তোর মনে আছে সই সেদিনের কথা?
বুড়ি গঙ্গার পাড় ঘেঁষে বাদামতলীর
ঘাট বরাবর আমাদের মাটির দু'তলা বাড়িতে
যেদিন আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল!
সেদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতে
প্রায় অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল রাস্তা,
বড় রাস্তা থেকে মাত্র চার মিনিটের পথ
দু'জনের বাড়ি দু'দিকে গেছে বেঁকে
যখন বাড়ির সদর দরজায় পা রাখলাম
ভয়ে আমার গা ছমছম করে উঠল
রক্তমাখা পা'য়ের ছাপ সদর থেকে ঘর পর্যন্ত
ঘরের মধ্যে আসতেই দেখি -
গরম রক্তের ফোয়ারায় শুয়ে আছে
বাবা আর ছোট ভায়ের টুকরো লাশ,
মা'য়ের গায়ের ছিন্নবস্ত্র এদিক ওদিক
ঘরে মা নেই, আছে আর্তনাদের প্রতিধ্বনি!
ছুটে বাইরে আসতেই দেখি - তুই
তুই দাঁড়িয়ে একটা কালো বোর্খা হাতে
তাড়াতাড়ি সাজিয়ে দিলি আর বললি,
আরো দেরি করলে তুইও যে মরবি
আমার দেশের ভাইজানেরা তোকেও ছাড়বে না
বোর্খার আড়ালে রাতের অন্ধকারে পদ্মা সেদিন
তিন ক্রোশ পথ হেঁটে কাঁটাতার পার হল,
কাঁটাতারের আঘাতে ক্ষত শরীর থেকে
বোর্খা খুলে একটু আশ্রয় চাইলাম এই দেশে
কিন্তু না, এখানেও হিংস্র হায়নার দল
লুঠ করল আমাকে - আমি নষ্ট হলাম
যেমন নষ্ট হয়ে গেছে আমার মা' !

কেটে গেছে প্রায় ষাটটা বছর -
এখন কলকাতার নিসিদ্ধ পল্লীতে থাকি
তবে এখন আর দেহ বেচতে হয় না পেটের জন্য,
এরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, ভাত-কাপড় দিয়েছে
বিনিময়ে শরীর থেকে অনেক রক্ত নিয়েছে শুষে
সেই রক্ত ক্ষরণের সঞ্চিত টাকা তোকে পাঠালাম
আমার মা'য়ের একটা সমাধি, না ভুল বললাম
একটা নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে দিও ওখানে,
এদেশের মেয়েরা মা'য়ের জন্য আর কি করতে পারে!
তুই ওখানে এখন ভাল আছিস তো ফতেমা?