(কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি
  শ্রদ্ধার্ঘ্য । তিন পর্বে সমাপ্য ।)


আকাশে সূর্য দিকচিহ্ন আঁকিয়াছে-
উদ্ভাসিত তাই আজিকে দশ দিক!
হে পৃথিবী! লহো মোর কুর্ণিশ!
বহু-যুগ চর্চিত অঙ্গুলি আজি মুষ্টিবদ্ধ
উত্থিত, চির উন্নত, সদা কর্মচঞ্চল ।


মহা অগ্নি-কুণ্ডে জন্মেছো তুমি,
ওগো,  মহা প্রলয়ের নটরাজ !
দোদুল রেখেছো জীব ও জড়ের মাঝে
সুকঠিন দ্বন্দ্ব–সঙ্ঘাত ।
বিচিত্র তুমি আর তোমার লীলা-ক্ষেত্র-
সদা ঘূর্ণনে আপনি সদা-ব্যস্ত ।
তোমার গাছে-গুল্মে জলে-স্থলে
প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেই সংগ্রাম ;
যেখানে প্রতিকূলতার মাঝেই ওড়ে
প্রগতির নব বিজয় তূর্য ।
বিবর্তনের রথের চাকায় হেথায়,
পিষ্ট হয় চরাচর অবিরাম ।
তুমি সেই পিষ্ট ভগ্নাবশেষ রেখে দিচ্ছ
অতি যত্নে সংগোপনে-
মাটিতে-পাথরে-ফসিলে;
লিখে চলেছো ইতিহাস প্রত্ন-খাতায় ।


তোমার সৃষ্টির আদি পর্ব ছিল বীভৎস;
ছিল না একটুও প্রাণের স্পন্দন-
বিকাশের ধারা ছিল তখন অতি মন্থর ;
কত যুগ-যুগ গেছে নিষ্ফল ;
তারপর এক দিন, জড়ের বুকে হল প্রাণ-সঞ্চার।
বিন্দু বিন্দু এক-কোষী প্রাণ কালের যাদু-ছোঁয়ায়
বিকশিত হল দিকে দিকে, জলে-স্থলে
পাথর চূড়ায় ।
ক্রমে সেই ক্ষুদ্র প্রাণ এক দিন
আদি মানব হয়ে দাঁড়ালো তোমার বুকে-
কত  জীব ও  কত জীবন বাহি ।
ঘোষিল প্রাণের বিজয় বার্তা,
প্রবল হুংকারে,
স্তম্ভিত করে তোমার সৃষ্টি !
                               (চলবে ।)