আজ অনেক বছর পর তোমার মেঘের বাড়ি
তোমায় দেখতে যাচ্ছি।
মিথ্যা হাসি আর হাতে তোমার প্রথম বায়নার
অপূরণ সেই শাপলা পদ্ম।
ইতি তুমি জানো তোমার যাযাবর স্মৃতি
আমার গভীরে আজও গ্রোথিত আছে।
তোমার অতীত আমার বর্তমানে আজও হানা দেয়।
তুমি যেদিন আমার অন্ধকারে আলো হয়ে এসেছিলে
ঝলমলে রুপালী রৌদ্রের অলস দুপুরে।
ধুলো রাঙা পথকেও সেদিন খুব ঘনিষ্ঠ মনে হয়েছিল।
বেখেয়ালে দেখা তোমার নিষ্পাপ চাহনি
তোমার অজান্তে আমাকে পাগল করার প্রচেষ্ঠা ছিল,
তুমি বোঝনি--।
ক্লান্ত নীরবতায় প্রথম শব্দবাণ তুমি মেরেছিলে।
তোমার নাম জয় না?
আমি অতর্কিত ভাঙা নীলিমায় ভাবনাচ্ছন্নে গুম হয়ে,
কাজল বরণ আঁখির দিকে চেয়ে কিছু খুঁজছিলাম।
তুমি উত্তরের আশা করোনি,
মনের লুকানো অজানা অভিমানে
চলে ছিলে অবাক মুখ পিছনে ফেলে।
সেই যাদুকরি মুহূর্তের প্রথম অনুভূতির বাতাস
আমার ভেজা শহরে আজও বয়ে চলে।


অপ্রত্যাশিত দ্বিতীয়ালাপ কলেজের পাশের বেঞ্চে
হৃদয় দুকূলে ঢেউ উঠেছিল না বলা উত্তরের আকুলতায় ।
বলতে পারিনি কিছুই, শুধু সুপ্তবাসনায় চেয়ে ছিলাম।
ইতির প্রিয় নামটি বলে মেঘের বাড়ির ঠিকানা!
হ্যাঁ.. সেদিনই ভাবতে বাধ্য করেছিলে
তোমার সাথে ভোরের নিষ্পাপ শিশিরের।
অন্যের দৃষ্টি তোমার প্রতি,
অস্থিরতার অজানা ঈর্ষা তুমি বুঝেছিলে।
নুয়ে পড়া সূর্য দেখিয়ে বলেছিলে-
`ওটাকে সবাই দেখলে ওটার দোষ কি বলো'?
মানতে পারিনি । তুমি বুঝেছিলে কি জানি না!


যেদিন কদম গাছের নিচে কোনো মিথ্যা বাহানায়
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ নিয়ে আমার অপেক্ষায় ছিলে!
সামনের সরোবরের শাপলা পদ্মের বায়না,
যদিও তোমার প্রথম বায়না আমি পূরণ করতে পারিনি।
ভেজা বাতাস কদমের গন্ধ ভোরের বাতাস স্নিগ্ধ হাসি
সেদিন আমার কানে কানে সবই বোলে দিয়েছিল।
শুভেচ্ছা দিতে নেমে ছিল বেহায়া বৃষ্টি।
অপ্রস্তুত হাতে হাত রাখা,
প্রশান্তির প্রথম ব্যস্ত বাতাস বয়েছিল দুই দেহে।
হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ষ্পর্শের শিহরনে
তোমার মেঘের বাড়ি যাওয়া!
সেই মেঘের বাড়ির ভেজা আঙিনায়
দুইজনে এক স্মৃতির প্রমাণ রোপন করেছিলাম।
বকুল গাছ। আজ কত বড় হয়েছে জানিনা!


আজ আমি তোমার সেই মেঘের বাড়ির দ্বারে।
তোমার প্রথম না পাওয়া বায়নার শাপলা পদ্ম দেখে
আজ তুমি খুশি হবে কি জানিনা!
এগিয়ে এলাম তোমার খুব কাছে।
সেই বকুল গাছের নীচে তুমি আজ শায়িত।
তোমার বুকের মাঝে কয়েকটা ঝরা বকুল ফুলের ঠাঁই।
কয়েক ফোঁটা স্মৃতির নোনা জলে ভেজানো
আমার সেই একটি মাত্র শাপলা পদ্ম দিলাম
তোমার কবর মাঝে।।