আমি খুব ছোট বেলায় ঘর ছেড়েছি, খুব ছোট বেলায়,
মাঘের শীত যখন আমাকে হুহু করে কাপিয়ে তুলে?
তখন আমি ঘর ছেড়েছি।

আমার নাসিকা তখন কিশোরীর-
খোঁপা খোলা চুলের ঘ্রাণ নিতে শিখেনি।  
আমার চোখ দুটো তখন অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়ে,
ঘুম তখন কেবলই আমায় ভাটিক পুরের স্বপ্ন দেখায়,
যেখানে ফুল ও পাখি খেলা করে,
সাদা রঙের পাখা মেলে পরীরা আসে ঝাঁকে ঝাঁক।
দুই আঙ্গুলের মাঝ খানে তখনও জ্বলন্ত
সিগারেটের শলাকা জায়গা তৈরি করেনি।


আমি খুব ছোট বেলায় ঘর ছেড়েছি।
আমার মন তখনও শ্যামলা মেয়ের
কালো টিপে মুগ্ধ হতে জানতো না,
মেঘলা দিনে উদাস হয়ে কবিতার জাল বুনতো না।


আমি খুব ছোট বেলায় ঘর ছেড়েছি।
তখন আমার মাঠ ঘাট চড়িয়ে বেড়ানোর বয়স ছিলো,
মাদ্রাসায় যাবার ভয়ে মাথা ব্যাথার বাহানা করে
সকাল বেলায় কুচকে থাকার বয়স ছিলো।
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খালে বিলে
দাপিয়ে বেড়ানোর বয়স ছিলো।
পাড়ার ছেলেদের হাতে মার খেয়ে
চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে
বাড়ি ফেরার বয়স ছিলো।
আমি খুব ছোট বেলায় ঘর ছেড়েছি।


আমি আমার জন্মের কয়েক বছর পর থেকেই
ঘরোয়া জীবন ত্যাগ করেছি,
পৃথিবীর আঁকা বাঁকা পথে পা ফেলে
সেই যে আমি ছুটে চলেছি, এখনও ছুটেই চলছি।
আর কত পথ ছুটে চললে
নিজস্ব একটা গন্তব্য ছোঁয়া যাবে বলতে পারো?


কতো বিকেল আমাকে ফেরায়না ঘরে,
কতো বিকেল আমিও ফিরিনা,
এক কোটি বছর, একশো কোটি বছর।
কেউ ফেরায়না, ফেরাতেও আসেনা,
সিগারেটের আগুনে আজকাল নক্ষত্র পোড়াই।
মানুষ আমাকে পুড়িয়ে নক্ষত্র বানিয়েছিল একদিন।