বনলতার। তারপর একসময় নাটোর ছেড়ে যান কবি। সঙ্গে নিয়ে যান এক অপরূপ মুখের ছবি। সেই ছবিই হয়তো কবিকে পথ দেখিয়েছে অন্ধকারে, চারদিকে সমুদ্র সফেনের ভেতরও খুঁজে পেয়েছেন শান্তির পরশ।

(গ)  সর্বশেষ ও তৃতীয় একটি কাহিনী নাটোরে প্রচলিত রয়েছে। তবে এবার ঘটনাস্থল নাটোরের রাজবাড়ি। কোনো এক সময় নাটোরের কোনো এক রাজার আমন্ত্রণে রাজবাড়িতে বেড়াতে আসেন কবি জীবনানন্দ দাশ। কবির দেখাশোনা করার জন্য রাজা কয়েকজন সুন্দরীকে দায়িত্ব দেন। এদের মধ্যে একজন সুন্দরীর প্রতি কবির আলাদা মমতা জেগে ওঠে। কবি সেই সুন্দরীকে নিয়ে কবিতা লেখার কথা জানালে সেই সুন্দরী তাতে মত দেয় না। শেষে কবির পীড়াপীড়িতে কবিকে অন্য কোনো নামে কবিতা লেখার অনুরোধ করেন। তাই তো সেই সুন্দরীর প্রকৃত নাম লুকিয়ে ‘বনলতা সেন’ নামটি উল্লেখ করেন।


২।  বিশিষ্ট অর্থনীতিক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব জনাব আকবর আলী খান তার ‘‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’’ বইয়ে বনলতা সেনের 'সেন' উপাধি আর তার বাসস্থান নাটোর এই দুইয়ের সংযোগে আরেকটি ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা মতে 'নাটোর' শব্দটির ব্যবহার শুধু বনলতা সেনের ঠিকানা নির্দিষ্ট করতে নয়, তার পেশা নির্দিষ্ট করতেও। এ শতাব্দীর প্রথমদিকে নাটোর কাঁচাগোল্লার জন্য নয়, বিখ্যাত ছিলো বারাঙ্গনাদের জন্য, যা পূর্বেই উল্রেখ করা হয়েছে। এ ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে নাটোর এসেছে। 'সেন' শব্দটি একজনের বংশের পরিচয় বহন করে, পেশা গ্রহণ করবার পর 'বনলতা' নামের আড়ালে সে তার নিজের আসল নাম গোপন করেছে। ‘দু’দণ্ড শান্তি’ কথাটির মূল অর্থ আদিম অভিসার, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ প্রশ্নটি এই হাহাকার প্রকাশ করে যে, কবিতার ‘আমি’ আগে দেখা দিলে, বনলতা রূপাজীবা’র পেশাটি গ্রহণ করতেন না। দুঃসময়ে কেন পাশে ছিলেন না, এই হাহাকার বনলতার বুক জুড়ে। আর এই কবিতায় আরোপিত 'অন্ধকার' বলে দেয়, বনলতা সেন’দের আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীতে পাওয়ার সুযোগ নেই। 'অন্ধকারে মুখোমুখি বসবার' স্মৃতিটুকু সাথে নিয়ে পাখির মতোই ঘরে ফিরে যেতে হয়; যেখানে অপেক্ষা করে সাধারণ নারী’।

৩।  জীবনানন্দের ডায়েরির প্রথম অংশ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কলকাতায়। ভূমেন্দ্র গুহের কাছে জীবনানন্দের ডায়েরি রাখা আছে। সেই ডায়েরিতে লিটারেরি নোটস্ হিসেবে Y নামে এক মেয়ের নাম লেখা আছে। জীবনানন্দ তার নিজের হস্তাক্ষরে লিখে রেখেছেন Y=শচী; এই ‘শচী’ জীবনানন্দের গল্প ‘গ্রাম ও শহরের গল্প’র শচী। ডায়েরির অন্যান্য পৃষ্ঠা বিবেচনায় ভূমেন্দ্র গুহ বলেছেন, জীবনানন্দের চাচাতো বোন শোভনার প্রতি কবি দুর্বল ছিলেন। এই শোভনাই হচ্ছেন ওয়াই বা শচী বা বনলতা সেন। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ কবি এই শোভনা মজুমদারকে উৎসর্গ করেছেন। কবি হিসেবে উপেক্ষার অনেক কঠিন সময়গুলিতে জীবনানন্দের কবিতার মুগ্ধ পাঠিকা ছিলেন শোভনা, দরজা বন্ধ করে প্রায়ই কবি শোভনাকে কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। অর্থাৎ ভূমেন্দ্র গুহের বিবেচনায় বনলতা সেন নিখাদ প্রেমের কবিতা।

