তোমরা কি কেউ কখনও লালগোলা দেখেছ ?
আহা-মরি কিছু নয় !
একটা মফঃস্বল শহর মাত্র,
মুর্শিদাবাদ জেলার বিশাল লালগোলা ব্লকের মাঝে ,
গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা শহর ।


শিয়ালদহ-লালগোলা সেকসনের
শেষ ষ্টেশন লালগোলা ...
একটা সীমান্ত শহর ।
ওপারে রাজশাহী, এপারে মুর্শিদাবাদ
মাঝে বয়ে চলেছে কল্লোলিনী পদ্মা,
চোরা কারবার এখানকার অর্থনীতির মূল স্রোত,
ব্যবসা, প্রশাসন, রাজনীতি, অসামাজিক কার্য্যকলাপ
সব কিছুর মধ্য দিয়েই ফল্গুধারার মত
এই কারবার অপ্রতিরোধ্য গতিতে
বয়ে চলেছে ভারত ভাগের জন্ম লগ্ন থেকেই ।
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বেশিরভাগ মানুষ
জড়িয়ে রয়েছে চোরা কারবারের সাথে ।


হয়ত এই শহরের চাকচিক্য নেই
কিন্তু ঐতিহ্য আছে,
রাজা নেই ... কিন্তু রাজবাড়ী আছে,
বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলার আঁতুরঘর আছে
কাজী নজরুলের পদধূলি ধন্য
তমালতলার জীর্ন পুকুরঘাট আছে,
ভারতের একমাত্র মুক্ত কারাগার আছে,
একশো বছর পূরানো হাই স্কুল আছে,
দুষ্প্রাপ্য বই-এ ভরা লাইব্রেরী আছে,
বিখ্যাত রথের মেলা আছে
আনারসের গন্ধ-ওয়ালা আম আছে,  
বর্ধিষ্ণু গ্রাম আছে, চব্বিশ প্রহর কীর্তন আছে
সীমন্তিনীর সীঁথির মত রাঙা-মাটির রাস্তা আছে
ঘোড়ার গাড়ী আছে, জারি গান আছে,
পঞ্চরস আছে, আলকাপ আছে,
মনসার ভাসান আছে, তিলের খাজা আছে,
আর আছে সহজ সরল মানুষ ও
তাদের আতিথেয়তা ।


একবার আসবে নাকি লালগোলা ?
পদ্মার স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ করতে,
রাজবাড়ীর আম-বাগানে চড়ুইভাতির মজা লুটতে,
কিংবা চোরাপথে আসা গোয়ালন্দের
ইলিশের গন্ধে মাতাল হতে ?
যদি আসো ... গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবো
সাইকেলের রডে বসিয়ে
পানিশালা, ছাইতনি, ব্রহ্মোত্তর, খাঁদুয়া ...
আরও কত রকমারী নামের গ্রাম,
দেখবে ... আর অবাক হয়ে যাবে ।


বাগড়ীর এই ছোট্ট শহরেই আমার জন্ম,
বেড়ে ওঠা, অধ্যয়ন ... সব ।
জীবনের মূল্যবান প্রথম আঠারোটা বছর
এখানেই কেটে গেছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ।
ধূলো-মাটির রাস্তায় আর
জল-জঙ্গলে খেলতে খেলতে
কখন বড় হয়ে গেছি ... বুঝতেই পারিনি ।
রাজধানীর চোখ ধাঁধানো পরিকাঠামোয়
আমার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়েছে ঠিকই
কিন্তু আমার ব্যক্তি-জীবনের
শিকড় রয়েছে ... সীমান্ত শহর লালগোলায় ।
তাই তো মাঝে মাঝেই মনটা ডুকরে কেঁদে উঠে
মনে হয় ফিরে যায় ধূলো-মাটির শহরে
আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠি .......