চলো একবার ঘুরে আসি
শ্বেত মহাদেশ - আন্টার্কটিকা থেকে,
যেখানে রয়েছে শুভ্র পাহাড়
অসীম হিমবাহ
সক্রীয় আগ্নেয়গিরি
আর
ত্রাসোদ্দীপক প্রাকৃতিক দৃশ্য।
বিশাল কায়া ঐ মহাদেশের,
আয়তন চৌদ্দ মিলিয়ন কিমি'র মতো,
পৃথিবীর মোট ভূমির নয় শতাংশ।
শুষ্কতম ঐ মহাদেশের আটানব্বই ভাগই
আবৃত শুভ্র বরফে
কোথাও কোথাও চার হাজার মিটার পুরু,
প্রতি বছরই তাতে যোগ হচ্ছে  
আরও পনের সেন্টিমিটার।
পৃথিবীর আটত্রিশ ভাগ মিষ্টি জল
জমা আছে ঐ বরফের বুকে,
তা গলতে শুরু করলে
সামুদ্রিক জলস্তর লাফ দিয়ে উঠবে
পঞ্চাশ থেকে ষাট মিটার উপরে,
তলিয়ে যাবে পৃথিবীর সব বড় বড় শহর ।


তুমি কি জানো ?
আন্টার্কটিকার আর এক নাম
বরফের মরুভূমি!
সারা বছর সেখানে চলে তুষার ঝড়
গড়ে দু'শো মাইল বেগে,
পূর্ব-পশ্চিমে বিশাল ফারাক
পূর্বদিক উচ্চতম - অধিক ঠান্ডা
পশ্চিমে হয় তুষারপাত
পূর্বে হয় না
পূর্বে ঝরে পড়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বরফের ক্রিস্টাল
ঝকঝকে নীল আকাশ থেকে
ধূলিকনার মতো,
যার নাম ডায়মন্ড ডাস্ট।
সমুদ্রতীরে হয় ঝমঝম বৃষ্টি
ভিতরে হয় না,
আগষ্ট মাস সাদা মহাদেশের শীতকাল
তাপমাত্রা নেমে আসে
মাইনাস সত্তর ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটে
গ্রীষ্ম আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারী'তে
তাপমান অধিকতম দুই ডিগ্রি
সূর্য তখন কিরন দেয় চব্বিশ ঘন্টা
ঘোরে দিগন্ত রেখাকে অনুসরন করে
একটু উপর দিয়ে, গোল গোল ...
আপন গতিতে, অস্ত যায় না।
ঘুরতেই থাকে, ঘুরতেই থাকে,
নেই সকাল, নেই সন্ধ্যা, নেই রাত্রি,
শুধু আলো আর আলো
মনে হয়
আন্টার্কটিকা যেন একটা আলোর দেশ।
সমস্যা শুধু তুষার ঝড় নিয়ে
এই আছে
এই নেই
বলে দেবার মানুষ নেই।


তোমার জেনে রাখা ভালো
আন্টার্কটিকা এখন পৃথিবীর
সবচেয়ে বড় ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরী
একশো পঁয়ষট্টি'র বেশি অভিযান হয়েছে
ঐ সাদা মহাদেশকে জানতে,
বাইশটা দেশ সেখানে তৈরী করেছে
তেতাল্লিশটি পাকা পোক্ত রিসার্চ ষ্টেশন
সামার ষ্টেশন রয়েছে কুড়ি'টিরও বেশি
আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানী সহ
প্রায় ত্রিশটি দেশের পতাকা উড়ছে
ঐ বাসযোগ্যহীন ভূমিতে পতপত করে,
মাল্টি ষ্টেশন রয়েছে ন'টি দেশের
ভারত ঐ নবরত্নের একটি
‘স্কিমাচার ওয়েসিস’-এ রয়েছে 'ষ্টেশন মৈত্রেয়ী',
রাশিয়ার 'জারভসকায়া'র ঠিক পাশে,
'ষ্টেশন ভারতী' রয়েছে ‘লারসম্যান হিল’-এ,
‘কুইনস্ মড ল্যান্ড’-এ রয়েছে 'ষ্টেশন গঙ্গোত্রী'
'গঙ্গোত্রী' ভারতের প্রথম রিসার্চ সেন্টার
তৈরী হয়েছিল ১৯৮৩ সালে
বরফে চাপা পড়েছিল ছ'বছর কাজ করার পর
অহল্যার মতো সে উদ্ধার হয়েছে
এখন তা ভারতের ট্রানজিট ষ্টেশন।
মৈত্রেয়ী ব্যস্ত নতুন নতুন খোঁজে
বায়ুমন্ডল, পৃথ্বীতল, রসায়ন, জীববিজ্ঞান
আর চিকিৎসাবিজ্ঞান তার বিষয়।
ভারতী এক অত্যাধুনিক রিসার্চ ষ্টেশন
মৈত্রেয়ী'র সাথে যোগ দিয়েছে
এই ক'দিন আগে।


তমি কি জানো আমরা কিভাবে যাবো ?
উড়োজাহাজে সোজা বুয়েন্স অ্যরেস …
আর্জেন্টিনার রাজধানি,
সেখান থেকে মার্শাল পর্বতমালার ধারে অবস্থিত
পৃথিবীর দক্ষিণতম উপকুল শহর উসুয়ানিয়া'য়।
তারপর বরফ-কাটা জল-জাহাজে চড়ে
আন্টার্কটিকা পেনিনসুলা,
সময় লাগবে ষাট ঘন্টা
যাত্রাপথে পাবে রকমারি বিদেশি খাবার,
কম্পিউটার প্রেজেন্টেশন...
তাতে দেখবে
দক্ষিণমেরু অভিযানের রোমাঞ্চকর ইতিহাস,
আন্টার্কটিকার প্রাকৃতিক বিবরন,
জাহাজের ব্রিজ থেকে রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকবে
সাদা লিপ্তপদ অ্যালবট্রিস,
লম্বা ডানা ওয়ালা সাদা-কালো পেট্রাল,
ঝাঁক ঝাঁক সি-গালস্
দৈত্যকায় তিমি
ডলফিনের স্বচ্ছন্দ বিচরন,
উষ্ণ ও শীতল জলের আলিঙ্গন,
বারজি বিটস্ - ছোট আইসবার্গ,
প্যানকেক - গোল গোল বরফ খন্ড
আর বিশাল বিশাল ভাসমান বরফের টিলা।
নীলাভ টিলাগুলি যখন তোমায় অভ্যর্থনা জানাবে
তুমি তখন আন্টার্কটিক পেনিনসুলার দোর গোড়ায়
দেখবে, তোমার সারা শরীর রোমাঞ্চিত হবে
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে
সাদা মহাদেশে পা ফেলার জন্য।