৪।  বনলতা সেন রচনার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অশোক মিত্র জানান তিনি নিজে কবি জীবনানন্দ দাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এই ‘বনলতা সেন’ কে? কবি বনলতা সেন কে এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেন নি। শুধু বলেছেন, বনলতা সেন নামটি কবি পেয়েছিলেন পত্রিকা থেকে। সে সময় নিবর্তক আইনে বনলতা সেন নামে এক একজন রাজশাহী জেলে বন্দিনী ছিলেন। সেখান থেকেই কবি এই নামটি গ্রহণ করেন। এই বনলতা সেন পরে কলকাতার কলেজে গণিতের শিক্ষকতা করতেন।


৫।  কেউ কেউ মনে করেন বনলতা সেন নামটির ভেতর তার পরিচয় লুকিয়ে আছে। নামটির দু’টি অংশ বনলতা আর সেন। বনলতা প্রকৃতি আর সেন নারী। জন্মলগ্ন থেকেই মানবজাতি নারী আর প্রকৃতির কাছেই একমাত্র শান্তি খুঁজে পেয়েছে কবির মূল বক্তব্য এটিই। এই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই কবি এই নামটি বেছে নিয়েছেন, সমসাময়িক আধুনিক নারীর নামের সাথে সাদৃশ্য রেখে কবি তার স্বভাবজাত রোমান্টিকতার আড়াল তৈরি করেছেন মাত্র।
=========================


ব্রিটিশ ভারতের ফরিদপুরের (বর্তমান রাজবাড়ী জেলা) বেরাদী গ্রামে ১৯০৩ সালের ১ নভেম্ব মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মণিকৃষ্ণ সেন। বাবা বেনীমাধব সেন কাবিলপুরের জমিদারের সেরেস্তা ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল প্রমদা সুন্দরী সেন। বেনীমাধব সেনের বাড়ি ছিল রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার কাবিলপুর গ্রামে। জয়পুরহাটে তাঁর বাবার কিছু সম্পত্তি ছিল। সেখানে তাঁদের চালের ব্যবসা ছিল। তাঁর বয়স যখন ছয় মাস তখন তাঁর মা মণিকৃষ্ণ সেনের মামা বাড়ি থেকে কাবিলপুরে আসেন। কাবিলপুরে অতিবাহিত হয় তাঁর শৈশব জীবন। ১৯১১ সালে তাঁর বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। তাঁরা ছিলেন পাঁচ ভাই ও চার বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর মেঝ ভাই শিব কৃষ্ণ সেন। তিনি কাবিলপুরের বিষয়সম্পত্তি দেখাশুনা করতেন। মণিকৃষ্ণ সেন বেড়ে উঠেছেন ভাই শিব কৃষ্ণ সেনের কাছে।


স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ১৯২০ সালে ১৭ বছর বয়সে ভারত ছাড় আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য শপথ নেন। কৈলাশরঞ্জন উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯২১ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন কারমাইকেল কলেজে। ওই সময় যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা প্রকাশ্যে কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯২১ সালে মণিকৃষ্ণ সেন জাতীয় কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। তিনি ছিলেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও যুব ভলান্টিয়ারদের প্রধান। কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯২৫ সালে বি.এ. এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে এম.এ. ও বি.এল. পাশ করেন।


মণিকৃষ্ণ সেন ১৯২৮ সালে যুগান্তর দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কংগ্রেসে যোগদান করেন। তিনি বিপ্লববাদে বিশ্বাসী হলেও জনগণ বিচ্ছিন্ন দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বুঝতেন জনগণকে দিয়ে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলনের দ্বারা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করা যাবে না। তাই মনিকৃষ্ণসহ অসংখ্য বিপ্লবীরা কংগ্রেসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।


