সাবেক কালের পোড়োবাড়ি, দেওয়াল গেছে ফাটি,
তারি কোনায় ঘর বেঁধেছে ব্যধেরা বাপ-বেটি।
বাপ যায় রোজ সকাল বেলা শিকার করে আনে,
এই দিয়ে দিন কাটছে তাদের অভাব অনটনে।
ভাঙাচোরা বাড়ির গায়ে ফাটল বেয়ে সেথা,
বাবলা বটের তরুরাশি মেলেছে ডাল পাতা।
কিরণমালা ব্যধের মেয়ে বয়স বছর দশ,
বাবলা তরুর শাখায় বসা শালিক মানায় পোষ।
ঘর বেঁধেছে শালিক পাখি বাবলা তরুর শাখে,
কিরণমালা রোজ দু'মুঠো ভাত নিয়ে তাই ডাকে।
কিরণমালা বন্ধু পাখির, ভয় পায়না তারা,
উড়ে এসে মাথায় বসে তার হাতে দেয় ধরা।
কিরণমালা শালিক পাখির পায়ে বাঁধে সুতো,
মাথায় দেয় রঙ লাগিয়ে গল্প করে কতো।
দুপুর বেলা গাছের ছায়ায় কিরণ থাকে শুয়ে,
হাত বুলিয়ে আদর করে শালিক পাখির গায়ে।
হঠাৎ সেদিন দুপুর বেলা ঢাকলো আকাশ মেঘে,
ঝড় উঠলো আঁধার করে বৃষ্টি এলো বেগে।
কিরণমালা ভয় পায় খুব একলা বসে ঘরে,
বজ্রপাতের শব্দ ভীষণ গাছ ভাঙছে ঝড়ে।
সবকিছু তার উলটপালট থামলো যবে ঝড়,
কাঁপছে শালিক বৃষ্টি ভিজে ভেঙেছে তার ঘর।
বাসাখানি কাদায় পড়ে বাচ্চা দুটো তাতে,
কিরণমালা উঠিয়ে নিল তাদের নিজের হাতে,
রাখলো চেপে বুকের মাঝে তাপলো আগুন গায়,
শুকনো কাপড় বিছিয়ে দিল ছাতের কিনারায়।
সেদিন রাতে ঘুম এলোনা বারেক গিয়ে সেথায়,
রইলো বসে তাদের পাশে দিনের অপেক্ষায়।
নিয়মমতো পূব গগনে সূর্য দিলো উঁকি,
ধীরে ধীরে জাগলো পাখি উঠলো তারা ডাকি।
অশ্রুমলিন চোখদুটি তার প্রভাত রবির মতো,
উঠলো হেসে, লুটিয়ে প্রনাম করলো শতশত।
শুরু হলো আগের মতো তাদের হাসিখেলা,
উড়লো শালিক দিগন্তপার ফিরলো শেষের বেলা,
এমনি করে রোজ উড়ে যায় আবার আসে ফিরে,
কিন্তু সেদিন আর এলোনা রইলো বাসা পড়ে,
খুঁজে বেড়ায় কিরণমালা গাছের শাখে শাখে,
তাকিয়ে বেড়ায় গাছে গাছে আওয়াজ করে ডাকে।
ক্লান্ত হয়ে ফিরলো বাড়ি মলিন হলো মুখ,
কিন্তু ফিরে দেখলো যাহা ফাটলো যে তার বুক।
বাপ এনেছে শিকার করে কিরণমালার পাখি,
উঠোনমাঝে লুটিয়ে তারা নিরব তাদের আঁখি।


======//\=====//\======