(কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘একদিন রাতে
আমি স্বপ্ন দেখিনু' পড়ে লেখা।)


সে এক রাতের স্বপ্ন, মনে আছে আজও-
একাধিক কণ্ঠ বলে ওঠে যেন- জাগো! জাগো! জাগো!
চেয়ে দেখি দাপাদাপি দরজায়- চৌকিতে ;
হৈ হৈ ! রৈ রৈ ! কলকাতা-শুদ্ধ লোক নেমে গেছে পথে ।
ঝন্-ঝন্ ! সন্-সন্ ! কেঁপে ওঠে টেলিফোন-তার
দাসত্ব ঘুচাতে যেন পড়ে যত (ইলেক্ট্রিক) পোল মার্ মার্ ।
রাস্তা অবরুদ্ধ, বেতার-বাহী সাঁজোয়া গাড়ি পড়ে ঢুস-ঢাস ;
খবর রাখে না কেউ- কত পড়ে আছে লাশ ।
ব্যলকোনী খসে পড়ে যেন দশানন-শির,
কালো হাড় কেঁপে ওঠে, ইমারতে টান পড়ে-হিড়হিড় !
হুগলির জলে ঢেউ ওঠে, পারে ওঠে গুগলীর শ্যাল ;
হাওড়ার ব্রিজ তার হাতি-দেহটা
গুটায়ে নিয়েছে বুঝি লেজ আর শুঁড়টা ।
ইঁটের গাঁতনি খুলে, ভেঙে পড়ে জেলের দেওয়াল,
বন্দী যত ছিল সবে- মেলায় এসে পথের স্রোতে ;
ফ্যাল-ফ্যাল করে, চেয়ে রয় ভিক্টোরিয়া-মেমোরিয়াল ।
‘সুকান্ত সমগ্র’ ছোটে, ছোটে ‘দাস- ক্যাপিটাল’;
পলেস্তারা ঝরে পাশে- দেওয়ালে শুনি কার ছট্-ফট্
এই বুঝি বেরিয়ে পড়ে, ঘর ছেড়ে লেনিনের পোর্ট্রেট ।
দরজা ভেঙে যায়, আকাশের বুকে ডানা মেলে
            খাঁচার পাখি, যেন খৈ এক মুঠো ।
বাতাসে ধনুকের টঙ্কার, বিপ্লব বেঁধেছে বুঝি-
                ‘আজ কার জিত কি-বা কার হার!’
লক্ষ লক্ষ লোক চেঁচিয়ে ওঠে, কণ্ঠ যেন ফাটা
কলকাতা বুঝে না কিছু– সে যে আজ গণনেতা ;
         থর্-থর্ করে কাঁপে যেন প্লেনেটোরিয়ামটা ।
দিল্লী যায় যাক উত্তর কোরিয়ায় কিবা কিউবায়
হেথায় শুনেছি সবাই দুটো খেতে পায়-
কিম্বা সে যদি আজ ছোটে চীনে ? বলি এক মনে-
লোক আমার জমি-বাড়ি নেবে না তো ছিনে  ?
হঠাৎ স্ত্রী জেগে, পাখাটা চালিয়ে বলে যেই-
ওগো ! একে বারে ভিজে গেলে যে ঘেমে-
         যেন বর্ষায় রোদ্দুরে, খেত থেকে ওঠে এলে !
ঘুম ভেঙে যায় যেই- দেখি কলকাতা কলকাতাতেই ।
শেষে, হেসে বলি-  হেঁ গো, তাই ।


রচনাকালঃ ৩০-০৬-১৯৯৩
DBPCAC.



.