চার.


তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে ধরে ক্রমশ
এক বেদনার ধূসর উর্ণাজাল হয়ে
বয়েসী পাতাগুলো একে একে ঝরে পড়ে
মেহগনির ডাল থেকে,
রাত গভীর হলেই ল্যাম্পপোস্টের নিচে
অবুঝ কুকুরগুলো জেগে থেকে চেঁচায়
সারা রাতভর
ঝিঝি পোকার একটানা করুণ ডাকে
রাতের নিকষ আঁধার আরও শোকার্ত
হয়ে ওঠে, দুখজাগানীয়া;
স্খলিত তারাগুলো কোথায় যে হারিয়ে যায়
তা কেউ জানে না।
ক্রিস্টি সেদিন আমিও যে ছিলাম
সেই স্খলিত তারাদের মিছিলে।
সেই নষ্ট অশুভ রাতগুলোতে
আমি ঘরে কোনও প্রদীপও জ্বালিনি
কারণ তখন অন্ধকার ও নীরবতাকেই
আমার সবচে' আপন মনে হতো।
এমনই এক অশুভ রাতে তুমি এসেছিলে
টিপটপ বৃষ্টি পড়ছিল তখন
ঝিরঝির স্নিগ্ধ বাতাসে ছিল
তাজা ফুলের সুঘ্রাণ,
কিন্তু আমার দুহাত ভরে ছিল
শুধু অগণন ঘাতক কাঁটা,
আমার করোটিতে দপদপ করে জ্বলছিল
ভীষণ অশান্ত ভিসুভিয়াস
কী প্রচণ্ড সে আগুন, লাল স্ফুলিঙ্গ;
বলো আমি কি করে বোঝাব তোমায়
কী দারুণ অশান্তিতে কাটছিল
তখন দিনকাল!
আর আমি নিশ্চিত জানতাম অনেকেই
আমার সেই দুর্দশা দেখে দিচ্ছিল হাত তালি
কদর্য হাসছিল, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে
নেচে উঠছিল বারবার।
তুমি তখনই এলে ক্রিস্টি
আমার সে ঘোর দুর্দিনে, সে অবেলায়।
আমি তোমার হাতে তুলে দিতে পারিনি
কিছু সতেজ, সুরভিত ফুল;
ভায়োলিনে বাজিয়ে শোনাতে
তোমার প্রিয় কোনও গানের সুর,
না আমি পারিনি।
কারণ সেই নষ্ট অশুভ রাতগুলো
কোনও উৎসবের জন্য মোটেও
উপযোগী ছিল না।
কোথাও শান্তি ছিল না এতোটুকু
সর্বত্র শুধু অদৃশ্য নীল দহন।
তারপর সেই নিকষ অন্ধকারে
কিছুক্ষণ একাকী অপেক্ষার পর
তুমি ফিরে গেছ,
ফিরে গেছ গন্তব্যের খুব কাছ থেকে
পরাজিত যোদ্ধার মতো ঋজু, শ্লথ পা'য়ে।
পিছনে রেখে গেছ শুধু এক করুণ
দীর্ঘশ্বাস তোমার।
আমি তোমাকে ধরে রাখতে পারিনি ক্রিস্টি
কীযে তীব্র এর যন্ত্রণাভার
তা আর কেউ বুঝবে না কোনদিন।
এই যন্ত্রণা শুধুই আমার।