শীতের ছুটিতে ঠোঁট ফাটা সকালে
স্টেশনে অপেক্ষায়।
দুরে কখন উঁকি দেবে ইজ্ঞিনের মুখ,
পেটে কেমন জানি ব্যথা ব্যথা
অজানা কারণে দুরুদুরু বুক!


কাকভোরে ছোটবেলাকার ছুটে চলা সেই
রেল গাড়ির এক কামরা!
গন্তব্য অনেক দুর, মধুপুর!
সারি সারি অচেনা কাকুদের পা টপকে,
থুতনি তে ভর দিয়ে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে।


সারাদিন চেয়ে থাকা ধান ক্ষেত, ধুধু মাঠ, আর পাশে সমান্তরাল ছুটে চলা রেল।
চলন্ত লাইনের মিশে যেতে যেতে আবার দুরে ছিটকে যাওয়া
অচেনা কাকুরা একটু একটু করে চেনা হয়ে  উঠছেন আমার না শেষ হওয়া প্রশ্নে।
সস্নেহে বসাচ্ছেন পাশে। "আচ্ছা বড় হয়ে তুমি কি হবে?"
ক্রমে সখ্যতা বাড়ছে। তাদের ঘড়ি পরা হাত টেনে নিয়ে ঘড়ি দেখা
"কাকু তুমি ম্যাজিক জান?"
"হ্যাঁ যেমন দেখতে পারছি চাকায় লেখা..." "কি!"...
"মধুপুর এখোনো অনেক দুর"


মা মাফলার জড়িয়ে দিচ্ছেন গলায়,
ফ্লাস্কে গরম ওভালটিন্।
হাতে, কুচকাওয়াজে ব্যস্ত সদ্য কেনা তালপাতার সেপাই।
বিক্রি করতে এসেছে চিরুনি-আয়না-লাইটার-নেলকাটার-পঞ্জিকা-সেপটিপিন্।
তেরছা একফালি জ্যামিতিক রোদ এসে পড়েছে।
বাবার আলাপে রাজ্য-রাজনীতির বরুন সেনগুপ্ত।


এইবার ঢুকছে আসানসোল।
কাকুরা তাস ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে
"কত নম্বরে দিল রে" হাঁকছেন।
আমার বুকের ভীতর কষ্ট, বিদায়ের হাত নাড়ছে ওদের।
বাবা খাবার জল ভরতে নেমেছে স্টেশনে।
"ভয়, কি হবে যদি ট্রেন ছেড়ে দেয়!"
"তোর বাবা তো ফুটবলার" মায়ের গর্বিত  আশ্বাস।

তারপর অনেক সময় ঝরে গেছে হাতের উষ্ণ তালু হতে।
ঘুমের জানালায় মাঝরাতে,
এখনো ভেসে আসে সেই রেলের কামরা।
রাস্তা, নগর ছাড়িয়ে, গ্রামের আল ধরে একমনে ছুটে চলা রেলের কামরা।
সবাই ঠি-ক বসে আছে আজও ঠিক যে যে রকম!
কেউ কথা বলছে না শুধু আর!
কেমন নিরব সবাই!
যেন শব্দ নিয়ে চলে গেছে বোবা সময়!
অস্ফুটে ঠোঁট বলে: "কাকু তুমি ম্যাজিক জান?
পার ফিরিয়ে দিতে সেই স-ব ,রেলের কামরার সেই দুপুর!"
জানলা দিয়ে ঝুঁকে দেখতে পাচ্ছ কি চাকায়?
মধুপুর কি এখোনো অনেকদূর!