নদীটা ছিলো পাহাড়টার পাশে ,
মরা নদী , যেটুকু পানি আছে তারমধ্যে কচুরিপানা আর পদ্মফুলের রাজত্ব ।
তার পাশে চমৎকার দ্বীপ  ।
নদীটার অজান্তে দ্বীপের পরে একটা সমুদ্র ছিলো । পাহাড় টা জানতো ।
নদীটার মনে সারাক্ষণ সমুদ্রের চিন্তা ।
অথচ এতকাল ধরে পাহাড়টা নদীটাকে ভালোবাসে।


পাহাড় টা ছিল মিথ্যাবাদী   ।
যখনি সমুদ্রে গর্জন সৃষ্টি হতো ।
ঠিক তখনি পাহাড়ের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়তো নদীর বুকে ।
সমুদ্রের গর্জন শুনে নদীটা পাহাড়ের কাছে জানতে চাইতো এটা কিসের শব্দ ?
পাহাড়টা নিজের মতো করে নদীটা কে বুঝিয়ে দিতো এটা তার ভেঙ্গে পড়ার শব্দ ।
নদীটা পাহাড়কে জিজ্ঞাসা করে , আচ্ছা এভাবে ভেঙ্গে যাও কেনো ? তোমার কষ্ট হয় না?
প্রতিউত্তরে পাহাড়টা নীরব হয়ে যায় ।


একদিন আকাশে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির ঘনাঘটা ,
সেই সাথে সমুদ্রের উত্তাল রাগামই সব বড় বড় ঢেউ এসে পড়ছে দ্বীপের উপর
ঢেউয়ের সেই পাষণ্ড আঘাতে ভেঙ্গে যায় দ্বীপটা । নদীটা খুঁজে পায় সমুদ্র । মিলে মিশে হয়ে যায় একাকার ।
পাহাড়টা হয়ে যায় নিঃসঙ্গ ।
এভাবে কেটে যায় সহস্র বছর ।


সমুদ্রের নিজস্ব একটা ধর্ম আছে ,
এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে। অনেকের ধারণা ভাংগা গড়ার খেলা তো নদীর।
অথচ এটা কেউ বুঝতেই চায়না বড়দের শেখানো পথেই ছোটরা চলে ।


বছর পেরিয়ে গেছে সহস্র
ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বাতাসের আর্দ্রতা
তাপমাত্রা বেড়েছে় দ্বিগুণ ।
সমুদ্র টা আবারো পাহাড়ের কাছে নদী টাকে রেখে নিজের মতো চলে যায় অচিন দেশে অজানা গন্তব্যে ।


তাপমাত্রা মাত্রাধিক ।
নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে তড়িৎ গতিতে ।
ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে নদীটা ।
পাহাড়ের অভিমান ভাঙলো অভিমানে ।
ডেকে বলল নদীকে , আমি সহস্র বছর ধরে আমার চোখে কিছু জল জমিয়ে রেখেছি ।
কেউ নেই আমার কাকে দেবো ?
উত্তরে নদীটা বললো আমাকে কিছু জল দেবে ?
সাথে একটু ভালোবাসা ? আমি আর কোথায় যাবনা ।
হঠাৎ পাহাড়ের কিছু অংশ ভেঙে পড়লো ।
নদীটা পাহাড়কে ডেকে বলল আমি তো আর সমুদ্রের গর্জন শুনিনা  । কিন্তু তুমি ভেঙে পারছো কেনো ?
পাহাড়টা বলল , আমি এভাবেই ভেঙে পড়বো তোমার বুকে , ভাঙতে ভাঙতে ছুয়ে দেবো তোমার অস্তিত্ব , সবশেষে একদিন মিশে তোমার হৃদয়ে ।


লেখক মাহমুদ সোহেল (মায়া নদীর মন মাঝি)