আবার মিছিলে যাবো আমি সাম্যের খোঁজে,
পল্লব বিহীন বৃক্ষ হয়ে আর কতো কাল বাঁচবো,
আমি আবার মুক্তির গান নিয়ে মিছিলে যাবো।


ঘর থেকে বেরিয়ে আমি যখন বড় বড় গাড়িতে
জনপ্রতিনিধির ছদ্মবেশে বড় বড় তস্করদের চলে যেতে দেখি,
তখন আমি সাম্যের খোঁজে পথ চলি,
সাম্য আমাকে ছুঁয়ে যায় না, শুধু কষ্ট দেয় অবহেলায়;
ওরা হয়ে উঠে আরও বেপরোয়া হিংস্র অমানুষ,
জমা ঘরের অর্থ তুলে উল্লাসে করে হরির লুট,
আমলাতন্ত্রের বেড়াজালে নিষ্পেষিত মানুষ খোঁজে মুক্তির পথ,
তখন আমি সাম্যকে বলি, কবে দিবে মুক্তির স্বাদ?
যেদিন নিপীড়িত মানুষের রক্ত মিছিলে রক্তাক্ত হবে রাজপথ!


আবার মিছিলে যাবো আমি রক্তাক্ত হতে,
মস্তিষ্ক বিহীন বধির হয়ে আর কতো কাল বাঁচবো,
আমি আবার বিদ্রোহের স্লোগান নিয়ে মিছিলে যাবো।


দিবানিশি আমি যখন নিপীড়িত মানুষের কান্নার শব্দ শুনি
অনাহারে অর্ধাহারে ফুটপাতে বন্দরে শুয়ে থাকতে দেখি,
আমি তখন সাম্যের খোঁজে ছুটি, সাম্য আমাকে ধরা দেয় না;
এই ঊর্ধ্ব মূল্যের বাজারে আমি যখন হিমশিম খাই,
যখন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না হিসাবের অংক কষে,
আমি তখন ঐ হায়েনাদের রক্ত চক্ষু দেখি,
তখনও সাম্য আমাকে ছুঁয়ে যায় না, যেন এটাই আমার নিয়তি;
ওরা আরও হিংস্র হয়ে ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে দেয় হিংসার আগুন,
হাটে-মাঠে পথে-প্রান্তরে শুরু হয় হানাহানি কাটাকাটি,
নিত্য গর্জে উঠে সন্তান হারা মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ,
তখন আমি সাম্যকে বলি, কবে দিবে একটু শান্তির সুবাতাস?
যেদিন নির্যাতিত মানুষের সারি সারি লাশ লুটিয়ে পড়বে রাজপথে!


আবার মিছিলে যাবো আমি শান্তির খোঁজে,
স্বাধীনতা বিহীন পরাধীন হয়ে আর কতো কাল বাঁচবো,
আমি আবার শান্তির পতাকা নিয়ে মিছিলে যাবো।


প্রতিদিন খবরের পাতায় পাতায় আমি যখন বড় বড় অফিস আদালতে
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে নির্লজ্জ বড় বড় ঘুষখোরদের ঘুষ খেতে দেখি,
তখন আমি সাম্যের খোঁজে দিশেহারা এক ক্লান্ত পথিক হয়ে ঘুরি,
তবুও সাম্য আমাকে ছুঁয়ে যায় না, আমি প্রতারিত হই বারবার;
যখন আমি আমলাতান্ত্রিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুলি,
ওরা শোষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে প্রজাতন্ত্রকে করে রুদ্ধশ্বাস,
আমার বসতবাড়ি আমার অস্তিত্বকে পুড়িয়ে করে ধ্বংস যজ্ঞের শ্মশান;
ঐ নরপশুর দল রেহাই দেয় না আমার নিষ্পাপ দুধের শিশুটিকেও,
তখন আমি সাম্যকে বলি, কবে দিবে বেঁচে থাকার অধিকার?
যেদিন বক্ষের জ্বালায় রিক্ত মানুষের নগ্ন মিছিলে কলঙ্কিত হবে রাজপথ!


আবার মিছিলে যাবো আমি অধিকার প্রতিষ্ঠায়,
অস্তিত্ব বিহীন অপদার্থ হয়ে আর কতো কাল বাঁচবো,
আমি আবার যুদ্ধের দামামা নিয়ে মিছিলে যাবো।


যখন রাষ্ট্রযন্ত্র সর্বত্র অক্টোপাসের মতো শোষণের রোষানলে জড়িয়ে ধরে
তখন আমি শোষণের ধূম্রজাল থেকে বেরিয়ে আসার মুক্তির পথ খুঁজি,
তিনশত বছর ধরে সাম্যের খোঁজে ছুটছি আমি বাংলার পথে প্রান্তরে,
সেদিন ব্রিটিশ'রা পালিয়ে গেলো, পাকিস্তানী'রা জ্বালিয়ে গেলো;
এখন সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভাবে বাঙালি খায় বাঙালির মাংস,
প্রতিদিন প্রজাতন্ত্রের লক্ষ-কোটি প্রাণের হরণ হয় বেঁচে থাকার অধিকার,
আর প্রতিনিয়ত হয় জাতির বিবেকের রক্তক্ষরণ,
তাই অশ্রু সিক্ত নয়নে আজো আমি ছুটে চলি নিষ্ঠুর ঐ সাম্যের খোঁজে।


আবার মিছিলে যাবো আমি সাম্যের খোঁজে,
সাম্যের খোঁজেই আমার এই পথ চলা।