কবিতা নাকি তোমার বড্ড অপ্রিয়?
তবে প্রিয়টা কি ছিল বন্ধু?
জীবনে যা ছিল প্রিয়,যা ছিল অপ্রিয়,
সব কিছুতেই যে কবিতারা আঁকিবুঁকি কাটে।
তবে তুমি আজ তা মানোনা।
আর মানবেই বা কেন?
কবিতার কথাগুলো যে আজ,
অন্য কিছু হয়ে তোমার মাথায় ভর করে।
তুমি বলবে ওটা নাকি বাস্তব।
তবে আমি কিন্তু বলব,ওটা কবিতা।
ওটা তোমার কবিতা,আমার কবিতা।
ওটা জীবনের এক নির্মম সুন্দর কবিতা।
তবে একবার মনের পাতাটি খোলো দেখি!
কিছুই কি দেখতে পাওনা আজ?
সবই কি আজ শূন্য, বিদীর্ণ, বিমর্ষ?
না, তা তো নয়!
তা তো হওয়ার কথাই ছিলনা।


সেই যে মায়ের নিঃস্বার্থ কোলে,
মাথা রেখে প্রথম তুমি শুনেছিলে,
"খোকা ঘুমোলো,পাড়া জুড়োলো!"
কই,তা তো কল্পনা ছিলনা,
ওটাও তো ছিল বাস্তব!
মায়ের মমতায় ঘেরা এক মধুর বাস্তব।
তুমি বলবে,ওটা আমার ভুল,
তুমি বলবে,ওটা বাস্তবের পোষাক পরানো,
এক করুণ মিথ্যা।
তবে আমি কিন্তু তা বলব না।
আমি বলব,ওটা কবিতা।
যার আনাচেকানাচে জীবন খেলা করে,
বাস্তবতা খেলা করে,সত্য খেলা করে।


সেই দিনটি কি তবে তুমি ভুলে গ্যাছো?
যেদিন দুরুদুরু বুকে,কাঁপাকাঁপা হাতে,
তোমার লেখা প্রথম চিঠিটি
তুলে দিয়েছিলে তোমার প্রিয়তমার হাতে।
তার প্রথম শুরুতে তুমি লিখেছিলে,
"তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা
তুমি আমার সাধেরও সাধনা"
ভুলে গেছ?
না, ভোলবার কথা তো ছিলনা।
তুমি হয়তো আবারও আমায় ধরবে,
মিথ্যা প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা করবে।
বলবে,না,না, ওটাও কবিতা নয়,
ওটাও ছিল এক পরিণত মিথ্যা
যা চাপা পড়েছিল আবেগের পদতলে,
ভালোবাসার পদতলে।
তবে আমি কিন্তু তা বলব না।
আমি বলব,ওটা ছিল কবিতা,
ভালোবাসার কবিতা,যার মাঝে
প্রেমের নির্মম বাস্তব ঘোরে ফেরে।
আর উঁকি দিয়ে ডাকে,
বলে,কই,আমারে তো ফেলতে পারলিনা!


সেই দিনগুলোয় তুমি বড় ক্লান্ত ছিলে।
সমাজের মারপ্যাঁচের থেকে বাঁচতে,
অর্থসংস্থানই ছিল তোমার পরম আশ্রয়।
একের পর এক ব্যর্থতা জীবনে বাসা বাঁধেছিল।
তবে তুমি কিন্তু থেমে থাকোনি।
গুঁড়িয়ে ফেলেছ সেই অবাঞ্ছিত বাসাকে।বারে বারেই ওই কথাগুলো তোমার কানে
জীবনের জয়গান গেয়ে যেত।
"চিত্ত যেথা ভয়শূন্য,
উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত
যেথা গৃহের প্রাচীর।"
তোমার বারে বারে ভেঙে পড়ার মাঝে
তোমাকে যে হাত ধরে তুলেছে।
বলেছে,ওঠ,মরে গেছিস তুই?
নিশ্বাস তো চলছে,তবে আর কেন?
উঠে দাঁড়া,চোখ মোছ,
আবার শুরু কর তোর পথ চলা।
তুমি হয়তো এবার কান চাপা দিচ্ছ।
বলছ,তুমি তো বড় মূর্খ!
ওগুলোকে কি কবিতা বলে?
ওগুলো ছিল আত্মবিশ্বাসের ফলাফল।
ওগুলো ছিল জীবনের সাধনা।
আমি কিন্তু তা বলব না।
আমি বলব,ওগুলো ছিল কবিতা।
যার প্রতিটি অক্ষরে ছিল
জীবন সাধনার মূল চাবিকাঠি।
ওটা ছিল বিশ্বাসের কবিতা,
ওটা ছিল ভাঙা কে গড়ার কবিতা।


যেবারে তোমাকে বাড়ির উঠোনে আনা হল,
কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে
আঁকা হল এক বিদীর্ণ সুন্দর নকশা।
চোখে তুলসীর পাতা দুটি
তোমার প্রাণহীণতার চিহ্ন রাখছিল।
ঘরের ভিতরে তোমার প্রবেশের অধিকার ছিলনা।
কিছু মানুষের সাময়িক কান্না
তোমার স্বল্পকালের অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্বকে
জানান দিচ্ছিল।
তুমি হয়তো বলবে,
এখনো কি তুমি কবিতা খুঁজে পাও?
তখনই তুমি শুনতে পাবে,
কে যেন পাশ থেকে বলে উঠল,
"বল হরি! হরিবোল!"
তুমি হয়তো আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে
বলবে,ওটা তো ঈশ্বরকে শেষযাত্রায় স্মরণ।
তবে আমি কিন্তু তা বলব না।
আমি বলব,ওটাই সেই কবিতা
যার আদি থেকে অন্ত,
ঈশ্বর খেলা করে।
আবার উনিই সেই ঈশ্বর,
যার সৃষ্টি ও ধ্বংসে
কবিতারা জন্মায় এবং জন্ম নেয়।