১৯২৯ সালে মণিকৃষ্ণ সেন প্রথম বারের মতো গ্রেফতার হন। ঐ বছর বিপ্লবীরা রাজশাহীর পুঠিয়ায় মেইল ট্রেন ডাকাতির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। উল্টো এই কারণেই ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত হয় ইংরেজ সরকার। রংপুরের যুগান্তর দলের নেতা সুশীল দাশ গুপ্ত এবং অনুশীলন দলের নেতা ধরণী বিশ্বাস ছিলেন মেইল ট্রেন ডাকাতি মামলার প্রধান আসামী। মেইল ট্রেন ডাকাতি মামলায় তাঁদের সাত বছর জেল হয়েছিল। এই মামলায় মণিকৃষ্ণ সেনও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। গ্রামের বাড়ি কাবিলপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেল হাজতে তাঁকে থাকতে হয়েছিল চার মাস।
১৯৩০ সালে রংপুর জেলার আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনার জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তাঁকে 'ডিরেক্টর' মনোনীত করা হয়। সে সময় কংগ্রেস ছিল নিষিদ্ধ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার সুযোগ ছিল না। এজন্য একজন 'ডিরেক্টর' গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকজনকে মনোনীত করা হতো। ওই বছর আইন অমান্য আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি গ্রেফতার হন। এ সময় তিনি রাজশাহী ও বহরমপুর জেলে ছয়মাস কারাভোগ করেন।


১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেঙ্গল অর্ডিন্যান্সে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। মেদিনীপুরের হিজলী স্পেশাল ক্যাম্পে তিন মাস রাখার পর তাঁকে বিনাবিচারে আটক রাখা হয় দেউলী বন্দীশিবিরে। দেউলী রাজপুতানার মরুভূমির নির্জন স্থানে অবস্থিত। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য পাঁচ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তদের পাঠানো হতো আন্দামানে। অন্যান্যদের পাঠানো হতো দেউলীতে। দেউলীতে তাঁকে সুদীর্ঘ ছ'বছর আটক রাখা হয়। ১৯৩৮ সালের গ্রীষ্মকালে অন্যান্য রাজবন্দীদের সাথে তিনি মুক্তিলাভ করেন।


১৯৩৮ সালে মণিকৃষ্ণ সেন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। একই সময় তাঁকে জেলা কংগ্রেস নেতা ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে হয়। ১৯৩৯-৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর জেলা কংগ্রেসের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ সালের ১ ডিসেম্বর বৃহত্তর রংপুর জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শচীন ঘোষ, মণিকৃষ্ণ সেন, শিব দাস লাহিড়ী, রথীন গাঙ্গুলী, বিভূতি লাহিড়ী, রবি মজুমদার ও সুধীর মুখার্জীকে নিয়ে গঠিত হয় রংপুর জেলা কমিটি।


পঞ্চাশের মন্বন্তরের (১৯৪৩ সাল) অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা দেয় মহামারী। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে বসন্ত রোগ। পীড়িতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন মণিকৃষ্ণ সেন। এই প্রসঙ্গে শংকর বসু বলেন, "দুর্ভিক্ষ ও মহামারী পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য সে সময়ে পার্টি ও তাঁর (মণিকৃষ্ণ সেন) নেতৃত্বে পরিচালিত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ সারা জেলায় দারুণ প্রভাব ফেলেছিল এবং রংপুরে কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক গণ ভিত্তি সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছিল।"


১৯৪৩ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেস। এই কংগ্রেসে রংপুর জেলা থেকে ডেলিকেট হিসেবে তাঁকে এবং কৃষক নেতা যোগেশ শিকদারকে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে অবিভক্ত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনের দায়িত্বে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মণিকৃষ্ণ সেন।


========================


গল্প-কাহিনী যত যাই থাক। কোনোটিরই বাস্তবিক কোনো ভিত্তি ও ইতিহাস সূত্র বহন করে না। বাঘা বাঘা সব গবেষকরাও বছরের পর বছর গবেষণা করে এই ‘বনলতা সেন’ রহস্য উদঘাটন করতে পারেন নি। বিশ্বের আর দশটা রহস্যের মতো এটিও একটি অজানা রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।