গভীর রাতের পিপাসা যেন একটু অন্যরকম
মেসের ঘুমন্ত বোর্ডারদের নিশ্চিন্ত নাকডাকা শুনি
কাঠ হয়ে যাওয়া গলা নিয়ে রান্নাঘরে জল আনতে যাই
তখন অপরূপ সেই দৃশ্যটি চোখে পড়ে!


শুকিয়ে যাওয়া রক্ত প্রলেপের মত তেলাপোকাগুলো
ঝির ঝির শব্দে এদিক ওদিক চলাফেরা ক'রে
ওদের লক্ষ বছরের নিয়ত অস্তিত্ব জানাতে থাকে;
ওদের কুরে খাওয়া, কালো জিরার মত মল মাখা তরকারি
কেটে ধুয়ে নির্বিকার রান্না করে চলে যায় খুকির মা...


দিনের বেলায় তেলাপোকাগুলো কোথায় থাকতে পারে!
মাঝে মাঝে খুঁজতে ইচ্ছে করে, খুঁজি'ও, কেউ বোঝে না,
রূপসী তেলাপোকাগুলোর মসৃণ পিঠ মুগ্ধ হয়ে দেখি
দেখতে ভালো লাগে, ওদের এ্যান্টেনার এপাশ ওপাশ করা...


অপরিনত বয়সে ভাবতাম...
তেলাপোকার বুঝি সামনে দুটো চোখ
ভয়ংকরভাবে স্থির নিথর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে,
কোন বস্তুতেই তেলাপোকার অরুচি নেই;
পায়ে পেষা হলেও এর নেই মরনার্তণাদ...


রাক্ষস ডাইনো আজ নেই অথচ তেলাপোকা আছে
কোথা থেকে পরিচালিত এসব আজব কারসাজি!
ভাবতে ভালো লাগে, ভালো লাগায় নতজানু হই...


সমীকরণ সমাপ্ত হয়, অল ইজ ইকুয়্যল টু ওয়্যন
বহুবর্ণ কুসুমিত সবুজপত্র পল্লবিত বাগানে চোখ মেলি
যা কিছু শুনেছি তার সবটুকু এখানে পরম সত্য...


পাশে উপবিষ্ট লাস্যময়ী স্বচ্ছদেহী সর্বকালসঙ্গিনী
নির্ভার, চির আকাঙ্খিত নাতিশীতোষ্ণ স্থিতাবস্থা
এ যেন আশাতীত অভূতপূর্ব কাল-ভ্রমণ,
ফ্রম মাদার আর্থ টু গার্ডেন অব ইডেন...!


শরীর শেষ পর্যন্ত অনুভূতিশূন্য হয়ে যায়
হাত থেকে গড়িয়ে পড়ে জলরঙা গ্লাস,
সর্পিলাকারে গড়ানো জলের নিঃশব্দ স্রোত;
পিপাসার্ত আমি সহস্র তেলাপোকা গায়ে
ছাদের দিকে নিষ্প্রাণ চোখে চেয়ে থাকি...


বিশেষ নোটঃ
পরিবার বিবর্জিতাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের ঘোরে এই নৈর্ব্যক্তিক বিপরীত বাস্তবতার অভিজ্ঞতা আমাদের কারো পক্ষেই আকাঙ্খিত নয়, কিন্তু প্রকৃতই কী আমরা নিজেদেরকে নিজেরা কখনও এভাবে অতিক্রম করে যেতে পারি...! এ এক ভবঘুরের নির্জলা অতিকল্পনা ব্যতীত আর কিছুই নয়, একে কঠিনভাবে দন্ডিত করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি বার বার... কোথাও কোথাও একে আজও দেখা যায়, শুধু ধরা যায় না...