মনে করো আবার তুমি জন্ম নিলে
রবি ঠাকুর,জন্মালে এই কলিকালে
কিন্তু তোমার সাবেকী সেই মাথার ব্যামো
নাচছে তেমন তাল বেতালে।
দেখছো তোমার বন্ধু স্বজন সবাই কেমন কাগজ ভুলে
একটু খানি সময় পেলেই মোবাইল স্ক্রিনে দশ আঙুলে
ডাইনে, বাঁয়ে,উপর,নীচে,একটু আগায়,একটু পিছে
ওমনি তোমার বায়না মতো তোমার হাতেও সেই যন্তর
তুমিও তাতে পুরতে চেয়ে তোমার যত ছুঃমন্তর,
এগিয়ে এলে।
কোন নামেতে লিখবে এখন?
তোমার গুণের বিবিধ বিষয়,
যদিও পাঁচটি সদস্য পদ এমনকিছুই সমস্যা নয়
পাঁচ নামে সেই পাঁচ বিষয়ের খুললে খেড়োর খাতা
ফেসবুকেই জন্ম নিলো সদ্যজাত লেখা।
গল্প,ছবি,কবিতা,গান ও নাচের লাইক পাতা।
চললোও তা। কেউ আসলো লাইক দিতে,
কেউ এলো লাই পাবার আশায়।
কেউবা মুফত গালিও দিলো
যত্নে লেখা গীতিকবিতায়।
বললো, ওসব ছন্দ বাজে।
অন্তমিলের রেওয়াজ নেই আর পুনরাধুনিক পত্রিকাতে।
লিখতে হলে লিখতে হবে সময়রাজার আক্কেল দাঁতে।
ছবির পাতায় প্রশংসাতে কেউ লিখলো ভুরি ভুরি
সাথে ছবিও সাটিয়ে দিলো, চা দিয়েছে যখন,
তার লাগবে মাটির খুরি।
গল্প পাতা? পড়লোনা তো কেউ।
তারই মাঝে,
একজন তো জানিয়ে গেলো,
ব্যস্ত থাকি নানান কাজে।
দু' লাইনে গল্প যদি লিখতে পারো,
তবেই যদি পড়তে পারি।
অণু এবং পরমাণু তে ছুটছে মর্ডাণ গল্পগাড়ি।
চোখ দুখানা সামলে আছি লাগিয়ে ঠুলি
নিজের গল্প ঢাক পেটাতেই পাঁজর খুলি!
এবার যখন নাচের পাতায় চোখ বুলোলে
চড়কগাছে চক্ষু পেলে
বেশতো সেদিন পঞ্চু তোমার নাটক থেকে
খানিক খাবলে দু'পিঠ সেঁকে
ভিডিও খানি আপলোডালো প্রথম পাতায়
এক সাগরের নোনতা মেখে গায়ে মাথায়
কুড়িয়েছিলে শতহাতের সাবাস ধ্বনি
আর এখানে পাড়ার ননি
শতডজন লাইক পেলো!
আর তোমাকে কে একজন হুক্কা হুয়া
কমেণ্টবক্সে জানিয়ে গেলো,
হাত ঘুরিয়ে মুড়ির মোয়া
মিলবেনা আর এক্কেবারেই
বরং হিপহপ, লকিং, ডিস্কো চলছে দেশে
ওসব রাবিশ আর টানেনা, সবটা একপেশে
করবেটা কি? ভাববে বসে?
থাকবে এমন মিডিয়াতেই পোঁ খানাকে আঁকড়ে ধরে?
পাওয়ার মধ্যে পাবে কেবল
রোজ দু'ডজন হাই, হ্যালোটা ভেতরঘরে।
মানলাম সব দলবাজিতে তুমি এখন গো-হেরুয়া
কাগজ কলম হাতে পেলে পূর্ণ হবে সব অসূয়া?
বেশতো তবে ইচ্ছেপূরণ আবার তোমার হলো
খাম আটকে কবিতা গেলো বেশ ক' কিলো
তাবড় তাবড় পত্রিকাতে। ডাকও পেলে
বিশেষ দিনে কবিতাপাঠের,
পত্রিকাটির প্রকাশকালে।
অতিথি যিনি, মনে হয়না তাকেও চিনি?
আরে ওই তো পাড়ার ভুতো!
একহাতে তার পুস্পস্তবক
আরেক হাতে পত্রিকা তো!
টুকরো লোহার নিলাম ডাকে,যমদূতের চেহারা।
কানাঘুষোয় শুনেছিলে নবম ক্লাসেই
টাটা করে লেখাপড়া তার সারা।
ভুতোর লেখা কবিতা খানি বই এর প্রথম পাতাটিতে,
তোমার লেখা শেষ পাতাটির কোণার বেচারা!
আজকের এই অনুষ্ঠানের সিংহভাগের খাইখরচা ভুতোর অনুদানেই
প্রকাশক কি করবে বলো?
কাজেকাজেই, মানেমানেই
এমনভাবেই চলা ভালো।
ভাবছিলেতো সেরা কবির তকমা পাবে? আগের মতো?
এখন মেধা কিনছে মানুষ, ফানুস করে বুদ্ধি যতো।
সেরা হবার আসল লড়াই বিজ্ঞাপনে কার কতো দম
জন্ম নিলে আবার যখন মাথার ব্যামো
এবার তবে মেধার সাথে শিখতে হবে
চালাকির সব প্যাঁচপয়জার,রকমসকম।
হাওয়াতে কার পালের ওড়া
রঙ বদলে কে খচ্চর? কে ছোটালো টাট্টুঘোড়া?
কি বলছ হে রবি ঠাকুর?
এবার তোমার ঘটি ডুবলে পুকুরটুকুর জল পাবেনা?
কি যাতনা! আচ্ছা তবে ফুলের মালা গলায় নিয়ে
ওমনি খাঁড়াই দাঁড়িয়ে থাকো
কলিকালের রগড় দেখো দূর থেকে আর
সুযোগ মতো পুজো নিও কবিতীর্থ জোড়াসাঁকো।