তারপর, কৃষি যখন এল-
উলঙ্গ গুহাবাসী নামলো মাঠে ;
ঘষা পাথর আর গদা ফেলে দিয়ে
হাত দিল মাটিতে ফসলে ।
ফলিল শষ্য সম্ভার ;
সেই সোনার ফসল ঘরে তোলে
অবাক হল মোটা মাথার জংলা মানব ।
হতে চাইলো সে একাধিপতি ;
অবস্থার মাঝে আনলো সে বিশৃঙ্খলা ।
গোষ্টীর ভেতরে–বাইরে শুরু হল সংঘর্ষ ;
বিজয়ীরা একদিন পরিয়ে দিল
পরাজিতের পায়ে দাসত্ব-সৃঙ্খল ।
এমন সময় মানবের এহেন বিপর্যয় দেখে
এলেন ধর্মরাজ- পরে শান্তির উত্তরীয় ।
চাইলেন ভিক্ষা- শুনায়ে ত্যাগের ললিত বাণী ।
অভিভূত সেই বিজয়ুন্মত্ত মানব
দীক্ষা নিল তার- দেব-দূত জ্ঞানে;
দিলে দক্ষিণা কিছু দক্ষিণ হাতে ।
সেই দক্ষিণা ক্রমে জমে হল বিশালাকার ।
দেব পুরোহিত দেখিল বিশ্বামিত্র-স্বপ্ন ;
নিজেকে জাহির করলো অতি-মানব বলে ।
ক্ষত্রিয়কে রাখতে চাইলো হাতের কাছে ।
পরে সে-ই জুড়ে বসালো সিংহাসন !
হাতে রাখলো লাগাম ও চাবুক-
শুরু হল শক্তির পূজো ।


তবুও হ’ল না শেষ রক্ষা ;
দিকে দিকে উৎপীড়িতেরা হল সম্মিলিত-
ঘোষিল বিদ্রোহ ।
সৃঙ্খলে পড়ে টান, কেঁপে ওঠে রাজ-প্রাসাদ
বয়ে গেলো রক্ত-বন্যা- রাজার মুকুট গড়াল পথে !
গণতন্ত্রের প্রশস্তি গাইলো লোকে সাথে-সাথে ।


এমনি তোমার পাদপীঠে
প্রতি নিয়ত চলে জয়–পরাজয় খেলা ;
কখনও নাচে গণতন্ত্রের বিজয়–পতাকা স্বগর্বে
কখনও বা ঝুরে মানবের নির্মম বিষম পরিণতিতে ।
তবু তোমার অদৃশ্য হাত
গোপনে খেলে যায় কী অপূর্ব খেলা !
ঘটে সমাজ বিবর্তন ।


হে চির নবীনা ! হে বসুন্ধরা !
আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবনের মাঝে
রচে চলেছো তোমার বিরাট দিন বদলের পালা !
তাই অলক্ষ্যে অনুভব করি আমার সর্ব দেহ মনে
সেই আদি-অনাদি কালের শত-সহস্র পরিবর্তন ।
জানি তোমার এ প্রাণ নিয়ে খেলা
শেষ হবে, কোন এক অজ্ঞাত তুচ্ছ ক্ষণে,
আমি পড়ে রব তোমার কোলে !
জানি তখনও শেষ হবে না তোমার কাজ  ।
তাই ভাবি মনে, তোমার এ খেলা
সামান্য অনুরণিত যদি হয়ে থাকে-
আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে,
অনুভব করি তা পরম দূঃখে ,
তবে রেখে যাই আমার এ কুর্ণিশ-
বহু যুগের জীবন্ত ইতিহাস ধরে রাখা ,
আমার এ ক্ষুধিত হাতে–


আজিকার এ নব–প্রভাতে
নূতন যুগের আগমনী সমারোহে !

রচনাকালঃ ২৭-০৪-২০০১ ও
১১-০৪-২০০২, KTSSAD.




** কাব্য: আবর্তন ও বিবর্তন ;
গ্রন্থ: তুমি  এলে  বলে ;
কপিরাইটস্ © ২০২০ পিসি ।
.