আমাদের বাড়ীতে চাল দিত
মেহেরুন্নিসা …
ঢেঁকিছাঁটা সেদ্ধ চাল
ঘরেই চাল কাঁড়ত সে,
মাঝ বয়সী মেয়ে,  বিবাহিতা
খুব পান খেত,
ভূন্নি দিয়ে শাড়ী পরতো
সাজত আর পাঁচটা মেয়ের মতই
চটি জুতো পরতো
সবাই ডাকত
‘পানখাকি রে’ … ।


পানখাকী একবার ব্যারামে পড়লো,
তখন ওর নড়বড়ে বুড়ি মা
জিন্নতমহল
চাল দিয়ে যেত
বিটির বাড়ীর কাছেই থাকত বুড়ী
একাই …
সপ্তাহে একদিন পনের সের চাল
কাঁখালে বয়ে আনতো সে
বাড়ীর সদর দরজায় দাঁড়িয়েই হাঁকত
‘চাল এনেছি কাকী’ ।


বুড়ীর একটু জমি ছিল
লটকানা লাগাত
চালের সাথে পোঁটলায় নিয়ে আসত
যত বাছোট তরকারি
নিহরজালি চাল-কুমড়ো
পুঁকড়া শশা, ক্যাঁট আম
কানা বেগুন,বুড়ো রামপটল
দরকচা স্যাকারকুম
ফাটা লালমি
আরও অনেক কিছু।
যদিও বা বাছোট ... জলের দাম ।


পানখাকীর মা
টাটির ঘরের বিটি,
টাটির ঘরের বউ
বুড়ো বয়সেও বাঁধপুলে ডহরের ধারে
টাটির ঘরেই থাকত  
কাঠের আখায়
শুকনো পাতার জ্বালে রাঁধত ।
গতর খাটাতো সকাল থেকে সন্ধ্যে
ধান ভাপাতো,শুকাতো
ঢেঁকিতে চাল কুটত
আর তাতেই খেত, পরতো
কারো কাছে কখনও হাত পাতেনি সে
সরকারী ডোল, বিধবা ভাতা  
কখনও মেলেনি  ।


এক বৈশাখের ভন্নি দুপুরে
চাল দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে  
জিন্নতের সান-স্ট্রোক হলো
তিরফুট্টি রোদে
বুড়ী মাঠের মধ্যে ঘাঁটার উপর
উল্টে পড়লো,  
নিরানের মজুরেরা
ঘটি ঘটি জল ঢাললো
কিন্তু হায়
বুড়ী যেন পড়লো আর মরলো ।


আশ্চর্য্য হই নি
কারণ এটাই স্বাভাবিক ... বিধিলিপি
পানখাকীর মায়েরা তো
অমনি করেই মরে!